Mangrove Forest

Cyclone yaas: ‘এটা বালিয়াড়ি আর ম্যানগ্রোভ নষ্টের খেসারত’

। শুধু কৃত্রিম বাঁধ দিয়ে যে বিপদ ঠেকানো যাবে না, সেটা প্রমাণিত হয়ে চলেছে বারে বারেই।

Advertisement

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০২১ ০৬:২৮
Share:

ফাইল চিত্র।

রীতিমতো হুঙ্কার ছেড়ে পরিবেশ দফতরের এক বিজ্ঞানীকে ভরা বৈঠকে হুমকি দিয়েছিলেন বামেদের এক মন্ত্রী। সেই বিজ্ঞানীর ‘অপরাধ’, মন্দারমণিতে বালিয়াড়ি ভেঙে একের পর এক হোটেল ও রিসর্ট তৈরির ব্যাপারে আপত্তি তুলেছিলেন তিনি। সেটা এক যুগ আগেকার কথা। বুধবার ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের লেজের ঝাপটায় মন্দারমণি-তাজপুর-দিঘার সারি সারি হোটেল ও রিসর্ট তছনছ হয়ে যাওয়ার পরে বিজ্ঞানীদের অনেকেই বলছেন, নিয়ম মানলে প্রকৃতির রোষানলে পড়ে এমন ক্ষতি সইতে হত না।

Advertisement

একই কথা প্রযোজ্য সুন্দরবনের ক্ষেত্রেও। শুধু কৃত্রিম বাঁধ দিয়ে যে বিপদ ঠেকানো যাবে না, সেটা প্রমাণিত হয়ে চলেছে বারে বারেই। কেন বাঁধ সহজে ভঙ্গুর হয়ে উঠছে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন অনেক বিজ্ঞানী। প্রশ্ন উঠছে, নদীতে বাঁধ দেওয়ার নামে ম্যানগ্রোভ নষ্ট করা নিয়েও।

এক দশক আগে ‘কোস্টাল রেগুলেটরি জ়োন অ্যাক্ট’ বা উপকূল এলাকার নিয়ন্ত্রণ বিধি তৈরির সময় ঘূর্ণিঝড়, জোয়ার ও কটালের যৌথ হামলার কথা বলেছিলেন বিজ্ঞানীরা। সেই অনুযায়ী উপকূলে বিপজ্জনক এলাকা চিহ্নিত হয়েছিল। কার্যক্ষেত্রে কিন্তু তার তোয়াক্কা
করা হয়নি।

Advertisement

২০১৯ সালে দেশে উপকূলীয় বিধি ঘোষণার সময় সেই বিপজ্জনক এলাকা সংক্রান্ত সতর্কতাকে নিতান্তই কাগুজে করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। তার ফলে ভবিষ্যতে এমন বিপদের আশঙ্কা আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন অনেক বিজ্ঞানী।

কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রকের উপদেষ্টা-বিজ্ঞানী সোমনাথ ভট্টাচার্য বলছেন, “মন্দারমণি-সহ রাজ্যের উপকূল এলাকায় এমন আশঙ্কার কথা আগেই বলা হয়েছিল। এই বিপর্যয় কিন্তু শেষ নয়। ভবিষ্যতে এমন বিপদ বাড়বে।” তিনি জানান, মন্দারমণি-সহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় প্রাকৃতিক বালিয়াড়ি ছিল। জলোচ্ছ্বাস, ঝড়ের হাত থেকে বাঁচতে সেটাই ছিল রক্ষাকবচ। পর্যটনের নামে সেগুলিকে ধ্বংস করার খেসারত দিতে হচ্ছে এখন। নিয়ম ভেঙেই যে মন্দারমণি-সহ রাজ্যের সৈকতে হোটেল-রিসর্ট তৈরি করা হয়েছে, তা মেনে নিচ্ছেন পরিবেশ দফতরের একাংশও। এই নিয়ে মামলা-মকদ্দমাও হয়েছে। কিন্তু তার পরেও কোনও এক অজানা কারণে সেগুলি রমরমিয়েই চলছিল।

বিপদের কথা বলছেন রাজ্যের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান এবং নদী-বিজ্ঞানী কল্যাণ রুদ্রও। তিনি জানান, বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং সাগরের জলস্তর বৃদ্ধি সারা পৃথিবীর সমস্যা। বঙ্গোপসাগর ও সুন্দরবনে তার প্রভাব সব থেকে বেশি। এক দিকে জলস্তর বাড়ছে, অন্য দিকে নবগঠিত বদ্বীপ বসে যাচ্ছে। তার ফলে সামগ্রিক ভাবে জলস্তরের বৃদ্ধি হচ্ছে অনেক বেশি। সাগরের উষ্ণতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘনঘন তৈরি হচ্ছে ঘূর্ণিঝড়।

প্রশ্ন উঠছে সুন্দরবন এলাকায় ম্যানগ্রোভ ধ্বংস নিয়েও। মাটির বাঁধের পাশে ম্যানগ্রোভ গাছ পুঁতলে তার শিকড় মাটিকে ধুয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। হিঙ্গলগঞ্জের রূপমারি পঞ্চায়েত এলাকার বেড়েরচকের বাসিন্দারা বলছেন, তাঁরা নিজেরা গত বছর আমপানের দৌরাত্ম্যের পরে বাঁধে গাছ লাগিয়েছিলেন। সেচ দফতরের ঠিকাদার বাঁধ তৈরির নামে সেই সব গাছ নষ্ট করে দিয়েছেন। “এই ধরনের বিপদ বার বার আসছে। এর থেকে বাঁচতে বনসৃজনে জোর দিতে হবে। সুন্দরবনে ম্যানগ্রোভই বিপদ ঠেকানোর রক্ষাকবচ,” বলছেন পরিবেশবিজ্ঞানী স্বাতী নন্দী চক্রবর্তী।

এই অবস্থায় অনেকে পরিবেশবিদ বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রকৃতির অঙ্গহানির খেসারত দিতে হচ্ছে। এখনও সচেতন না-হলে আগামী দিনে পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর হতে পারে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement