100 days work

১০০ দিনের বকেয়া মিলবে কবে, উত্তর নেই আরটিআই-এও

২০২১ সালে বিধানসভা ভোটে তৃণমূল ক্ষমতায় ফেরার পর থেকেই একশো দিনের কাজের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে দিল্লি থেকে একাধিক দল রাজ্যে আসে।

Advertisement

সুদেব দাস

রানাঘাট শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৬:৪০
Share:

প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

একশো দিনের কাজে টাকা দিচ্ছে না কেন্দ্র— এই অভিযোগে রাজনৈতিক আন্দোলনের পথ নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। এমন পরিস্থিতিতে রানাঘাটের এক বাসিন্দা তথ্য জানার অধিকার আইনের প্রশ্ন করেছিলেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রককে। জবাবে মন্ত্রক জানিয়েছে, একশো দিনের কাজ বাবদ কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের পাওনা সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকারও বেশি। কিন্তু কেন্দ্রের ‘নির্দেশিকা অমান্য করায়’ তা বন্ধ রাখা হয়েছে। কবে সেই টাকা আদৌ পাওয়া যাবে, তা এই আরটিআই-তে বলার মতো বিষয় নয় বলেই দাবি মন্ত্রকের।

Advertisement

এই তথ্য সামনে আসার পরেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপান-উতোর। রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘প্রান্তিক মানুষের জন্য কেন্দ্রের দেওয়া টাকা লুট করেছে তৃণমূল। তাই এখন ৫০ হাজার কেন পাঁচ লক্ষ লোক নিয়ে ধর্না দিলেও মানুষ জেনে গিয়েছে, তাদের বঞ্চনার জন্য দায়ী তৃণমূল।’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী কার্যত দু’পক্ষকেই দুষে বলেন, ‘‘রাজ্য টাকা লুট করেছে বলে টাকা বন্ধ করে দেওয়া চলবে না। যে গরিব মানুষ কাজ করেছেন, যাঁরা কাজ করতে চাইবেন, তাঁদের সকলকে টাকা দিতে হবে। একই সঙ্গে যারা দুর্নীতি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে যত খুশি ব্যবস্থা হোক।’’ রাজ্যের মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস পাল্টা বলেন, “কত টাকা বাকি আছে, তা সকলে দেখতেই পাচ্ছেন। কেন্দ্রের পাঠানো এত জন পর্যবেক্ষক রাজ্যে ঘুরে গিয়েছেন, তার পরেও কেবল মাত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কেন্দ্র টাকা আটকে রেখেছে।”

নদিয়ার রানাঘাটের স্কুল শিক্ষক সিনথল ঘোষ গত অগস্টে তথ্য জানার অধিকার আইনে (আরটিআই) মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্ম নিশ্চয়তা প্রকল্প নিয়ে চারটি প্রশ্ন রাখেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের কাছে। সেগুলি হল: ১) ওই প্রকল্পে কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের কত টাকা পাওনা আছে? ২) শেষ কবে কত টাকা দেওয়া হয়েছিল? ৩) বকেয়া টাকা কবে দেওয়া হবে? ৪) ১০০ দিনের প্রকল্পের কাজে পশ্চিমবঙ্গ দেশের মধ্যে কততম স্থানে রয়েছে?

Advertisement

গত ১১ সেপ্টেম্বর জবাবি চিঠিতে মন্ত্রক জানিয়েছে: ১) ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ আর্থিক বছর মিলিয়ে রাজ্যের মোট ৫ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। ২) ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি শেষবার টাকা দেওয়া হয়েছিল। ৩) কেন্দ্রের নির্দেশিকা অমান্য করায় মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্ম নিশ্চয়তা আইনের ২৭ নম্বর ধারায় পশ্চিমবঙ্গকে টাকা দেওয়া বন্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু কবে বকেয়া মেটানো হবে, এই-ধরনের প্রশ্ন আরটিআই-এর এক্তিয়ারে পড়ে না। ৪) এই প্রকল্পে রাজ্যের চাহিদা অনুযায়ী টাকা দেওয়া হয়, ফলে কাজের নিরিখে সাফল্য তালিকা তৈরির কোনও অবকাশ নেই।

ঘটনাচক্রে, ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটে তৃণমূল ক্ষমতায় ফেরার পর থেকেই একশো দিনের কাজের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে দিল্লি থেকে একাধিক দল রাজ্যে আসে। প্রাথমিক ভাবে অনেক দলই নানা ধরনের দুর্নীতির খোঁজ পায়। পাশাপাশি, শুভেন্দু অধিকারী-সহ বিজেপির প্রথম সারির বেশ কয়েক জন রাজ্য নেতা দিল্লিতে গিয়ে জানান, টাকা এলেই তৃণমূল নেতারা তা ‘চুরি করবেন’। ২০২২ সালের গোড়া থেকে রাজ্যকে এই খাতে টাকা পাঠানো বন্ধ করে কেন্দ্র।

সম্প্রতি পঞ্চায়েত ভোটে একশো দিনের টাকা আটকে রাখাকেই প্রচারের অন্যতম অস্ত্র করেছিল তৃণমূল। গ্রামের ভোটে সাফল্য পেয়েছে তারা। তার পরেই দিল্লিতে ধর্ণা দিতে রামলীলা ময়দানে অনুমতি চেয়ে সেই শহরের পুলিশের কাছে আবেদন করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। কিন্তু এখনও কবে সেই অনুমতি মিলবে, আদৌ মিলবে কি না, তা স্পষ্ট নয়। এই অবস্থায় সামনে এল আরটিআই থেকে পাওয়া এই তথ্য।

শনিবার রানাঘাটের ঘোষ কলোনির বাসিন্দা সিনথল বলেন, ‘‘১০০ দিনের কাজের উপর গ্রামীণ অর্থনীতি অনেকটাই নির্ভরশীল। হাজার হাজার মানুষ খেটে-খাওয়া মানুষ, যাঁরা ক্ষমতা বা দুর্নীতি কোনও কিছুর সঙ্গেই জড়িত নন, তাঁদের কী অপরাধ?’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘সে জন্যই আরটিআই করেছিলাম। কিন্তু আসল প্রশ্নটারই উত্তর পেলাম না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement