(বাঁ দিকে) শওকত মোল্লা। নওশাদ মোল্লা (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
ভাঙড়ে তৃণমূলের বিজয়োৎসবে আমন্ত্রণ জানানো হবে আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকিকে। আগামী ১৩ অগস্ট ভাঙড়ের শোনপুরে পঞ্চায়েত ভোটে জয়ের উৎসব পালন করবে তৃণমূল। বৃহস্পতিবার বিধানসভায় ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক তথা তৃণমূলের তরফে ভাঙড়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা শওকত মোল্লা বলেন, তিনি নওশাদ সিদ্দিকিকে আমন্ত্রণ জানাবেন। ‘ভাইজান’ যদি সভায় যান, তা হলে তাঁর নিরাপত্তার বন্দোবস্তও শওকত করবেন বলে জানিয়েছেন।
এখন প্রশ্ন হল, নওশাদ কি আদৌ যাবেন? বৃহস্পতিবার বিধানসভা অধিবেশনের মাঝে নওশাদ বলেন, ‘‘শওকত মোল্লা সাহেব আমার বড় ভাইয়ের মতো। তাঁর যে সৌজন্যের রাজনীতি করার শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে, এটা দেখে আমি আনন্দিত।’’ এর পরেই আইএসএফ বিধায়ক বলেন, ‘‘তবে ওই বিজয়োৎসবে আমি যেতে পারব না। কারণ, ভাঙড়ের মানুষের অধিকার হরণ করা হয়েছে পঞ্চায়েত ভোটে। ওই ফলাফলে মানুষের প্রকৃত রায়ের প্রতিফলন হয়নি। তাই আমি সেখানে যাব না।’’ পাশাপাশি নওশাদ মনে করিয়ে দিতে চান, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি বিরোধী বিধায়কদের প্রশাসনিক বৈঠকে ডাকেন? শওকত সাহেব সেই বন্দোবস্ত করতে পারলে আমরা আমাদের অভাব-অভিযোগের কথা জানাতে পারি।’’
পঞ্চায়েত ভোটে এ বার ভাঙড় কার্যত হিংসার বদ্ধভূমিতে পরিণত হয়েছিল। বোমাবাজি, খুনোখুনি, রক্তারক্তি— মনোনয়ন পর্ব থেকে ফলঘোষণা পর্যন্ত তো বটেই, তার পরেও ভাঙড় ছিল অশান্ত। চলতি সপ্তাহে ভাঙড় থেকে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার করে প্রশাসন। এমনই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল যে, বিধায়ক নওশাদও নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রে ঢুকতে পারছিলেন না। বুধবার ভাঙড়ে পা রেখেছিলেন তিনি। তার পর দেখা গেল বৃহস্পতিবারই নওশাদকে তৃণমূলের বিজয়োৎসবে আমন্ত্রণ জানানোর কথা বললেন শওকত।
ভাঙড় বরাবরই রাজনৈতিক উত্তেজনাপ্রবণ। তবে ২০২১ সালের ভোটে নওশাদের জয়ের পর সেই উত্তেজনা ভিন্ন মাত্রায় পৌঁছেছিল। বিধায়ক নওশাদের গাড়িতে হামলার অভিযোগ ঘিরে তুলকালামকাণ্ড বেধেছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার এই জনপদে। তার পর তার রেশ এসে পড়েছিল কলকাতার রাস্তাতেও। আইএসএফের বিক্ষোভ, তাকে ঘিরে পুলিশি লাঠিচার্জে ধর্মতলায় ধুন্ধুমার বেধে গিয়েছিল। সেই ঘটনায় গ্রেফতার হয়ে, একের পর এক মামলায় জড়িয়ে নওশাদ ৪১ দিন জেলও খেটেছিলেন।
আরাবুল ইসলাম ও কাইজার আহমেদের কোন্দল ভাঙড়ের তৃণমূলে অনেক পুরনো বিষয়। পঞ্চায়েত ভোটের কয়েক মাস আগে তাই সাংগঠনিক ক্ষতে প্রলেপ দিতে শওকতকে দায়িত্ব দেওয়া দেয় শাসকদল। ভোটের মাঝে বিধাননগরের সব্যসাচী দত্তকেও জুড়ে দেওয়া হয়েছিল সেখানে। তবু হিংসা থামেনি। শেষ পর্যন্ত ভোটে তৃণমূলের জয়জয়কারই দেখা যায়। আইএসএফের অবশ্য বক্তব্য, ওটা জয় না। লুটের হিসাব। ভোটের পরে ভাঙড়কে ‘ঠান্ডা’ করতে প্রশাসনিক পদক্ষেপও করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভাঙড়কে বারুইপুর জেলা পুলিশের এক্তিয়ার থেকে বার করে এনে কলকাতা পুলিশের অধীনে নেওয়ার বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। এ সব রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক সাত-সতেরোর মধ্যেই ভাঙড়ে তৃণমূলের বিজয়োৎসবে নওশাদকে আমন্ত্রণ জানানোর কথা বললেন শওকত।