গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
রাজ্য সরকারের পাঠ্য পুস্তকে লেখা না থাকলেও সহায়িকা গ্রন্থে সরাসরি আরএসএস এবং সঙ্ঘের দ্বিতীয় সর-সঙ্ঘচালক গোলওয়ালকারের সম্পর্ক ‘ভুল’ তথ্য দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠল। রবিবার নিজের এক্স (পূর্বতন টুইটার) হ্যান্ডেলে বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য একটি প্রকাশনা সংস্থার বিরুদ্ধে ভুল তথ্য দেওয়ার অভিযোগ এনে পোস্ট করেন। সেখানে তিনি এমন হুঁশিয়ারিও দেন যে, ১৫ দিনের মধ্যে ওই বইয়ে লেখা ‘বিকৃত ইতিহাস’ বদল না করলে মামলা করা হবে।
সোমবার আরএসএসের পূর্ব ক্ষেত্রের প্রচার প্রমুখ জিষ্ণু বসু স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা বিষয়টি নিয়ে আদালতে যাচ্ছেন। তবে ওই প্রকাশক সংস্থার কর্ণধার দেবাঞ্জন মণ্ডল দাবি করেছেন, ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ ভাবে ওই কথাগুলি লেখা হয়নি। আরও অনেক সহায়িকা বইতেও ওই একই তথ্য রয়েছে বলেও তাঁর দাবি।
মূল যে অভিযোগ, তা ওই প্রকাশনা সংস্থার অষ্টম শ্রেণির ইতিহাসের সহায়িকা বইয়ের ‘সাম্প্রদায়িকতা ও দেশভাগ’ নামের অধ্যায়ের কয়েকটি লাইন নিয়ে। সেখানে লেখা হয়েছে ‘‘হিন্দু মহাসভার মতো হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠনের শক্তি বাড়তে থাকে। তা ছাড়া কংগ্রেসে মদনমোহন মালব্যের মত গোঁড়া হিন্দুত্ববাদী নেতাদের কার্যকলাপ বৃদ্ধি পায়। ফলে কংগ্রেসের সঙ্গে অনেক মুসলিম নেতার দূরত্ব বৃদ্ধি পায়।’’ ওই বইয়েই ভারতে ‘সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বৈশিষ্ট্য ও উত্তরের পটভূমি’ শীর্ষক অংশে ‘হিন্দু সাম্প্রদায়িকতা’ নিয়ে একটি আলোচনায় লেখা হয়েছে, ‘‘হিন্দু সংগঠনগুলিও মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করায় সাম্প্রদায়িক রাজনীতির পটভূমি রচিত হয়েছিল। আর্য সমাজ, হিন্দু মহাসভা, আরএসএস প্রভৃতি সংগঠনগুলি হিন্দুধর্ম বিপন্ন বলে প্রচার করে মুসলমানদের প্রতি ঘৃণার পরিবেশ তৈরি করেছিল।’’ এর পরে লেখা হয়েছে, ‘‘বিনায়ক দামোদর সাভারকর, এসএস গোলওয়ালকর (এমএস গোলওয়ালকর) প্রমুখ নেতৃবৃন্দ মুসলমানদের বিরুদ্ধে নানান তথ্য প্রচার করে সাম্প্রদায়িক বিভেদ সৃষ্টি করেছিলেন।’’
এই অংশ নিয়েই সব চেয়ে বেশি বিরোধিতা শমীক ও জিষ্ণুদের। শমীক বলেন, ‘‘হিন্দুদের ইতিহাস এবং সংস্কৃতিকে বিকৃত করে উপস্থাপন করা হয়েছে। অপমান করা হয়েছে পণ্ডিত মদনমোহন মালব্য, বীর সাভারকারের মত ব্যক্তিত্বদের। হিন্দু মহাসভা, আর্য সমাজ, আরএসএসের মতো সংগঠনকে দায়ী করা হয়েছে। বাংলাদেশের মতো এখানেও মগজধোলাই শুরু হয়েছে।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘করোনাকালে বসিরহাট থেকে অন্ধ্রপ্রদেশে কাজ করতে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকরা আরএসএস দফতরে আশ্রয় নিয়েছিলেন। বিভিন্ন সময়ে সেবামূলক কাজে যোগ দেন সঙ্ঘের স্বয়ংসেবকরা। দেশভাগের বিরোধিতাও করেছিল সঙ্ঘ। সেই সঙ্ঘ সম্পর্কে এই ধরনের ভুল ধারণা স্কুলপড়ুয়াদের মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত মানা যায় না।’’
তবে এর পিছনে আদৌ কোনও চক্রান্ত বা রাজনীতি নেই বলেই দাবি প্রকাশক সংস্থার কর্ণধার দেবাঞ্জনের। তিনি বলেন, ‘‘মধ্যশিক্ষা পর্ষদের যে ইতিহাস বই, তার সিলেবাসের মধ্যে থেকেই আমাদের সহায়িকা বই। এর মধ্যে কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই।’’ তবে একই সঙ্গে তিনি এ-ও মেনে নেন যে, সরকারি পাঠ্যপুস্তকে কোথাও আরএসএস বা গোলওয়ালকারের নামোল্লেখ নেই। তাঁর কথায়, ‘‘অনেক সহায়িকা বইয়েই এই লেখাগুলি পাবেন। প্রশ্নের উত্তর লেখার সময়ে বিভিন্ন উদাহরণ দিতে হয় পড়ুয়াদের। সেই হিসাবেই এগুলি দেওয়া হয়েছে। কারও ভাবাবেগে আঘাত করার জন্য নয়।’’
প্রসঙ্গত, মূল পাঠ্যপুস্তকে এই অধ্যায়ের প্রশ্নমালায় একটি প্রশ্ন রয়েছে ‘হিন্দু পুনরুজ্জীবনবাদী আন্দোলন’ নিয়ে। সাম্প্রদায়িক মনোভাব তৈরিতে ওই সব আন্দোলনগুলির ভূমিকা কী ছিল, সে প্রসঙ্গও রয়েছে। তারই উত্তর দিতে গিয়ে ওই সহায়িকা বইয়ে ‘আপত্তিকর’ কথা লিখেছেন বলে অভিযোগ। তবে দেবাঞ্জনের দাবি, ‘‘শুধু আমাদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনার কোনও মানে হয় না। একই কথা অন্য বইয়েও তো রয়েছে!’’ সঙ্ঘের পক্ষে জিষ্ণু বলেন, ‘‘আমরা যে বইটি পেয়েছি, সেই প্রকাশনা সংস্থার বিরুদ্ধেই আইনি পথে যাচ্ছি। আর কোন কোন বইয়ে এ সব রয়েছে, সেটা বরং তাঁরা আদালতে গিয়ে বলবেন!’’