থামবেন না, দাবি সন্ময়ের

ছুটির দিনের আদালত তুলনায় ফাঁকা হলেও সন্ময়বাবুকে পেশ করার জন্য পুলিশের কড়াকড়ি ছিল পুরো চত্বরে। আগে থেকেই দলীয় কর্মীদের নিয়ে হাজির ছিলেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা বাঘমুণ্ডির বিধায়ক নেপাল মাহাতো, পুরুলিয়ার বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায়, জেলা সহ-সভাপতি উত্তম বন্দ্যোপাধ্যায়েরা।

Advertisement

প্রশান্ত পাল

পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৯ ০০:২৬
Share:

ভরসা: নেপাল মাহাতোর সঙ্গে সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যয়া। ছবি: সুজিত মাহাতো

বামফ্রন্ট সরকারের আমল থেকে টানা কাউন্সিলর। কিন্তু সমস্যার শুরু ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটে তৃণমূল প্রার্থীর কাছে তিন হাজারের কিছু বেশি ভোটে পরাজয়ের পর থেকেই। বাড়ি লক্ষ করে বোমা ছোড়া হয়। তাতে পরিবার নিয়ে উদ্বেগ বাড়ে উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটির কংগ্রেস নেতা সন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কিন্তু দমে যাননি। নিজের প্রতিবাদী ‘ইমেজ’ ধরে রেখেই কয়েক বছর পরে সোশ্যাল সাইটে শুরু করেন লেখালেখি। তা বলে লকআপে আটকে রেখে পুলিশ ‘নির্যাতন’ চালাবে, ভাবেননি কোনওদিন। রবিবার পুরুলিয়া আদালত থেকে শর্তসাপেক্ষে জামিন পেয়ে বারবার খড়দহ থানায় বৃহস্পতিবার রাতে তাঁর উপরে নির্যাতনের অভিযোগের কথা তুলছিলেন সন্ময়বাবু। মাঝে মধ্যে নিজেকে সামলাতে না পেরে কেঁদে ফেলেছেন। তখন রুমাল দিয়ে চোখ মুছিয়ে দিয়েছেন দাদা তন্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

ছুটির দিনের আদালত তুলনায় ফাঁকা হলেও সন্ময়বাবুকে পেশ করার জন্য পুলিশের কড়াকড়ি ছিল পুরো চত্বরে। আগে থেকেই দলীয় কর্মীদের নিয়ে হাজির ছিলেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা বাঘমুণ্ডির বিধায়ক নেপাল মাহাতো, পুরুলিয়ার বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায়, জেলা সহ-সভাপতি উত্তম বন্দ্যোপাধ্যায়েরা। এসেছিলেন সন্ময়বাবুর দাদা তন্ময়বাবু, সম্পর্কিত বোন ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়-সহ কয়েকজন।

বেলা পৌনে ১০টা নাগাদ পুরুলিয়া আদালতের সিজেএম মহম্মদ মহীদুল্লার এজলাসে তোলা হয় সন্ময়বাবুকে। শুক্রবার তাঁকে প্রথম যে দিন আদালতে তোলা হয়েছিল, সে দিনের মতই রবিবারও থমথমে মুখে ওঠেন তিনি। তবে, দু’তরফের আইনজীবীদের সওয়াল-জবাব শেষে ২৫ মিনিটের মধ্যেই জামিন পেয়ে কিছুটা স্বস্তির ছাপ ফুটে ওঠে তাঁর মুখে। উদ্বেগের মেঘ কেটে যায় তাঁর ঘনিষ্ঠদের মধ্যে।

Advertisement

ছাড়া পেতেই সন্ময়বাবুর গলায় মালা পরিয়ে দেন নেপালবাবু। পতাকা হাতে দলীয় কর্মীরা উল্লাস দেখান। বিধায়ক সুদীপ মুখোপাধ্যায় স্লোগান তোলেন— ‘‘পশ্চিমবঙ্গে গণতন্ত্র ফেরানোর আন্দোলন চলছে, চলবে’’।

সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সন্ময়বাবু খড়দহ থানায় নির্যাতনের অভিযোগ টেনে বলেন, ‘‘মাঝে মধ্যে মনে হচ্ছিল মরে যাব। আমি কৃতজ্ঞ পুরুলিয়ার নেতৃত্ব নেপাল মাহাতো, উত্তম বন্দ্যোপাধ্যায়, সুদীপ মুখোপাধ্যায়দের কাছে। তাঁরা না থাকলে বাঁচতে পারতাম না।’’ একই সঙ্গে তিনি পুরুলিয়া জেলা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশংসা করেছেন।

কথার মাঝে চোখ ভরে উঠেছে জলে। কখনও হাত দিয়ে চোখ ঢাকা দিয়েছেন। কখনও জামার হাতায় দিয়ে মুছেছেন। তন্ময়বাবু ভাইয়ের কাঁধ চেপে বলেছেন, ‘‘ভেঙে পড়লে চলবে না। অনেক মানুষ তোর পাশে রয়েছে। শক্ত হতে হবে। এখন লড়াইয়ের সময়।’’ পুরুলিয়ায় সস্ত্রীক বেড়াতে এসে সন্ময়বাবুকে আদালতে তোলা হচ্ছে শুনে ছুটে এসেছিলেন আগরপাড়ার ছেলে রাজীব ভট্টাচার্য। খোঁজ করতে করতে জেলা কংগ্রেস অফিসে গিয়ে সন্ময়বাবুর সঙ্গে দেখা করেন তিনি। পরে বলেন, ‘‘সন্ময়দা আমাদের এলাকার প্রতিবাদী মানুষ। তিনি বিপদে পড়েছেন শুনে বেড়াতে এসেও দেখা করে গেলাম।’’

সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদ জানাতে গিয়েই তাঁর এই পরিণতি জানিয়েও সন্ময়বাবু বলছেন, তিনি থামবেন না। দুপুরে ঝালদার পথে আনন্দবাজারকে তিনি দাবি করেন, ‘‘খড়দহ ও পুরুলিয়ার পুলিশ বারবার বলেছে, ‘এ সব লিখে ঠিক করছেন কী?’ আমি বলেছি, তৃণমূলের কেউ কেউ তো পুলিশের উপরে হামলা চালাতে উস্কানি দেয়। আমি তো সিভিক ভলান্টিয়ারদের যে ভাবে স্বল্প পারিশ্রমিকে নিয়োগপত্র ছাড়া কাজ করানো হচ্ছে তা নিয়ে লিখেছি। পার্শ্বশিক্ষক বা আংশিক সময়ের শিক্ষকদেরও যে ভাবে স্বল্প পারিশ্রমিকে কাজ করানো হচ্ছে, সে কথা তুলে ধরেছি।’’

যদিও পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার আকাশ মাঘারিয়াকে এ দিন ফোনে পাওয়া যায়নি। মন্ত্রী তথা জেলা তৃণমূল সভাপতি শান্তিরাম মাহাতোর বক্তব্য, ‘‘ভুললে হবে না, সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়ে মামলায় রাজ্য সরকারই জিতেছে। তবে পার্শ্বশিক্ষক বা অন্য বিষয়গুলি নিয়ে কেউ আদালতে যেতেই পারেন।’’ তবে সন্ময়বাবু দাবি করছেন, ‘‘আমাকে আমার অবস্থান থেকে টলানো যাবে না। লেখার মাধ্যমেই আন্দোলন গড়ে তুলব। পিছিয়ে আসার প্রশ্নই নেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement