সারদা এনক্লেভ নিয়ে কাঁথি পুরসভাকে নোটিস সিবিআইয়ের

পূর্ব মেদিনীপুরে ‘সারদা এনক্লেভ’ নামে একটি আবাসন প্রকল্প নিয়ে তথ্য জানতে কাঁথি পুরসভাকে নোটিস পাঠাল সিবিআই। পুরসভার চেয়ারম্যানকে এই নোটিস পাঠানো হয়েছে। ঘটনাচক্রে ওই পুরসভার চেয়ারম্যান সাংসদ শিশির অধিকারীর ছেলে সৌমেন্দ্যু অধিকারী। সিবিআই সূত্রের খবর, ২০১২ সালে কাঁথি পুরসভার বর্তমান ২১ নম্বর ওয়ার্ডের অধীন কাঁথি-দিঘা রাজ্য সড়কের ধারে একটি জমিতে আবাসন প্রকল্প গড়বে বলে কাঁথি পুরসভার কাছে দরবার করেন সারদা গোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা ও কাঁথি শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৬ ২১:৪০
Share:

পূর্ব মেদিনীপুরে ‘সারদা এনক্লেভ’ নামে একটি আবাসন প্রকল্প নিয়ে তথ্য জানতে কাঁথি পুরসভাকে নোটিস পাঠাল সিবিআই। পুরসভার চেয়ারম্যানকে এই নোটিস পাঠানো হয়েছে। ঘটনাচক্রে ওই পুরসভার চেয়ারম্যান সাংসদ শিশির অধিকারীর ছেলে সৌমেন্দ্যু অধিকারী।

Advertisement

সিবিআই সূত্রের খবর, ২০১২ সালে কাঁথি পুরসভার বর্তমান ২১ নম্বর ওয়ার্ডের অধীন কাঁথি-দিঘা রাজ্য সড়কের ধারে একটি জমিতে আবাসন প্রকল্প গড়বে বলে কাঁথি পুরসভার কাছে দরবার করেন সারদা গোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা। সূত্রের খবর, ১৯ তলা বহুতলের জন্য দরবার করা হয়। কিন্তু পুরসভা ৫ তলা আবাসনের জন্য নকশা অনুমোদন করে। সেই অনুসারে জমিতে পাঁচিল দেওয়া হয়। বাড়ি তৈরির দামী দামী যন্ত্রও সেখানে পাঠানো হয়। অভিযোগ, সেই আবাসন প্রকল্পের নাম করে আমানতকারীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা তুলেছে সারদা গোষ্ঠী। যদিও সেই আবাসন প্রকল্প হয়নি। খোঁজ মেলেনি বাড়ি তৈরির যন্ত্রাংশেরও। কাঁথি থানার পুলিশ যন্ত্রাংশ উধাও কাণ্ডে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করেছিল। পাশাপাশি, টাকা দিয়ে বুকিং করার পরেও ফ্ল্যাট না মেলায় কাঁথি থানায় একাধিক আমানতকারী অভিযোগ দায়ের করেছিলেন।

সিবিআই ইতিমধ্যেই সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। সূত্রের দাবি, সাংসদকে জিজ্ঞাসাবাদে সারদার সেই আবাসন প্রকল্প নিয়েও কথা হয়েছিল। শুভেন্দুর ভাই সৌমেন্দ্যু সে সময়ে কাঁথি পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। বর্তমানেও তিনি ওই পুরসভার চেয়ারম্যান। সিবিআই এ বার কাঁথি পুরসভার কাছে নথি চেয়ে নোটিস পাঠিয়েছে বলে সূত্রের দাবি। ফলে চেয়ারম্যান হিসেবে নথি দেওয়ার দায় সৌমেন্দ্যুর উপরে বর্তায়। তাঁর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমি কোনও মন্তব্য করব না।’’ যদিও সিবিআই সূত্রের দাবি, তদন্তের স্বার্থে সৌমেন্দ্যুর সঙ্গেও কথা বলতে পারেন তদন্তকারীরা।

Advertisement

সিবিআইয়ের এক শীর্ষকর্তা জানান, আবাসন প্রকল্পের নামে আমানতকারীদের কাছে তোলা কয়েক কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু কোনও প্রকল্প তো হয়ইনি, উল্টে বেশ কয়েক কোটি টাকা এবং কয়েক কোটি টাকার যন্ত্রাংশ লুঠ করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। সে ক্ষেত্রে কয়েক জন সাক্ষীও রয়েছে। সেই ঘটনায় কোন কোন প্রভাবশালী জড়িত তা খতিয়ে দেখে আইনি পদক্ষেপ করা হবে। সারদা-কর্তা সুদীপ্ত সেন ওই আবাসন নিয়ে যে সব তথ্য দিয়েছেন তা-ও যাচাই করে দেখা হবে।

সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের জেরার মুখে দাঁড়িয়ে সারদা-কর্তা সুদীপ্ত সেন একাধিক বার অভিযোগ করেছেন, ওই প্রকল্প গড়ার ক্ষেত্রে বেশ কয়েক জন প্রভাবশালী ব্যক্তি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। প্রকল্প তৈরির জন্য টাকা চেয়ে চাপ দেওয়া হয়েছিল। দাবি মতো টাকা দিয়েও সেই আবাসন প্রকল্পের কাজ করা যায়নি। এমনকী, সমস্যা মেটাতে তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরও হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। যাঁরা ফ্ল্যাট বুকিং করেছিলেন, তাঁদের ফ্ল্যাট দেওয়া অথবা টাকা ফেরত দেওয়া যায়নি বলেই অভিযোগ করেছিলেন সারদা-কর্তা। সিবিআই সূত্রের দাবি, রাজ্য সড়ক থেকে ওই জমিতে যাওয়ার জন্য একটি কালভার্ট তৈরির জন্য কাঁথি পুরসভার কাছে দরবার করা হয়েছিল বলে দাবি করেছিলেন সুদীপ্ত সেন। সেই কালভার্ট তৈরির জন্যও টাকা দাবি করা হয়েছিল।

সারদা-কর্তার দাবি যাচাই করতে গিয়ে সারদার একাধিক কর্তাব্যক্তি ও এজেন্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা। তার মধ্যে সারদা-কাণ্ডে ধৃত সারদার এক কর্মকর্তা এবং প্রভাবশালী এক এজেন্টকে জেরা করা হয়। সূত্রের দাবি, ওই আবাসন প্রকল্পের জন্য টাকার দাবি করা হয়েছিল। এমনকী, টাকা না দিলে বাড়ি তৈরির যন্ত্রাংশগুলি তুলে নেওয়া হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়। ঘটনাচক্রে সেই যন্ত্রাংশের খোঁজ মেলেনি। কাঁথি থানার পুলিশ ওই যন্ত্রাংশ উধাও হওয়ার ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলাও করেছিল।

২০১৩ সালে সারদা-কর্তা সুদীপ্ত সেনের সল্টলেকের এএল ব্লকের একটি বাড়ি থেকে নথি সরাতে গিয়ে বাসিন্দাদের হাতে ধরা পড়েছিল দুটি ট্রাক। দেখা যায়, ওই ট্রাকে এবং বাড়িটিতে পূর্ব মেদিনীপুরের ‘সারদা এনক্লেভ’ আবাসন প্রকল্প নিয়ে নানা প্রচার পুস্তিকা রয়েছে। সেই নথি বাজেয়াপ্ত করে বাড়িটি সিল করেছিল বিধাননগর পুলিশ। যদিও সেই ঘটনা নিয়ে বিধাননগর পুলিশ কিংবা বিশেষ তদন্তকারী সংস্থা বা সিট কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করেনি বলেই সূত্রের দাবি। সিবিআই তদন্তভার নিয়ে এ ব্যাপারে তদন্ত শুরু করে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement