মঞ্চে লোপামুদ্রো মিত্র।
লোপামুদ্রা মিত্র কি আজন্ম সাহসী? তাঁর গান, গানের ভাষা, কণ্ঠস্বর, বাচনভঙ্গি শুনে বহু জনের এই প্রশ্ন। শনিবার আনন্দবাজার অনলাইনের লাইভে সবার সেই কৌতূহল মেটালেন লোপামুদ্রা। অকপটে বললেন, ‘‘জন্ম থেকেই আমি সাহসী। আমার সেই সাহস উস্কে দিয়েছেন সমীর চট্টোপাধ্যায়।’’ লোপামুদ্রার দাবি, সমীর ছিলেন তাঁর প্রেমিক, গুরু, আবেগ, ভাল-মন্দ সব কিছু। সেই মানুষই যখন বলেছিলেন, জয় গোস্বামীর ‘বেণীমাধব’ কবিতায় সুর দেবেন, প্রচণ্ড হেসেছিলেন লোপামুদ্রা।
সমীর চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে কোনও দিন এ ভাবে অকপট হননি লোপামুদ্রা। বরাবর নেপথ্যে থাকতে পছন্দ করা জনপ্রিয় গীতিকার, সুরকার আজ আর নেই। প্রয়াত ‘কাকা’কে ছুঁয়ে গেল শিল্পীর শব্দেরা। অনেকটা ঋণস্বীকারের ভঙ্গিতেই যেন বললেন, ‘‘ওই মানুষটিই আমার মধ্যে অন্য রকম কিছু করা, অন্য ভাবে বাঁচা, ভিন্ন গান গাওয়ার ভাবনার বীজ বুনে দিয়েছিলেন।’’ লোপামুদ্রার তখন নবম শ্রেণি। সমীরের সঙ্গে প্রথম দেখা ওই বয়সে। বাবা এবং তাঁর অফিসের সহকর্মীদের সঙ্গে গায়িকাও চুটিয়ে গণসঙ্গীত গাইছেন। পথনাটিকায় অংশ নিচ্ছেন। বাবার অফিসের সহকর্মী হওয়ার সুবাদে সমীরকে ‘কাকা’ সম্বোধনে ডাকতেন লোপামুদ্রা। সেই ‘কাকা’ই কখন যেন তাঁর সমস্ত সত্তায় জুড়ে বসেন। সমীর বলতেন, লোপামুদ্রা ছিলেন গুটির ভিতরে থাকা ঘুমন্ত প্রজাপতি। তিনি তাঁর ঘুম ভাঙিয়েছেন। পরিবর্তে গায়িকা ছিলেন তাঁর ‘সাউন্ড বক্স’! সমীরের গাইতে না পারার দুঃখ গান গেয়ে ভুলিয়ে দিয়েছিলেন লোপামুদ্রা।
এর পরেই অবধারিত প্রশ্ন, গায়িকার জীবনে সমীর চট্টোপাধ্যায় ঠিক কী ছিলেন? গুরু?
এ বারেও রাখঢাক না রেখেই শিল্পীর জবাব, ‘‘তার থেকেও অনেক বেশি কিছু। আমি প্রথম প্রেম করেছি ওঁর সঙ্গে। আমার মা-বাবা, বন্ধু— শেষ দিন পর্যন্ত সব কিছুই সমীর চট্টোপাধ্যায়।’’ শিল্পীর গান, পাহাড়, নাটক, ছায়াছবি, সব কিছুর প্রতি অনুরাগের কারণও তিনিই। জয় গোস্বামীর কবিতা ‘বেণীমাধব’-এর সুরকারও সমীর। শুরুতে যদিও তা হাসির কারণ হয়েছিল লোপামুদ্রার। সটান জানিয়েওছিলেন, এত বড় কবিতায় সুর দিয়ে গান! কেউ শুনবে না। আড়াই মাসের অক্লান্ত চেষ্টায় অবশেষে তা গানের রূপ নেয়। শিল্পীর মতে, সেই সময় তিনি কেবলই তাঁর ‘কাকা’র ছায়া হয়ে গানটি গেয়েছেন সর্বত্র। নতুন কিছু শোনার আগ্রহে শ্রোতারাও লুফে নিয়েছেন। ওই গান তৈরি হতে হতেই গায়িকার জন্য সমীর তৈরি করে দিয়েছেন শঙ্খ ঘোষ, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কবিতা-গান।
‘বেণীমাধব’ সেই সমস্তকে ছাপিয়ে বাংলা গানের দুনিয়ায় ‘ইতিহাস’ হয়ে থেকে গিয়েছে।