Sagore Dutta Medical College and Hospital

পাননি দালালরাজের কোনও অভিযোগই! মদনের ‘হুমকি’ ফোনের পরেও নির্লিপ্ত সাগর দত্ত হাসপাতালের অধ্যক্ষ

মঙ্গলবার দুপুর নাগাদ আচমকাই সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছন তৃণমূল বিধায়ক মদন মিত্র। তাঁর সঙ্গে ছিলেন কামারহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান-সহ ৩০ জন কাউন্সিলর।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৩:৫৬
Share:

মদন মিত্র। —ফাইল চিত্র।

মদন মিত্র হেস্তনেস্ত চাইছেন। তিনি চাইছেন যুদ্ধকালীন তৎপরতায় তাঁর বিধানসভা কেন্দ্র কামারহাটির সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ‘দালালরাজ’ বন্ধ হোক। যা নিয়ে মঙ্গলবার হাসপাতালে পৌঁছে অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম প্রধানকে না পেয়ে তাঁকে ফোন করে একপ্রকার হুমকিই দিয়েছিলেন তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী মদন। কিন্তু তার পর গোটা একটা দিন কেটে যাওয়ার পরেও অধ্যক্ষকে সেই হুমকি নিয়ে খানিকটা নির্লিপ্তই শোনাল। বুধবার আনন্দবাজার অনলাইনকে পার্থপ্রতিম বললেন, ‘‘আমাদের কাছে তো দালালরাজ নিয়ে কোনও অভিযোগই আসেনি!’’

Advertisement

মদন তাঁকে যে ভাবে ফোন করে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, তা নিয়েও আগ বাড়িয়ে কিছু করতে চান না অতীতে একাধিক মেডিক্যাল কলেজের প্রশাসনিক দায়িত্বে-থাকা অধ্যক্ষ পার্থপ্রতিম। তিনি কি বিধায়কের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করছেন? শান্ত গলায় তাঁর জবাব, ‘‘এখনও তেমন কিছু ভাবিনি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমার ঊর্ধ্বতনেরা যা করতে বলবেন, আমি তা-ই করব।’’ স্বাস্থ্যভবন কি কিছু জানে এ ব্যাপারে? পার্থপ্রতিমের জবাব, ‘‘আপনারা লিখছেন। সংবাদমাধ্যম দেখাচ্ছে। নিশ্চয়ই জানেন। আমি কাউকে আলাদা করে জানাইনি।’’ তাঁকে কি স্বাস্থ্য দফতরের কোনও কর্তা ফোন করেছিলেন? তেমন কারও সঙ্গে কি তাঁর কথা হয়েছে? অধ্যক্ষের জবাব, ‘‘না! গতকাল (মঙ্গলবার) থেকে এখনও (বুধবার দুপুর) পর্যন্ত কেউ ফোন করেননি।’’

মঙ্গলবার দুপুর নাগাদ আচমকাই সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছে গিয়েছিলেন মদন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন তাঁর বিধানসভা কেন্দ্র কামারহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান-সহ ৩০ জন কাউন্সিলর। সেখানে পৌঁছে অধ্যক্ষকে না পেয়ে সটান তাঁকে ফোন করেন মদন। অধ্যক্ষের উদ্দেশে তৃণমূল বিধায়ককে বলতে শোনা যায়, ‘‘আপনি বেরিয়ে গিয়েছেন কেন? মাসের শেষে তো তিন লক্ষ টাকা মাইনে পান! এখানে দালালরাজ চলছে। আপনি কেন থানায় সুয়োমোটো (স্বতঃপ্রণোদিত) অভিযোগ করেননি?’’ পাশাপাশিই অধ্যক্ষকে মদনের হুঁশিয়ারি ছিল, ‘‘এর পরে হাসপাতালে ঢুকতে পারবেন তো? ও সব দালালরাজ আরজি কর, এনআরএসে হয়। ওখানে সব চুড়ি পরে বসে থাকে। এটা কামারহাটি। ঘেঁটি ধরে নাড়িয়ে দেব!’’

Advertisement

বুধবার অধ্যক্ষ জানিয়েছেন, তাঁদের কাছে লিখিত কোনও অভিযোগ না এলেও থানায় ফোন করে দালালরাজের অভিযোগের বিষয়টি জানানো হয়েছে। তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘লিখিত অভিযোগ করতে হলে তো সুপার করবেন। সেটা তো আমার এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে না।’’ সেই সঙ্গে পার্থপ্রতিম খানিক শ্লাঘা নিয়েই বললেন, ‘‘ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ, বাঁকুড়া সম্মিলনী— সব জায়গায় দালালরাজ বন্ধ করে এসেছি! খোঁজ নিয়ে নেবেন।’’

গত কয়েক দিন ধরেই সাগর দত্ত হাসপাতালে দালালরাজ নিয়ে সরব মদন। হাসপাতাল চত্বরে এক ব্যক্তির ছবি দিয়ে পোস্টার পড়েছে, ‘‘জাভেদ দালাল দূর হটো।’’ ওই জাভেদ (জাভেদ আলি) হাসপাতালেরই এক অস্থায়ী কর্মী বলে এলাকার লোকজন জানিয়েছেন। তাঁদের দাবি, এই জাভেদের নামেই পোস্টার পড়েছে। সে দাবির সত্যাসত্য যাচাই করতে জাভেদকে ফোনে ধরার চেষ্টা করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। কিন্তু তাঁর ফোন বেজে গিয়েছে। তবে রোগীর পরিজনেরা সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, ওই হাসপাতালে নানা ভাবে টাকা দিতে হচ্ছে দালালদের। তার পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অবশ্য নোটিস ঝুলিয়ে রোগীর পরিজনদের সতর্ক করতে চেয়েছেন। তাতে লেখা হয়েছে, ‘‘ভর্তি বা চিকিৎসা করার জন্য কাউকে কোনও টাকা দেবেন না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement