সুকুমার মাহাতোর সঙ্গে শাহজাহান শেখ। —ফাইল চিত্র।
গত ৫ জানুয়ারি ইডি আধিকারিকদের উপর হামলার ঘটনার পর তাঁর সঙ্গে শাহজাহান শেখের কথা হয়েছিল বলে স্বীকার করলেন সন্দেশখালির তৃণমূল বিধায়ক সুকুমার মাহাতো। বিধায়কের দাবি, সন্দেশখালিতে আর যাতে অশান্তির ঘটনা না ঘটে, শাহজাহানকে তা-ই নিশ্চিত করতে বলেছিলেন তিনি। এই প্রকাশ্য স্বীকারোক্তির পরেই সুকুমারের মন্তব্য, ‘‘আমি তো সক্রিয় ভাবে দল করি না। প্রভাব খাটানোর মতো দল করি না আমি!’’
বিধায়কের এই দাবির পর কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বিজেপি। তাদের বক্তব্য, ইডি-সিবিআইয়ের ভয়ে নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করছেন বিধায়ক। সুকুমারের মন্তব্যে বিড়ম্বনায় পড়েছে শাসকদলও। তাদের বক্তব্য, বিধায়ক হিসাবে তাঁর যা দায়িত্ব, ততটুকু পালন করলেই চলবে।
সন্দেশখালিতে ইডির আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশে তদন্তে নেমেছে সিবিআই। সেই ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত শাহজাহান। তাঁর বিরুদ্ধে দু’টি এফআইআর দায়ের করেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। শাহজাহানকে নিজেদের হেফাজতেও নিয়েছে তারা। গোয়েন্দা সংস্থার একটি সূত্রে দাবি, সন্দেশখালির সরবেড়িয়ায় ইডির তদন্তকারীদের উপর হামলার ঘটনায় শাহজাহানের দু’টি মোবাইলের ‘কল ডিটেলস’-ই এখন তদন্তের মূল হাতিয়ার। ওই ফোন দু’টির তথ্য থেকে সে দিনের ঘটনায় জড়িতদের নামের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে। সেই তালিকায় সন্দেশখালির বিধায়কের নাম রয়েছে। সিবিআই সূত্রে খবর, শাহজাহান যদিও জেরায় দাবি করেছেন যে, তিনি কাউকে ফোন করেননি। তাঁর বাড়িতে ইডি হাজির হলে তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতা-অনুগামীরা তাঁকে ফোন করেছিলেন।
সেই দিন শাহজাহানের সঙ্গে ফোনে কথোপকথনের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন সুকুমার। তাঁর দাবি, সন্দেশখালিতে অশান্তির খবর পাওয়ার পর সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ তিনিই শাহজাহানকে ফোন করেছিলেন। বিধায়ক বলেন, ‘‘শাহজাহানকে ফোন করে বলেছিলাম, এলাকায় যাতে আর গন্ডগোল না হয়। আর যাতে কোনও মারামারির ঘটনা না ঘটে, সেটা দেখতে। আমার সঙ্গে যখন কথা হয়েছিল, তখন ঘটে গিয়েছিল সব!’’ কথায় কথায় সুকুমার বলেন, ‘‘আমি তো আর ওই ভাবে দল করি না। সক্রিয় ভাবে দল করি না আমি। মানুষ আমায় ভোট দিয়েছেন। বিধায়ক হিসাবে যা করার আমি করি।’’
সুকুমারের এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য তাপস মিত্র বলেন, ‘‘আসলে ইডি-সিবিআইয়ের ভয়ে নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করছেন। সন্দেশখালির ঘটনায় তৃণমূলের ছোট-বড় সব ধরনের নেতাই যে জড়িত, তা প্রমাণিত!’’ সুকুমারের এই মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তৃণমূলের অন্দরেও প্রশ্ন উঠছে, বিধায়ক কি কোনও ভাবে দলের সঙ্গে দূরত্ব রচনা করতে চাইছেন? এর প্রেক্ষিতে তৃণমূলের মুখপাত্র শান্তনু সেন বলেন, ‘‘উনি তৃণমূলের প্রতীকে জেতা বিধায়ক। বিধায়ক হিসাবে তাঁর যা করণীয়, মানুষকে যে পরিষেবা দেওয়ার কথা, আশা করি উনি সেই কাজটুকু করেন। আমি বিশ্বাস করি তৃণমূলের বিধায়ক হিসাবে ওঁর যা দায়িত্ব তা উনি পালন করেন এবং করবেন।’’