সায়নী ঘোষ।
“হাতের ৫টা আঙুল সমান হয় না। পরবর্তী কালে যদি দেখা যায় একজন সেলিব্রিটি নিজের মত বদলেছেন বা তাঁর সত্ত্বাকে কেউ কিনতে সক্ষম হয়েছে, তার দায়ভার যেন তাঁর পেশার মানুষদের উপর এসে না পড়ে।”
বিধানসভা ভোটের প্রাক্কালে তারকাদের আকস্মিক রাজনৈতিক মত পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে এই মন্তব্য করেছেন এখন শিরোনাম জুড়ে থাকা অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ। টলিউডের কয়েকজন স্বার্থসিদ্ধির মোহে ‘হাওয়া বুঝে’ রাজনৈতিক মতাদর্শ বদলে ফেলছেন, এমনটাই দাবি তাঁর। সায়নীর কথায়, কোনদিকে হাওয়া বইছে, তা বুঝে নিয়ে অপেক্ষাকৃত শক্ত খুঁটি ধরে নিজের বৈতরণী পার করতে চাইছেন কিছু মানুষ।
পুরো বক্তৃতা জুড়ে যদিও কোনও তারকার নাম উল্লেখ করেননি অভিনেত্রী। তবুও অনেকেই মনে করছেন, কথাগুলো রুদ্রনীল ঘোষের দিকে ছুঁড়ে দিয়েছেন সায়নী। বিজেপিতে যোগদানের পরেই রুদ্রনীলের অতীতের রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে কাটাছেড়া শুরু হয়েছিল। অভিনেতার পুরনো কিছু সাক্ষাৎকারে তাঁর ভিন্ন রাজনৈতিক অনুরক্তির কথাও হালফিলে ঘোরাফেরা করছে নেট-মাধ্যমে। তবে কি সেই আগুনেই ঘি ঢেলে দিল সায়নীর বক্তব্য? নাম না করেই রুদ্রনীলকে কটাক্ষ করলেন বিজেপির সঙ্গে প্রকাশ্য বিতণ্ডায় জড়িয়ে থাকা সায়নী?
যে বক্তৃতা সভায় তারকাদের ঘন ঘন রাজনৈতিক মত বদল নিয়ে সায়নী সরব হয়েছিলেন, সেখানে উপস্থিত ছিলেন অভিনেতা রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিনেত্রীর বিপরীত মত নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। যে সায়নী ‘ভবিষ্যতের ভূত’ মুক্তি না পাওয়ায় রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছিলেন, তিনি কী করে মঞ্চে দাঁড়িয়ে সেই দলেরই নেতা মদন মিত্রকে ‘বাংলার ক্রাশ’-এর শিরোপা দিলেন, সেই প্রশ্নের উত্তর জানতে চেয়েছিলেন রাহুল।
তৎক্ষণাৎ উত্তর না দিলেও আনন্দবাজার ডিজিটালকে সায়নী বলেন, “প্রথমত জানিয়ে রাখি, মদন মিত্রকে আমি বাংলার মেয়েদের ক্রাশ বলিনি। অর্জুন সিংহের সঙ্গে মদন মিত্রের কথোপকথনের একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছিল। সেখানেই বিতর্কের মধ্যে মদন মিত্র বলেছিলেন, তিনি বাংলার ক্রাশ। আমি সেই কথাটাই মজার ছলে তাঁকে বলেছিলাম।”
সায়নী জানান, মদন মিত্র যে সে দিন সভায় থাকবেন, তা তিনি জানতেন না। তবে অতীতে মদন যে তাঁর পক্ষে কথা বলেছেন, সে বিষয়ে সায়নী অবগত। তাই সৌজন্যের খাতিরেই তিনি সে দিন তৃণমূল নেতার সঙ্গে কথা বলেন এবং নেহাতই ইয়ার্কির ছলে তাঁকে ‘বাংলার ক্রাশ’ বলেছিলেন।
রাহুলের কথার সূত্র ধরেই ‘ভবিষ্যতের ভূত’-এর সময় তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ প্রসঙ্গে সায়নীর বক্তব্য, “আমি তো এখনও তৃণমূলে যোগদান করিনি। কেন ধরে নেওয়া হচ্ছে যে আমি সেই দলের অংশ। যদি যোগদান করেও থাকি বা নাও করে থাকি সেটার সঙ্গে 'ভবিষ্যতের ভূত'-এর কথা টেনে আনা হচ্ছে কেন। ওই সময় আমার যেটা ভুল মনে হয়েছে, আমি সেটা নিয়ে কথা বলেছি। তার বিরোধিতাও করেছি। আমার সেই পদক্ষেপের জন্য তৃণমূল থেকে কেউ আমাকে মেরে ফেলার বা ধর্ষণের হুমকি দেয়নি।”
সায়নী মনে করেন, সেই সময় একজন শিল্পী হিসেবে যা করা উচিত ছিল, তিনি তাই করেছেন। ‘ভবিষ্যতের ভূত’-এর সঙ্গে মদন মিত্রের প্রসঙ্গের তুলনা টেনে রাহুল ভুল করেছেন, সে কথাও স্পষ্ট বলেন অভিনেত্রী।
বিজেপির বিরুদ্ধে যত সুর চড়াচ্ছেন অভিনেত্রী, তার সঙ্গেই জোরালো হচ্ছে তাঁর তৃণমূলে যোগ দেওয়ার গুঞ্জন। তবে সায়নী জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে তিনি কোনও রাজনৈতিক দলে যোগদান করেননি। তবে ভবিষ্যতে রাজনীতিকে বেছে নিলেও তাঁকে নিয়ে মানুষের অসুবিধা হওয়ার কথা নয় বলেই মনে করেন তিনি। সায়নীর কথায়, “আমার নামে কোনও ক্রিমিনাল রেকর্ড নেই, কোনও দুর্নীতিও করিনি। তা হলে আমি কখনও রাজনীতিতে যোগ দিলে কারওর তো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।”
বিজেপির সঙ্গে প্রকাশ্য বিতণ্ডায় জড়ানোর পর, সায়নীর দিকে উড়ে আসে ধর্ষণ এবং প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি। সেই সময় তৃণমূল এবং সিপিএম, দুই দলই পাশে থাকার আশ্বাস দেয় অভিনেত্রীকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং সায়নীর জন্য পুলিশই নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। কিন্তু এই সাহায্যের পরিবর্তে অভিনেত্রীর থেকে কোনও রকম রাজনৈতিক সমর্থনের দাবি রাখেননি মমতা।
সায়নী বলেন, “দিদি কথা দিয়েছিলেন আমাকে নিরাপত্তা দেবেন, কথা রেখেছেন তিনি। রাত ২টোর সময় ফেরে কাজ করে, মারতে ২ মিনিটও সময় লাগবে না, এমন ধরনের হুমকিও পেয়েছি আমি। আমার নিরাপত্তার দায়িত্ব কি আমার ৬৫ বছর মা-বাবা নেবেন? আমার মত দেবলীনাদিও প্রচুর হুমকি পেয়েছে। ওকেও তাই নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। সেটা নিয়ে এত বড় ইস্যু করার কিছু আছে বলে আমার মনে হয় না।”