সারা বিশ্বের সবচেয়ে দামি বিয়ের তালিকায় যখন মুকেশ অম্বানীর কনিষ্ঠ পুত্র অনন্ত অম্বানী এবং তাঁর পুত্রবধূ রাধিকা মার্চেন্টের নাম ঘোরাফেরা করছে, সেই সময় চর্চায় এলেন আরও এক ভারতীয় শিল্পপতি। আজ থেকে এক দশক আগে কন্যার বিয়ে উপলক্ষে ৫৫০ কোটি টাকা খরচ করেছিলেন তিনি। কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যেই দেউলিয়া হয়ে যান তিনি। পরিবারের কাছে হাত পাততে বাধ্য হন তিনি।
১৯৫৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জন্ম প্রমোদ মিত্তলের। শিল্পপতি লক্ষ্মী মিত্তলের ভাই তিনি। স্টিল প্রস্তুতকারী সংস্থার অধিকর্তা ছিলেন প্রমোদ। হাত খুলে খরচ করা স্বভাব ছিল তাঁর। কিন্তু এই অভ্যাসই কাল হয়ে দাঁড়ায় তাঁর জীবনে।
এক সময় বিশ্বের ধনী শিল্পপতিদের তালিকায় নাম লিখিয়ে ফেলেছিলেন প্রমোদ। গোড়ার দিকে পেশাগত জীবনে চূড়ান্ত সফল ছিলেন তিনি। স্ত্রী, দুই কন্যা এবং এক পুত্র নিয়ে সংসার ছিল তাঁর।
২০১৩ সালে স্পেনের বার্সেলোনায় কন্যা সৃষ্টির বিয়ে দিয়েছিলেন প্রমোদ। সৃষ্টির স্বামী পেশায় ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার। কন্যার বিয়েতে বিলাসিতা এবং আয়োজনের কোনও খামতি রাখেননি তিনি।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, দু’হাত খুলে সৃষ্টির বিয়েতে খরচ করেছিলেন প্রমোদ। বিয়ে উপলক্ষে ভারতীয় মুদ্রায় ৫৫০ কোটি টাকা খরচ করে ফেলেছিলেন তিনি।
২০২০ সালের জুন মাসে লন্ডনের আদালতে প্রমোদকে দেউলিয়া ঘোষণা করা হয়। তবে তার আগে একাধিক বার প্রতারণার অভিযোগ তোলা হয়েছিল প্রমোদের বিরুদ্ধে।
২০০৩ সাল থেকে বসনিয়ার লুক্যাভ্যাক শহরে প্রমোদের সহযোগিতায় একটি কোকিং প্ল্যান্ট চালু হয়। ওই প্ল্যান্টে হাজারখানেক কর্মী কাজ করতেন। প্ল্যান্ট ঘিরেই নাকি চলেছিল আর্থিক প্রতারণা। সেই অভিযোগে ২০১৯ সালে প্রমোদকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
এই প্রসঙ্গে কাজিম সেরহাটলিক নামে এক আইনজীবী জানিয়েছিলেন, নির্দিষ্ট অভিযোগ পেয়ে গিকিল নামে সংস্থার সুপারভাইজারি বোর্ডের প্রেসিডেন্ট প্রমোদ মিত্তলকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। ২০০৩ সালে একটি স্থানীয় সংস্থার হাত ধরে গড়ে ওঠে গিকিল নামের সংস্থাটি।
প্রমোদের পাশাপাশি গিকিল সংস্থার জেনারেল ম্যানেজার পরমেশ ভট্টাচার্য এবং সুপারভাইজ়ারি বোর্ডের এক সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। সরকারি আইনজীবীর দাবি ছিল, ‘‘সংগঠিত অপরাধ করার অভিযোগ ছিল ধৃতদের বিরুদ্ধে। তাঁদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগও ছিল।’’
২০১৩ সাল পর্যন্ত সংস্থার তরফে মোট ১৬ কোটি ৬০ লক্ষ ডলার ঋণ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে সেই ঋণ শোধ করতে পারেনি প্রমোদের সংস্থা।
২০১৯ সালে মোটা অঙ্কের আর্থিক প্রতারণা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে বসনিয়ায় গ্রেফতার করা হয় প্রমোদকে। টাকা শোধ করার নির্দেশ দেওয়া হলে দেখা যায়, তিনি দেউলিয়া।
২০২১ সালের অক্টোবর মাসে ‘প্যান্ডোরা পেপার্স’-এ প্রমোদের নাম ওঠে। প্রমোদ ছাড়াও সেই তালিকায় একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিবিধ অভিযোগ ওঠে।
২০২৩ সালে প্রমোদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে যে, তিনি ‘সংগঠিত দুষ্কৃতী দলকে নেতৃত্ব’ দিয়েছিলেন। এমনকি, সংস্থার মাধ্যমে তিনি বিদেশে এক কোটি ২০ লক্ষ ডলার পাচার করেছিলেন বলেও অভিযোগ।
প্রমোদ আদালতে জানিয়েছিলেন যে, তাঁর কাছে কানাকড়িও নেই। তাঁর কোনও উপার্জনও নেই। বাধ্য হয়ে পরিবারের কাছে হাত পাততে হয় প্রমোদকে। সেই সময়ে প্রমোদের স্ত্রী প্রায় ১২ কোটি টাকা দিয়েছিলেন।
শুধু প্রমোদের স্ত্রী নন, তাঁর শ্যালকও ১২ কোটি টাকা দিয়ে সাহায্য করেছিলেন। পিতৃঋণ শোধ করার জন্য প্রমোদের পুত্রও প্রায় ২৬ কোটি টাকা দিয়েছিলেন।