সংগৃহীত
নবজাতকের জন্য পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে যাবেন, দৃঢ় অঙ্গীকার করেছিলেন কবি। তাঁর অনেক অনেক আগে, পৃথিবীর বাসযোগ্য হয়ে ওঠার সূচনা পর্বের সঙ্গে সিংভূমের গভীর যোগাযোগ থাকতে পারে বলে জানাচ্ছেন এক দল বাঙালি গবেষক।
সৃষ্টির আদিম যুগে পূর্ব ভারতের সিংভূম এলাকায় ভূমি তৈরির কথা বারে বারেই বলেছেন ভূবিজ্ঞানীরা। সেই সূত্র ধরে ধরিত্রীর আদিকল্পে সিংভূম থেকেই প্রচুর অক্সিজেন তৈরির ইঙ্গিত দিচ্ছেন এক দল বাঙালি গবেষক। গবেষণার ভিত্তিতে তাঁদের দাবি, পৃথিবীর বাসযোগ্য হয়ে ওঠার সঙ্গে সিংভূমের সেই ভূমি-অক্সিজেনের গভীর যোগের সম্ভাবনা প্রবল। এই গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার মোনাস ইউনিভার্সিটির গবেষক প্রিয়দর্শী চৌধুরী। দলে আছেন আরও তিন বাঙালি গবেষক সূর্যেন্দু ভট্টাচার্য, শুভদীপ রায় এবং শুভম মুখোপাধ্যায়। গবেষণাটি আমেরিকার ‘প্রসিডিংস অব দ্য ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস’-এ প্রকাশিত হয়েছে।
সিংভূম জেলা এখন ঝাড়খণ্ডে। কিন্তু ভৌগোলিক ভাবে সিংভূম অঞ্চল বললে তা ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ডের বিস্তীর্ণ এলাকাকে বোঝায়। ভূতত্ত্বের পরিভাষায় যা ‘সিংভূম ক্রেটন’ বলে পরিচিত। গবেষকদের দাবি, ওই এলাকা থেকে তাঁরা কিছু পাললিক শিলা খুঁজে পেয়েছেন, যার বয়স প্রায় ৩১০ কোটি বছর। সেই পাথর পরীক্ষা করে তাঁরা বুঝতে পারেন, সেখানে গভীর সমুদ্র ছিল না, বরং সেটা ছিল অগভীর সমুদ্র বা মোহনার মতো কোনও অঞ্চল। এ ব্যাপারে ২০১৪ সালের প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জয়দীপ
মুখোপাধ্যায়েরও একটি গবেষণা রয়েছে। শুধু তা-ই নয়, বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, সিংভূমের সঙ্গে মিল রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং অস্ট্রেলিয়ার একাংশেরও। এই তিনটি জায়গাতেই ভূমিভাগের সূচনা হয়েছিল বলে গবেষকেরা জানান।
প্রিয়দর্শী জানান, ভূমি তৈরি হওয়া এবং তার ক্ষয়ের সূত্র ধরেই অক্সিজেনের উৎপত্তির ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব। তাঁর মতে, ভূমি তৈরি হলে সেখানে ভূমিক্ষয়ও শুরু হবে। পৃথিবীর আদি অবস্থায় ভূমিক্ষয়ের ফলে তৈরি হওয়া গুঁড়ো গুঁড়ো পাথরের সঙ্গে ফসফরাস গিয়ে পড়েছিল সমুদ্রে। এই ফসফরাস হল জীবন সৃষ্টির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সিংভূমের ভূতাত্ত্বিক অতীত ঘেঁটে দেখা গিয়েছে, সেখানে অগভীর সমুদ্র বা মোহনা ছিল। গভীর সমুদ্রে প্রাণ বিকশিত হতে পারে না, তার বিকাশের জন্য দরকার অগভীর সাগর বা মোহনা এলাকার। ওই এলাকাতেই এক বিশেষ ধরনের ব্যাক্টিরিয়া জন্মেছিল এবং কলোনি তৈরি করেছিল বলেও গবেষকদের দাবি। সেই ব্যাক্টিরিয়াই অক্সিজেনের মূল উৎপাদক বলে জানিয়েছেন প্রিয়দর্শী।
আদতে আসানসোলের বাসিন্দা প্রিয়দর্শী যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূতত্ত্বে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাঠ শেষ করে জার্মানিতে পিএইচ ডি করতে গিয়েছিলেন। গবেষণার পাট চুকিয়ে তিনি এখন মোনাস বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্ট-ডক্টরাল ফেলো। সেখানেই আছেন গবেষক দলের সদস্য শুভদীপ রায়। সূর্যেন্দু ও শুভম যাদবপুরের প্রাক্তনী। সূর্যেন্দু পাসাডেনার ক্যালিফর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে এবং শুভম দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণারত।