মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন শনিবার সন্ধ্যায় কলকাতা ছেড়েছিলেন, তখন বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির কারণে শহরের হাওয়ায় বেশ শীত-শীত ভাব ছিল। রবিবার সকালে লন্ডনে যখন (স্থানীয় সময় অনুযায়ী সকাল ৭টা নাগাদ। ভারতীয় সময় অনুযায়ী দুপুর সাড়ে ১২টায়) মমতা পৌঁছোলেন তখন কনকনে ঠান্ডা, সঙ্গে টিপটিপ বৃষ্টি। রবিবার তাঁর কোনও সরকারি কর্মসূচি নেই। তবে সোমবার থেকে বিলেতে ব্যস্ততা শুরু হবে তাঁর। ওই দিন লন্ডনের ভারতীয় হাই কমিশনের একটি কর্মসূচিতে যোগ দেবেন মুখ্যমন্ত্রী।
কেন্দ্রীয় সরকারের ছাড়পত্র নিয়েই মমতা বিলেত সফরে এসেছেন। ফলে লন্ডনে তিনি ভারতের প্রতিনিধি। গত বৃহস্পতিবার নবান্ন থেকে মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেছিলেন, বিলেতের মাটিতে ‘অশুভ শক্তি’ তাঁকে হেয় প্রতিপন্ন করার পরিকল্পনা করেছে। সে বিষয়ে কিছু ইমেল, হোয়াটস্অ্যাপ চ্যাটও যে রাজ্য প্রশাসনের হাতে রয়েছে, তা-ও জানিয়েছিলেন মমতা। সে দিনই মমতা বলেছিলেন, ‘‘আমি কিন্ত সেন্ট্রালের ক্লিয়ারেন্সে (কেন্দ্রের ছাড়পত্রে) যাচ্ছি। মনে রাখবেন, ওখানে কিন্তু আমি ভারতের প্রতিনিধি।’’ সেই পরিচয়েই তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ভারতীয় হাই কমিশন।
মঙ্গলবার বাণিজ্য সম্মেলনে যোগ দেবেন মুখ্যমন্ত্রী। বুধবারও সরকারি স্তরে বাণিজ্য নিয়ে বৈঠক হবে। গত মাসে মমতা বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন করেছিলেন নিউ টাউনে। সেখানে যোগ দিয়েছিলেন দেশ-বিদেশের শিল্পপতিরা। বাংলায় বাণিজ্য টানতে মমতার চলতি সফরে যুক্ত হয়েছেন বাংলার বেশ কয়েক জন শিল্পপতি। কলকাতা থেকে একই উড়ানে মমতার সঙ্গে লন্ডনে এসেছেন শিল্পপতি সত্যম রায়চৌধুরী এবং উমেশ চৌধুরী। দুবাই থেকে যোগ দেন শিল্পপতি উজ্জ্বল সিন্হা এবং মেহুল মোহানকা। বাণিজ্যবৈঠকের আগে আরও কয়েক জন ভারতীয় শিল্পপতির পৌঁছে যাওয়ার কথা। এর পাশাপাশি মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, শিল্পসচিব বন্দনা যাদব, মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা প্রধান পীযূষ পাণ্ডে এবং মুখ্যমন্ত্রীর প্রিন্সিপাল সচিব গৌতম সান্যাল রয়েছেন মমতার সঙ্গে।
তৃতীয় মেয়াদে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে মমতা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, তাঁর মূল নজর হবে শিল্পায়ন এবং বাংলায় বিনিয়োগ টানা। সেই লক্ষ্যে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে স্পেন এবং দুবাই সফরে গিয়ে বাণিজ্য সম্মেলন করেছিলেন মমতা। লন্ডন সফরের অনেকটা জুড়েই থাকছে বাণিজ্য। বৃহস্পতিবার অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে সামাজিক উন্নয়ন বিষয়ে সেখানে বক্তৃতা করবেন মুখ্যমন্ত্রী।
লন্ডনের সেন্ট জেমস কোর্ট হোটেলে উঠেছেন মমতা। বাকিংহাম প্যালেস থেকে ঢিলছোড়া দূরত্বে। এর আগেও লন্ডনে এই হোটেলেই থেকেছেন মমতা। হাঁটতে গিয়েছেন কাছের পার্কেও। শনিবার সকালের উড়ানে মমতার লন্ডন রওনা হওয়ার কথা থাকলেও হিথরোর বিপর্যয় তাতে বাদ সাধে। বিদ্যুৎবিভ্রাটের জেরে শুক্রবার ১৮ ঘণ্টার জন্য বিমান পরিষেবা স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল ব্রিটেনের ব্যস্ততম বিমানবন্দরে। সপ্তাহের শেষে বিমান ওঠানামায় চাপ বাড়ে হিথরোয়। ফলে কম-বেশি দেড় হাজার বিমান বাতিল করে দিতে হয়। হিথরো বিপর্যয়ের জেরে মমতার সফর নিয়ে উৎকণ্ঠাও তৈরি হয়েছিল প্রশাসনিক মহলে। যদিও মমতা গোড়া থেকেই বলেছিলেন, তিনি সবাইকে সঙ্গে নিয়ে লন্ডনে পৌঁছোবেন। তা-ই হল। কলকাতা থেকে দুবাই, সেখানে কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা, তার পর দুবাই থেকে লন্ডন দীর্ঘ বিমানযাত্রা। কনকনে ঠান্ডায় রবিবারটা হোটেলেই কাটছে মমতার। সোমবার থেকেই উপর্যুপরি কর্মসূচি।