ছবি সংগৃহীত।
কাব্য, ব্যাকরণ, স্মৃতি, পৌরোহিত্য ও দর্শন তো থাকছেই। একই সঙ্গে রাজ্যের টোলগুলিকে ‘মূল ধারায় আনার জন্য’ সেখানকার পাঠ্যসূচিতে নতুন বিষয় হিসেবে এ বার যোগ করা হচ্ছে ইংরেজি, বাংলা, গণিত, ভূগোল, ইতিহাস, এমনকি কম্পিউটারও। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে না-হওয়া পরীক্ষাও এ বার নেওয়া হবে সেখানে।
রাজ্যের বেশির ভাগ টোল রয়েছে নদিয়া, মেদিনীপুর ও বাঁকুড়ায়। কোচবিহার, হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা আর কলকাতাতেও কিছু টোল আছে। বর্তমানে পড়ুয়ারা বাড়ি থেকে এসেই পড়াশোনা করে। যাঁরা শিক্ষকতা করেন, তাঁরা মাসে প্রায় সাড়ে সাত হাজার টাকা ভাতা পান। এই ধরনের পণ্ডিত আছেন ৫০৯ জন। করোনার দাপটে টোলগুলিও এখন বন্ধ। কোনও কোনও টোলে অনলাইনে পড়ানোর উদ্যোগ চলছে। তবে প্রায় এক যুগ পরীক্ষা না-হওয়ায় টোলে পড়ার আগ্রহও কমে গিয়েছে বলে শিক্ষা শিবিরের পর্যবেক্ষণ।
সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রাজ্যে টোল আছে ৪২৭টি। সংস্কৃত শিক্ষার প্রসারে সেখানে পড়ানো হয় কাব্য, ব্যাকরণ, স্মৃতি, পৌরোহিত্য ও দর্শন। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সোমা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, নতুন বিষয়ের অন্তর্ভুক্তির জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়া হয়েছিল। তাতে টোলের পণ্ডিতেরাও ছিলেন। ‘‘টোলগুলিকে আমরা মূল ধারায় আনার চেষ্টা করছি। তার জন্য পরীক্ষা নেওয়া খুবই জরুরি। পাঠ্যসূচিকেও যুগোপযোগী করতে চাইছি,’’ বলেন উপাচার্য।
সোমাদেবীর কথায়, শতাব্দী-প্রাচীন টোলগুলিতে ২০০৮ সালের পর থেকে কোনও পরীক্ষা হয়নি। টোলে মূলত দু'টি পরীক্ষা নেওয়া হয়। ‘আদ্য’ পরীক্ষা, যা মাধ্যমিকের সমতুল। ‘মধ্য’ পরীক্ষা, যা উচ্চ মাধ্যমিকের সমান। পরীক্ষা নেওয়ার জন্য ২২টি কেন্দ্র রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন পরীক্ষা না-হওয়ায় টোলের পড়ুয়ারা সংস্কৃতে উচ্চশিক্ষার সুবিধা নিতে পারেননি। তাই এ বছরের প্রথম দিকে পরীক্ষা নিতে উদ্যোগী হয় সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়। যদিও নির্বাচন এবং দ্বিতীয় দফার লকডাউনের দরুন সেই প্রয়াস বিঘ্নিত হয়েছে। প্রায় আড়াইশো টোল কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থসাহায্যে অথবা বেসরকারি ভাবে চলত, তারাও সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আসার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছে বলে জানান উপাচার্য। তিনি জানান, রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতির ভিত্তিতে আদ্য ও মধ্য পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এগোনো হবে।
‘মধ্য’ পাশ করার পরে স্নাতক স্তরের পড়াশোনা করলে পাওয়া যায় ‘উপাধি’। স্নাতকোত্তরে পড়াশোনা করে পাশ করলে হওয়া যায় ‘আচার্য’। প্রায় এক যুগ ধরে যাঁরা আদ্য অথবা মধ্য পরীক্ষা দিতে পারেননি, তাঁদের সংখ্যা কয়েক হাজার। টোলে পড়ে পরীক্ষা দিতে না-পারায় তাঁদের অনেকে পৌরোহিত্য, গৃহশিক্ষকতা অথবা অন্য কোনও পেশায় চলে গিয়েছেন বলে জানান উপাচার্য।
সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ে রয়েছে শ্রীশ্রী সীতারামদাস ওঙ্কারনাথ সংস্কৃত শিক্ষা সংসদ। সেখানে আছে গুরুকুল এবং টোল। বেদের সঙ্গে আগে থেকেই সেখানে ইংরেজি, গণিত, বাংলা, ইতিহাস পড়ানোর পাশাপাশি কম্পিউটারও শেখানো হয়। সংসদই পরীক্ষা নেয়। সংসদের রেজিস্ট্রার সুরেশ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এখানে আট থেকে পনেরো বছর বয়সিরা ভর্তি হতে পারে। করোনার জন্য এই আবাসিক টোল এখন বন্ধ। অনলাইনে পঠনপাঠনের ব্যবস্থা করেছেন তাঁরা।