নতুন রূপে সেজে উঠছে গোটা শিয়ালদহ স্টেশন চত্বর।—নিজস্ব চিত্র।
প্ল্যাটফর্ম চত্বরে হকারের ভিড়। রংচটা দেওয়াল। ইতিউতি খসে পড়ছে পলেস্তরা। শিয়ালদহ স্টেশনের এই চেনা ছবি বদলে যাচ্ছে নিউ নর্মালে। নতুন রূপে সেজে উঠছে গোটা স্টেশন চত্বর। শপিং মল থেকে রেস্তরাঁ। এগজিকিউটিভ লাউঞ্জ থেকে সুইট রুম — পাঁচতারা হোটেলের মতো পরিষেবা মিলবে স্টেশনেই। বিমানবন্দরের ধাঁচে।
করোনার কারণে লোকাল এবং দুরপাল্লার ট্রেন পরিষেবা বন্ধ। বিশেষ কিছু ট্রেন চললেও স্টেশনে তেমন ব্যস্ততা নেই। পরিষেবা বন্ধ হওয়ার আগে পর্যন্ত প্রতি দিন গড়ে ১২ লক্ষ যাত্রীর চাপ সামলাতে হত শিয়ালদহ স্টেশনকে। চাতালে হরেক জিনিসের পসরা সাজিয়ে বসে পড়তেন হকাররা। অপরিচ্ছন্ন। যত্রতত্র দেওয়ালে পানের পিকের দাগ। যাত্রী স্বাচ্ছ্যন্দের জন্য এ সবের সঙ্গে আর সমঝোতা করতে রাজি নয় ভারতীয় রেল। ‘স্বচ্ছ ভারত’ মিশনের জন্য কিছুটা বদল এসেছে। আরও বদল যে দরকার, তা বিভিন্ন সময় রেলকর্তাদের আলোচনায়ও এসেছে। কিন্তু নতুন ভাবে স্টেশন চত্বর ঢেলে সাজাতে হলে বিপুল ভিড় এবং হকার সামলানোর চ্যালেঞ্জ ছিলই। তার উপর দৈনিক গড়ে ৯১৯টি ট্রেনের চাপ।
করোনা আবহে আচমকাই সেই পরিসর তৈরি হযে গিয়েছে। চলে এসেছে ভোল বদলানোর ‘সুযোগ’। এগজিটিউটিভ লাউঞ্জে তৈরি হয়েছিল আগেই। তা আরও আকর্ষণীয় করে তোলা হচ্ছে। নিউ নর্মালে ট্রেন ধরতে এসে যাত্রীরা চাইনিজ থেকে তন্দুরি চেখে দেখতে পারবেন। তার জন্য কড়িও খুব বেশি খরচ করতে হবে না। কর্তৃপক্ষের দাবি, দাম রাখা হয়েছে সাধারণের সাধ্যের মধ্যেই। মাত্র ৫০ টাকায় বিলাসবহুল লাউঞ্জে এক ঘন্টা কাটানো যাবে।
স্টেশনে ঢুকে ডিসপ্লে বোর্ডে যদি দেখা যায়, ট্রেনের দেরি আছে, তাহলে যাত্রীরা এসি ডরমেটরি, টু-বেড, ফোর-বেড অথবা এসি সুইটে সময় কাটাতে পারবেন। ১২ এবং ২৪ ঘন্টার জন্য ঘরগুলির ভাড়া ৫০০ থেকে ৩,০০০ টাকা। ভারী ব্যাগ, লোকলস্কর নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করতে হবে না। স্টেশনেই মুশকিল আসান। স্টেশনের মূল ফটক দিয়ে ঢুকেই দোতলায় পাঁচতারা বন্দোবস্ত।
যাত্রী স্বাচ্ছ্যন্দের জন্য আর সমঝোতা করতে রাজি নয় ভারতীয় রেল।—নিজস্ব চিত্র।
১ নম্বর গেটের দিকে সিঁড়ির দু’পাশে দোকানের ভিড়ে হাঁটাচলাই দায় ছিল। পাশে ছিল একটি টিকিট কাউন্টারও। সেটিও আর থাকছে না। ওই জায়গাটি ঘিরে একটি সংস্থাকে ভাড়া দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। সব টিকিট কাউন্টারকে একই জায়গায় আনারও চেষ্টা চলছে।
দক্ষিণ শাখার প্ল্যাটফর্মের কাছে একটি শপিংমল তৈরি হচ্ছে। সেখানে নামী সংস্থার রেস্তোরাঁও আছে। বিভিন্ন ছোট ছোট দোকান ভাড়া দেওয়া হয়েছে। অনেকটা বিমানবন্দরের ধাঁচে। স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে মেট্রোর ঢোকা-বেরনোর পথও তৈরি হচ্ছে। সে কথা মাথায় রেখেই গোটা বিষয়টি সাজিয়ে তোলা হচ্ছে। স্টেশনের দেওয়ালে শিল্পীদের আঁকা ছবি অন্য মাত্রা যোগ করেছে।
আরও পড়ুন: মে মাসেই করোনা আক্রান্ত ৬৪ লক্ষ, সেরো সমীক্ষায় উঠে এল ভয়ঙ্কর তথ্য
পাল্টে গিয়েছে প্ল্যাটফর্ম নম্বরও। শিয়ালদহের ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার শৈলেন্দ্র প্রতাপ সিংহ জানাচ্ছেন, নতুন ভাবে পরিষেবা শুরুর আগে এই আমূল পরিবর্তন যাত্রীদের সুবিধার জন্যই। তাঁর কথায়, “চেষ্টা করছি নতুন অনেক কিছু তৈরি করার। যাত্রীদের স্বাচ্ছ্যন্দ এবং পরিষেবাই রেলের কাছে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। পাল্টে যাচ্ছে প্ল্যাটফর্ম নম্বরও। যাতে সহজে ট্রেন ধরতে পারেন যাত্রীরা।”
আরও পড়ুন: এ বার পুজোয় সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারে বদ্রীনাথের মন্দির
উত্তর শাখায় আগে ১এ থেকে ৯ডি প্ল্যাটফর্ম ছিল। এ বার তা হচ্ছে ১ থেকে ১৪। একই ভাবে দক্ষিণ শাখায় প্ল্যাটফর্মের নম্বর ছিল ১০এ থেকে ১৪এ। তা পাল্টে হয়েছে ১৫ থেকে ২১। সুসজ্জিত ফুলের টব রাখা থাকছে প্ল্যাটফর্মে। খুব তাড়াতাড়ি চালু হবে ‘জিরো আওয়ার টাইম টেবিল’। বদলে যাবে মেল এবং এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচি। বদলে যাবে শিয়ালদহের স্টেশনের পুরনো চেহারাও।