—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
সন্দেশখালি ২ ব্লককে কেন্দ্র করে বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না!
জমি দখল, অত্যাচার-সহ নানা অভিযোগে চলতি বছরের গোড়া থেকে তেতে ছিল ওই ব্লক। পরিস্থিতি আপাতত শান্ত। এ বার এখানকার একাধিক স্কুলে মিড-ডে মিল রান্নার বাসনপত্র-সহ নানা সরঞ্জাম কেনার ক্ষেত্রেও দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠছে। ব্লক অফিসের দিকেই আঙুল তুলছেন বিরোধীরা।
ব্লক প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে খবর, কয়েকদিন আগে এখানকার ১৮টি প্রাথমিক এবং উচ্চ প্রাথমিক ও শিশু শিক্ষাকেন্দ্র মিলিয়ে মোট ২৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৪ লক্ষ ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয় ওই সব সরঞ্জাম কেনার জন্য। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যার নিরিখে ১০-২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত স্কুলপ্রতি দেওয়া হয়। এইপর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। সম্প্রতি স্কুলগুলির প্রধান শিক্ষকদের একাংশ দাবি করেন, ব্লকের মিড-ডে মিলের হিসাবরক্ষক শম্ভু শরণের নির্দেশ মতো একটি নির্দিষ্ট সংস্থার থেকে বেশি দামে সরঞ্জাম নিতে তাঁরা বাধ্য হয়েছেন। এতে দুর্নীতি হয়েছে বলে মনে করছে বিজেপি।
ওই প্রধান শিক্ষকেরা জানান, এপ্রিলের গোড়ায় শম্ভু মিড-ডে মিলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে জানিয়ে দেন, যে সব স্কুল রান্নার সরঞ্জাম কেনার টাকা পেয়েছে, তাদের ৫ এপ্রিল ধামাখালির একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের পাশের নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে ওই সংস্থার থেকে সরঞ্জামগুলি কিনতে হবে। টাকা পাওয়া ২৪টি স্কুলের জন্যই ওই নির্দেশ দেওয়া হয়। এর মধ্যে গাজিখালি এফপি স্কুল এবং বেড়মজুরের এফপি স্কুল ওই সরঞ্জাম নেয়নি।
বেড়মজুরের স্কুলটির প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন মোল্লা বলেন, ‘‘স্কুল এই খাতে টাকা পেলে কখনও নির্দিষ্ট কারও কাছ থেকে সরঞ্জাম কিনতে বাধ্য থাকার কথা নয়। আমরা যেখানে ন্যায্য দামে পাব, সেখান থেকে কিনব। ব্লকে তার নথি জমা দেওয়া হবে। কোনও নির্দিষ্ট সংস্থার থেকে বেশি দামে কেন কিনব?’’
গাজিখালি এফপি স্কুলের প্রধান শিক্ষক সন্তোষকুমার করণ বলেন, ‘‘স্কুল কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে নিই। তার পরে ভাবব, কী ভাবে কিনব। বিশেষ কোনও সংস্থা থেকে কিনতে তো বাধ্য নই আমরা।’’
যে স্কুলগুলি ইতিমধ্যেই সরঞ্জাম কিনেছে ওই সংস্থা থেকে, সেই স্কুলগুলির প্রধান শিক্ষকদের একাংশের অভিযোগ, বেশি দামে সস্তার সামগ্রী বিক্রি করা হয়েছে। অভিযুক্ত শম্ভুর দাবি, ‘‘নজরদারির সুবিধার জন্য অনুরোধ করেছিলাম ওখান থেকে নিতে। যাঁরা চেয়েছেন নিয়েছেন। এর বাইরে কিছু বলার নেই।’’ বিডিও অরুণকুমার সামন্ত বলেন, ‘‘আমি বিডিও হয়ে আসার পরে একটি সংস্থা এমন মালপত্র দিয়েছিল। আগের বিডিও-র আমলে দরপত্রে ওই সংস্থাকে বাছা হয়। সেই সংস্থা আবার অনুরোধ করেছিল। তবে, বেশি দাম নেওয়ার বিষয়টা খতিয়ে দেখব। স্কুল যেখান থেকে খুশি সরঞ্জাম কিনতে পারে। বাধ্য করা যায় না।’’
ঘটনাটিকে ‘কাটমানি’ নেওয়ার কৌশল বলে মনে করছেন বিজেপি। এ ভাবে সরঞ্জাম কেনার বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে তারা। বিজেপি রাজ্য মহিলা মোর্চার সভানেত্রী ফাল্গুনী পাত্র বলেন, ‘‘আসলে ঘুর পথে মিড-ডে মিলের কাটমানি ব্লক প্রশাসনের মদতে তৃণমূলের নেতাদের কাছে পৌঁছচ্ছে। বিডিওর ভূমিকাও খতিয়ে দেখা দরকার। কী ভাবে বাইরের একটি সংস্থা থেকে সরকারি জিনিসপত্র কেনা হচ্ছে, তার তদন্ত হওয়া উচিত।’’
সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা নিখিলেশ গায়েনের দাবি, ‘‘বিরোধীরা সুযোগ পেলেই তৃণমূলকে দোষারোপ করে। এই ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের কোনও যোগ নেই।’’