দুর্গার কপালে টিপ পরাচ্ছেন মমতা। তার পরে দু’হাতে পরালেন শাঁখা। —নিজস্ব চিত্র।
দুগ্গা-দুগ্গা
কলকাতা বিমানবন্দরের বিশ্ব বাংলা স্টোরে মাটির তৈরি অপরূপ দুর্গামূর্তির সামনে থমকে দাঁড়িয়ে পড়লেন মমতা বন্দোপাধ্যায়। পায়ের হাওয়াই চটি খুলে এগিয়ে গিয়ে খুঁটিয়ে দেখলেন। তার পরে বললেন, কপালটা খালি খালি লাগছে। একটা টিপ পরিয়ে দিলে ভাল লাগবে। স্টোরের এক কর্মী দ্রুত নিয়ে এলেন লিপস্টিক। মমতার পছন্দ নয়, ‘‘লিপস্টিক দিয়ে টিপ পরানো ঠিক নয়!’’ কিন্তু টিপ কোথায় পাওয়া যায়? উদ্যোগী সফরসঙ্গী সাংবাদিক টিপ পরিহিত এক মহিলাযাত্রীকে গিয়ে অনুরোধই জানিয়ে ফেললেন। দেখা গেল, কলকাতার বাসিন্দা এবং ভিয়েতনাম অভিমুখী সুনীতার ব্যাগে লাল টিপের পাতা রয়েছে। তার থেকেই একটা নিয়ে দুর্গার কপালে পরালেন মমতা। তার পরে দু’হাতে পরালেন শাঁখা। আরও কাজ বাকি ছিল। সুনীতাকে উপহার দেওয়া। স্টোর থেকেই কানের দুল কিনে মহিলাকে উপহার দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। অভিভূত সহ-নাগরিককে ধন্যবাদ জানিয়ে এগোলেন দুবাইগামী বিমানের দিকে।
কলকাতা নয়, বাংলা
বিশ্ব বাংলার স্টল ঘুরে ঘুরে দেখছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একটি র্যাকে রাখা ছিল সার সার কফি মগ। গায়ে লেখা, ‘কলকাতা’। সেগুলো তুলে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখলেন মমতা। তার পরে স্টোরের কর্মীকে বললেন, “কলকাতা কেন? বাংলা লিখবেন। বাংলা!’’ বস্তুত, প্রতি বারের বিদেশ সফরে যাওয়ার সময় এই স্টল ঘুরে দেখে যান মমতা। তিনি যেখানে যান, চারদিকে লোক জমে যায়। এটাই দস্তুর। শনিবারের সন্ধ্যাও ব্যতিক্রম হয়নি। সেই ভিড়কে সঙ্গে নিয়েই বিমানবন্দরের ডিপার্চার লাউঞ্জে ঘুরে বেড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সঙ্গে ছবি তোলার প্রচুর অনুরোধও এল।
বিশ্ব বাংলার স্টল ঘুরে ঘুরে দেখছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
কলকাতাই যখন লন্ডন
সকাল থেকে কলের জল কেমন ঠান্ডা হয়ে আছে না? কলকাতা বিমানবন্দরের ডিপার্চার লাউঞ্জে ঢুকে বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শীত করছে বোঝা গেল, যখন চাদর চেয়ে নিলেন। পাতলা একটা জ্যাকেটে শানাচ্ছিল না। জানালেন, বিমানবন্দরে ঢোকা ইস্তক শীত-শীত করছে তাঁর। ঘটনা তাই। সকাল থেকে কলকাতায় টিপটিপে বৃষ্টি। পচা গরম নেই। হাওয়া দিচ্ছে মৃদুমন্দ। এক রসিক সফরসঙ্গী বলেই ফেললেন, “কলকাতাই তো লন্ডন হয়ে গেল!’’ মমতাও হেসে ফেললেন।
টিম বেঙ্গল
যেখানেই যান না কেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টিম সংস্কৃতিতে বিশ্বাসী। হিথরো বিপর্যয়ের পরে উড়ান বিভ্রাটে সফর পিছিয়ে যাওয়ার সময় জানিয়ে দিয়েছিলেন, সকলে একসঙ্গে যাবেন। সেই অনুযায়ীই সফর শুরু হয়েছে। মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, শিল্পসচিব বন্দনা যাদব, মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা প্রধান পীযূষ পাণ্ডে এবং মুখ্যমন্ত্রীর প্রিন্সিপাল সচিব গৌতম সান্যাল যাচ্ছেন মমতার সঙ্গে। কলকাতা থেকে একই উড়ানে এসেছেন শিল্পপতি সত্যম রায়চৌধুরী এবং উমেশ চৌধুরী। মমতার সঙ্গে এসেছেন অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের মা লতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুবাই থেকে যোগ দিয়েছেন শিল্পপতি উজ্জ্বল সিন্হা এবং মেহুল মোহানকা। মমতার জবানিতে ‘টিম বেঙ্গল’। গভীর রাতে দুবাইয়ে পৌঁছেছে সেই টিম। রবিবার লন্ডন সময় সকাল ৭টার কিছু পরে হিথরোয় অবতরণ। ২৫ তারিখ লন্ডনে শিল্প সম্মেলনের আগে পৌঁছে যাবেন টিম বেঙ্গলের বাকি সদস্যেরা।
দুবাই বিমানবন্দরের বিজ়নেস লাউঞ্জে চটজলদি নৃত্যানুষ্ঠান। রয়েছেন মমতা। —নিজস্ব চিত্র।
বালা, নাচো তো দেখি
দুবাই বিমানবন্দরে কয়েক জন মহিলা মোবাইলে গান চালিয়ে মেহন্দি অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। হাঁটতে হাঁটতে দেখেই থমকালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরে অনায়াসে বললেন, “একটু নেচে দেখান তো দেখি!’’ মহিলারা খানিক অপ্রস্তুত। মমতা অনড়, “নাচুন না! আমিও তো কিছু দিন আগে ভাংড়া নাচলাম!’’ ব্যস, শুরু হয়ে গেল। দুবাই বিমানবন্দরের বিজ়নেস লাউঞ্জে চটজলদি নৃত্যানুষ্ঠান। তার পরে মমতার সঙ্গে ছবি তোলার হুড়োহুড়ি।