ফাইল চিত্র।
শিক্ষকদের একাংশের অনুমানই সঠিক হল। শনিবার স্কুল পূর্ণ দিবস হলেও রাজ্য জুড়ে পড়ুয়ার উপস্থিতির হার ছিল বেশ কম। এমনিতেই গত মঙ্গলবার স্কুল খোলার পরে থেকে একটু একটু করে পড়ুয়ার সংখ্যা কমছিল। শনিবার এই পড়ুয়ার উপস্থিতির হার ছিল গত তিন দিনের থেকেও বেশ কম।
শনিবার টিফিন পিরিয়ডে ছুটি নয়, পুরো স্কুল করতে হবে - গত ১৬ নভেম্বর স্কুল খোলার পরে মধ্য শিক্ষা পর্ষদের এই বিজ্ঞপ্তি ঘিরে তৈরি হয়েছিল বিতর্ক। অধিকাংশ শিক্ষকের মত ছিল, সপ্তাহে পাঁচদিন মাস্ক পরে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা স্কুল করতে গিয়ে পড়ুয়ারা ক্লান্ত হয়ে যাবে। শিক্ষকদেরও শনিবার পুরো ক্লাস করলে নানা অসুবিধা হতে পারে। তবে অভিবাবকদের একাংশ জানিয়েছিল, শনিবার পুরো সময়ের স্কুলের সিদ্ধান্ত একেবারে সঠিক।
পড়ুয়া কম থাকলেও এই শনিবার কয়েকটি জেলায় বিকেল সাড়ে চারটে পর্যন্ত ক্লাস চলে। আবার কয়েকটি জেলায় ছাত্রের অভাবে আগেই ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। শিক্ষকদের একাংশের মতে, এর আগে শনিবার কখনই পূর্ণ সময়ের স্কুল হয়নি। তাই অভ্যস্ত নয় পড়ুয়ারা। ধীরে ধীরে শনিবার পড়ুয়ার সংখ্যা বাড়তেও পারে।
মুর্শিদাবাদ, উত্তরবঙ্গের অধিকাংশ স্কুল, দুই মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামের মতো বহু জেলাতেই এ দিন পুরো সময় ক্লাস হয়নি। মূল কারণ, পড়ুয়ার অভাব। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, দুই ২৪ পরগনা ও নদিয়ায় পড়ুয়ারা সঠিক ভাবে জানত না পূর্ণ দিবস ক্লাসের কথা। তবে দুই বর্ধমানের অনেক জায়গাতেই পুরো সময় ক্লাস হয়েছে। কলকাতা ও কলকাতা সংলগ্ন কয়েকটি স্কুলের শিক্ষকরা জানিয়েছেন, দ্বাদশের পড়ুয়ারা প্র্যাক্টিক্যাল ক্লাস করতে এসেছে। তবে নবম বা দশমের পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল হাতে গোনা।
শুক্রবার স্কুল ছুটি ছিল। তার পরে শনিবার স্কুল পুরো সময় খোলা, এই তথ্য অনেক ছাত্রের কাছেই সঠিক ভাবে পৌঁছে দেওয়া যায়নি বলে শিক্ষকদের একাংশের দাবি। উত্তরবঙ্গের কয়েকটি স্কুলের শিক্ষকদের একাংশ মনে করছেন, ধান কাটার মরসুম থাকায় ছাত্রেরা বেশিরভাগ মাঠে চলে গিয়েছে। তাঁদের দাবি, প্রতিবারই এমন হয়। ধান কাটা শেষ হলে ছাত্রেরা ক্লাসে ফিরবে।
শনিবার স্কুল পূর্ণ সময় স্কুল করার নির্দেশ পেয়ে শিক্ষকদের একাংশের মধ্যে যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে, তা স্পষ্ট। কয়েকজন শিক্ষকের মতে, যে সব শিক্ষকের দূরে বাড়ি, তাঁরা বাড়ি চলে যান শনিবার দুপুরেই। এখন শনিবার পুরো সময় স্কুল হওয়ায় তাঁরা বাড়ি যেতে পারবেন না। কয়েকজন শিক্ষক জানাচ্ছেন, করোনার জন্য স্কুলে যেতে না হওয়ায় শিক্ষকদের ক্যাজুয়াল লিভ প্রায় খরচই হয়নি। এ বার শনিবারও যদি শিক্ষকেরা ক্যাজুয়াল লিভ নিতে শুরু করেন, তা হলে স্কুলে পড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষক থাকবে তো?
প্রধান শিক্ষকদের সংগঠন ‘অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস’-এর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক চন্দন মাইতি বলেন, “শনিবার সকল পড়ুয়ার জন্য পুরো স্কুল না করে করোনাকালে পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়া পড়ুয়াদের চিহ্নিত করে শুধু তাদের জন্য পুরো স্কুলের ব্যাবস্থা করা যেতে পারে।”