santiniketan

ঘণ্টাতলার পরে ছাতিমতলা ক্ষতিগ্রস্ত, প্রশ্নে রক্ষণাবেক্ষণ

বছর দু’য়েক আগেও বৃষ্টিতে গোড়া থেকে বটগাছ উপড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল শান্তিনিকেতনের আরেকটি ঐতিহ্যবাহী স্মারক ঘণ্টাতলার সৌধ। ফের তেমন ঘটনায় মর্মাহত আশ্রমিকরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৬:৫২
Share:

গাছ ভেঙে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত ছাতিমতলা। নিজস্ব চিত্র

কখনও দুর্যোগ। কখনও রক্ষণাবেক্ষণের অভাব। নানা কারণে এর আগে শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তেমনই একটি ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল শনিবার। দু’টি শাল গাছ পড়ে ভেঙে গেল শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্যবাহী ছাতিমতলা বেদির। শনিবার সকালে ওই ঘটনায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় ছাতিমতলার একাংশ। ভেঙে গিয়েছে সেই মর্মর ফলকটিও যেখানে লেখা রয়েছে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের বাণী, ‘‘তিনি আমার প্রাণের আরাম, মনের আনন্দ, আত্মার শান্তি।’’ বছর দু’য়েক আগে গাছ পড়ে ভেঙে গিয়েছিল ঘণ্টাতলা। ফের এমন ঘটনায় বিশ্বভারতীর ঐতিহ্যের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন আশ্রমিক, প্রাক্তনী ও পড়ুয়ারা।

Advertisement

ঘটনার পরই বিশ্বভারতীর তরফে তড়িঘড়ি ছাতিমতলার চারপাশ সবুজ কাপড় দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়। বেদির উপর ভেঙে পড়া গাছ রবিবার ওই জায়গা থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। বিশ্বভারতীর তরফে জানানো হয়েছে, মূল সৌধ যাতে খুব তাড়াতাড়ি পুনর্নির্মাণ করা যায় সে জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বিভাগের (এএসআই) সঙ্গে ইতিমধ্যে যোগাযোগ করা হয়েছে। বিশ্বভারতী ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক মহুয়া বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ছাতিমতলাকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়ার পাশাপাশি এএসআইয়ের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে।”

ছাতিমতলাকে শান্তিনিকেতনের প্রাণকেন্দ্র বলা চলে। একাধিক রবীন্দ্র-জীবনীকারের লেখা থেকে জানা যায়, মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর রায়পুরের জমিদারের নিমন্ত্রণ গ্রহণ করতে যাওয়া বা ফেরার পথে এই ছাতিমতলায় অল্পক্ষণের জন্য বিশ্রাম নিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথের একাধিক লেখাতেও ছাতিমতলার উল্লেখ রয়েছে। রবীন্দ্রনাথের প্রয়াণের পর ১৯৪২ সালে চিনের সর্বময় কর্তা চিয়াং কাই শেক ও তাঁর স্ত্রী শান্তিনিকেতনে আসেন। রবীন্দ্রনাথের প্রতি তাঁদের অসীম শ্রদ্ধা ছিল। রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিরক্ষার্থে তাঁরা বিশ্বভারতীকে ৫০,০০০ টাকা অনুদান করেছিলেন। এখন ছাতিমতলার যে চেহারা দেখা যায় তখন তা ছিল না। সেই টাকায় ছাতিমতলার এই বেদি সংস্কার করা হয়।

Advertisement

বছর দু’য়েক আগেও বৃষ্টিতে গোড়া থেকে বটগাছ উপড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল শান্তিনিকেতনের আরেকটি ঐতিহ্যবাহী স্মারক ঘণ্টাতলার সৌধ। ফের তেমন ঘটনায় মর্মাহত আশ্রমিকরা। প্রবীণ আশ্রমিক সৌরীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আশ্রমবাসীর কাছে বড় দুঃখের দিন। এটা আমরা কোনও দিন কল্পনা করতে পারিনি। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের যথেষ্ট সচেতন হওয়া উচিত ছিল।’’ আরেক আশ্রমিক স্বপনকুমার ঘোষের ক্ষোভ, ‘‘কিছুদিন আগেও আমরা দেখেছি একই ভাবে ঘণ্টাতলার উপর গাছ ভেঙে পড়তে। তাই রক্ষণাবেক্ষণ ঠিক মতো না হলে প্রাচীন ঐতিহ্যগুলি এ ভাবেই বিনষ্ট হতে থাকবে।”

ছাতিমতলার ভেঙে পড়া নিয়ে ব্যথিত হওয়ার পাশাপাশি সঠিক পরিচর্যার অভাবকেও দোষ দিচ্ছেন অনেকেই। তবে ঠিক কী কারণে বিশাল শালগাছ দু’টি ভেঙে পড়ল তা জানাতে না পারলেও বিশ্বভারতীর উদ্যান বিভাগের কর্তাদের প্রাথমিক ধারণা, গাছ দু’টি বহু পুরনো হয়ে যাওয়ার ফলে গাছের উপরের অংশ ভেঙে পড়েছে। বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক বলেন, “গাছ দু’টি বেশ পুরনো হওয়ার কারণেই হয়তো ভিতরে ভিতরে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি হওয়ার কারণে সেগুলি নড়বড়ে হয়ে যাওয়ায় এমন ঘটনা ঘটেছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement