রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়।
বিধানসভায় সংবিধান দিবস পালনের দ্বিতীয় দিনেও নিশানায় রাজ্যপালকে রেখে এই পদের প্রয়োজনীয়তা নিয়েই প্রশ্ন তুলল শাসক শিবির। আর বিরোধী বাম-কংগ্রেস সরব হল এ রাজ্যের শাসকদের হাতে সংবিধান ও গণতন্ত্রের অমর্যাদার অভিযোগ তুলে।
সংবিধান দিবসের প্রথম দিনের আলোচনায় অংশ নিয়ে রাজ্য সরকারের সমালোচনা করেছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। রাজ্যপালকেও পাল্টা বিঁধে তাঁর ভূমিকার কড়া সমালোচনা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দ্বিতীয় দিনে সেই সুরেই পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় প্রশ্ন তোলেন, ‘‘সংবিধানের প্রথম ও শেষ কথা জনগণ। সেই জনগণের ভোটের নির্বাচিত সরকারের প্রধানকে অবজ্ঞা করা কি সাংবিধানিক? এ ধরনের পদ কি একান্তই জরুরি?’’
এই আবহের মধ্যেই আগামী ২৫ ডিসেম্বর রাজভবনে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর প্রতিকৃতি উন্মোচনের জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়ে চিঠি পাঠাচ্ছেন রাজ্যপাল। বুধবারই সেই চিঠি লেখা হয়েছে বলে রাজভবন সূত্রের খবর।
রাজ্যপালের সমালোচনা করে পার্থবাবু বলেন, ‘‘সাংবিধানিক পদে থেকে সরকারের উপর ছড়ি ঘোরানো, জনপ্রিয় সরকারকে বিব্রত করা কতটা সাংবিধানিক?’’ এ বিষয়ে আলোচনার প্রস্তাব দিয়ে পার্থবাবু রাজ্যপালের আচরণকে ‘জমিদারি’ ও ‘বড়লাটের হাবভাব’ বলে কটাক্ষও করেন। রাজ্যপালের ভূমিকার বিরুদ্ধে সরব হন আরও দুই মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যও।
সরকার পক্ষের এমন সুর শুনে সভার পরে বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘রাজ্যপাল ও বিচারপতিদের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক মন্তব্য করা যায় না। কিন্তু রাজ্যপালকে পছন্দ নয় বলে শাসক দল বিধানসভার মধ্যেই তাঁকে নিয়ে যা খুশি বলছে!’’
বিধানসভার অনুষ্ঠানে মঙ্গলবারের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে ধনখড় এ দিন টুইটে উষ্মা প্রকাশ করেছেন, ‘কাউকে কখনও সৌজন্য দেখাতে কার্পণ্য করব না। বিশেষত মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি তো নয়ই। ওঁর প্রতি ব্যক্তিগত অগাধ শ্রদ্ধা রয়েছে। আমি যাওয়ার পরে উনি স্বাভাবিক ভাবে এগিয়ে আসবেন, সেটাই প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু সেটা না হওয়ায় আমি স্তম্ভিত। অমিত মিত্র, পার্থ, আব্দুল মান্নান-সহ বিধায়কেরা আমাকে স্বাগত জানিয়েছেন’। অথচ তাঁর আগে বিধানসভায় আগত অতিথিদের স্বাগত জানাতে মুখ্যমন্ত্রী অনেক বেশি স্বতঃস্ফূর্ত ছিলেন বলেও টুইটে লিখেছেন রাজ্যপাল।
সিঙ্গুর-আন্দোলনের সময় তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বিধানসভা ভাঙচুরের ঘটনার উল্লেখ করে তৃণমূলকে পাল্টা বিঁধেছেন বাম-কংগ্রেস বিধায়কেরা। বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘যাঁরা সব থেকে বেশি সংবিধান ভাঙছেন, তাঁরা সংবিধান দিবসের আশ্রয় নিতে চাইছেন। এ রাজ্যেও যাঁরা দখলদারি, দল ভাঙানোর খেলা খেলছেন, বিধানসভা ভাঙচুর করছেন, তাঁরাও কি দিল্লির পথেই সংবিধান দিবস পালনের নামে একই কাজ করছেন?’’ পার্থবাবু আবার বিরোধীদের পাল্টা বলেন, ‘‘বিজেপি শাসিত রাজ্যেই সংবিধান দিবস পালন হচ্ছে, এটা যদি মনেই হয়, তা হলে রাজভবনের অনুষ্ঠানে কেন গেলেন বিরোধীরা?’’
ভোটে জিতে আসা জনপ্রতিনিধিদের ভাঙিয়ে তৃণমূল যে ভাবে একের পর এক জেলা পরিষদ, পুরসভা দখল করেছে, তার সমালোচনা করে কংগ্রেসের সচেতক মনোজ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘গণতন্ত্রের টুঁটি চেপে ধরা হচ্ছে। সংবিধান রক্ষার নামে বিধানসভা ভাঙচুর করা হয়েছে।’’ একই সুরে ফরওয়ার্ড ব্লকের বিধায়ক আলি ইমরান রাম্জের বক্তব্য, ‘‘এখন যিনি মুখ্যমন্ত্রী, তিনি বিধানসভায় হাঙ্গামা করেছিলেন। আবার তিনিই সংবিধানের মন্দিরে এসে সংবিধান দিবস পালনের কথা বলছেন! এটা দ্বিচারিতা নয়?’’