প্রতীকী ছবি।
জ্বালানির শনৈ শনৈ মূল্যবৃদ্ধি সামাল দিতে না-পেরে বহু বেসরকারি বাস বসে গিয়েছে এবং ইচ্ছেমতো ভাড়া বাড়িয়ে তাদের কেউ কেউ কোনও মতে চলছে বলে অভিযোগ। কিন্তু সরকারি বাসের বসে যাওয়ার উপায় নেই। প্রাক্-করোনাকালের তুলনায় প্রতি লিটারে ডিজ়েলের দাম বেড়েছে প্রায় ৪৯ শতাংশ, অথচ সরকারি বাসের ভাড়া আদৌ বাড়েনি। যাত্রী-ভাড়া থেকেই ডিজ়েল কেনার খরচ তুলতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠছে বিভিন্ন সরকারি পরিবহণ নিগমের।
এই অবস্থায় তেলের খরচ কমানোর জন্য লিটার-প্রতি কী ভাবে মাইলেজ বাড়াতে হবে, এখন সেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে সরকারি বাসের চালকদের। দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম (এসবিএসটিসি) কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, এক সময় সাধারণ নন-এসি বাস লিটারে চার কিলোমিটার বা তার কম ছুটত। চালকদের গাড়ি চালানোর অভ্যাস পাল্টে মাইলেজ সাড়ে চার কিলোমিটার করার চেষ্টা করা চলছে। এ ভাবে প্রতি ট্রিপে পাঁচ থেকে দশ লিটার তেল বাঁচানো সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে। নিগম সূত্রের খবর, চালকদের ঘনঘন ব্রেক কষা এবং লাগামছাড়া গতিতে বাস চালানোর প্রবণতা বদলে নির্দিষ্ট গতিতে (ঘণ্টায় ৫০-৬০ কিলোমিটার) গাড়ি চালানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। ব্রেকের মতো কী ভাবে দক্ষতার সঙ্গে ক্লাচের ব্যবহার করতে হবে, বোঝানো হচ্ছে তা-ও। নিগমের চেয়ারম্যান সুভাষ মণ্ডল জানান, নজরদারির ফলে তেলের খরচ আগের চেয়ে কমেছে। এর পাশাপাশি প্রয়োজন অনুযায়ী বাস চালানোর ফলে বেলঘরিয়ার মতো বড় ডিপোয় মাসে দু’ট্যাঙ্কার পর্যন্ত তেল বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে বলে তাঁর দাবি।
নিগমকর্তারা মানছেন, নিয়ম মেনে গাড়ি চালানো ছাড়াও উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণ এবং সময়মতো ইঞ্জিন অয়েল বদলও ডিজ়েল বাঁচানোর অন্যতম উপায়। গত বছর দু’টি ত্রৈমাসিকে গাড়ির চাকা কেনা এবং রক্ষণাবেক্ষণ খাতে কোনও টাকা না-মিললেও সম্প্রতি টাকা এসেছে। তা দিয়ে রক্ষণাবেক্ষণ খাতে বকেয়া মেটানোর চেষ্টা হচ্ছে।
বিভিন্ন দূরপাল্লার রুটে দৈনিক গড়ে ৬৮০টি বাস রাস্তায় নামাতে গিয়ে পরিবহণ নিগম কর্তৃপক্ষকে কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়তে হচ্ছে নিত্যদিন। বিগত অর্থবর্ষে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দু’টি ত্রৈমাসিকের টাকা না-মেলায় চাপ আরও বেড়েছে। এ দিকে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলির প্রাপ্য প্রায় ন’কোটি টাকা বকেয়া পড়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় পরিষেবা অক্ষুণ্ণ রাখতে মরিয়া হয়েই খরচ বাঁচানোর চেষ্টা করছেন এসবিএসটিসি-কর্তৃপক্ষ।
আয় বাড়াতে বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে বাস চালানোর হার কমানো হয়েছে। দূরপাল্লার নিয়মিত সব বাসের টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে অনলাইনে। এর ফলে চুরি বা লিকেজ কমানো সম্ভব হয়েছে বলে জানান সুভাষবাবু। নিগমের চালক এবং কন্ডাক্টরদের রাত্রিবাসের জন্য দিঘা, বাগুইআটি-সহ বিভিন্ন জায়গায় চড়া ভাড়ায় বাড়ি ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। সেগুলি বাতিল করে নিগমের নিজস্ব স্ট্যান্ড ও ডিপোয় কর্মীদের রাত কাটানোর ব্যবস্থা হচ্ছে। দিঘাগামী দেড়শো বাস একটি বেসরকারি জায়গায় ধোয়ার জন্য বাস-পিছু দিনে ৫০ টাকা খরচ হত। সুভাষবাবু বলেন, ‘‘খরচ কমাতে ডিপোতে বাস ধোয়ার ব্যবস্থা হয়েছে।’’
সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, অতিমারি পর্বে পরিযায়ী শ্রমিকদের বিনা পয়সায় বাড়ি পৌঁছে দিতে গিয়ে নিগমের সঞ্চিত টাকার প্রায় পুরোটাই নিঃশেষ হয়ে যায়। এখন খরচের হার কমিয়ে কিলোমিটার-পিছু আয় ২৮ টাকার কাছাকাছি আনা সম্ভব হয়েছে বলে জানান আধিকারিকেরা। সেই সঙ্গে বিজ্ঞাপন থেকে আয় বাড়ানোর চেষ্টা চলছে। কলকাতা ও দুর্গাপুর থেকে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন রুটেও বাস চালানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আয় তলানিতে ঠেকে যাওয়ায় উদ্ভূত সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে লাভজনক রুটেই যে বেশি সংখ্যায় বাস চালানো প্রয়োজন, সেটা বুঝেই হিসেব করে পরিষেবা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।