Dana Effect in West Bengal

‘ডেনা’র প্রভাবে বৃষ্টি, চাষের জমিতে জল থৈ থৈ, মাথায় হাত কৃষকদের! ভাঙল কিছু কাঁচা বাড়িও

লাগাতার বৃষ্টির জেরে মাথায় হাত কৃষকদের। বহু চাষের জমি জলের তলায়। ফলে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা। দুই মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনায় চাষের ক্ষতি বেশি হওয়ার সম্ভাবনা।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২৪ ১৬:৩৬
Share:

বিভিন্ন জেলায় ক্ষতির মুখে চাষের জমি। ভেঙেছে কাঁচাবাড়ি। —নিজস্ব চিত্র।

শক্তি হারিয়েছে ঘূর্ণিঝড় ‘ডেনা’। তবে ‘ডেনা’র আশঙ্কা কাটতেই বাংলার বিভিন্ন জেলায় শুরু হয়েছে অবিরাম বৃষ্টি। শুক্রবার সকাল থেকেই বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি চলছে। লাগাতার বৃষ্টির জেরে মাথায় হাত কৃষকদের। বহু চাষের জমি জলের তলায়। ফলে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা। কৃষকদের কথায়, ধান এবং শীতকালীন ফসলে প্রভাব ফেলতে পারে এই অতিরিক্ত বৃষ্টি। দুই মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনায় চাষের ক্ষতি বেশি হওয়ার সম্ভাবনা।

Advertisement

ঘূর্ণিঝড় ‘ডেনা’ বৃহস্পতিবার রাতে ওড়িশার স্থলভাগে আছড়ে পড়েছে। শুক্রবার সকালে তার ‘ল্যান্ডফল’ প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। উপকূলে ঝড়ের দাপট থাকলেও দক্ষিণবঙ্গে সে ভাবে প্রভাব ফেলতে পারেনি ‘ডেনা’। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাত থেকেই ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। সেই বৃষ্টিই চিন্তায় ফেলেছে কৃষকদের। বসিরহাটের বাদুড়িয়া এলাকার অধিকাংশ চাষের জমিতে ইতিমধ্যেই জল জমেছে। বৃষ্টি না কমায় জলের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পেতে পারে এমন আশঙ্কা করছেন অনেকেই। ফলে শীতকালীন ফসলের চাষ ক্ষতির মুখে পড়েছে।

বাদুড়িয়ার কৃষক আরিজুল মণ্ডলের কথায়, ‘‘অতি বৃষ্টিতে যা ক্ষতি হল, তা সামাল দেব কী ভাবে জানি না। প্রায় পাঁচ বিঘা জমিতে চাষ হয় আমাদের। কোথাও বাঁধাকপি, কোথাও ফুলকপি, বেগুন, সিম। সব জলের তলায়।’’ মহাজনের থেকে টাকা ধার নিয়ে চাষ করেছিলেন আরিজুল। বৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতি হওয়ায় চিন্তায় পড়েছেন তিনি। লাভ তো দূরঅস্ত, কী ভাবে ধারের টাকা মেটাবেন, তা ভেবে পাচ্ছেন না আরিজুল। শুধু আরিজুল নয়, এমন অবস্থা গ্রামের অনেক কৃষকেরই। মহম্মদ বিল্লাহ হোসেন নামে আর এক কৃষকের জমির পরিমাণ আরও বেশি। ১০ বিঘা জমিতে শুধু ধান চাষই করেন তিনি। বৃষ্টিতে সেই ধানজমিতে জল থৈ থৈ করছে। এত জল ধানের জন্য ক্ষতিকর, এমনই বলছেন বিল্লাহ। চাষের উপরই সংসার চলে তাঁর। আবেদন, সরকার তাঁদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করুক।

Advertisement

পশ্চিম মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকার ছবিও প্রায় একই রকম। গত মাসেই ডিভিসি জল ছাড়ায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল এই জেলায়। সেই ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতেই আবার বৃষ্টি। বাংলা-ওড়িশার সীমানা লাগোয়া পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাঁতন এলাকার কৃষকেরা সবচেয়ে বেশি চিন্তা ধানচাষ নিয়ে। কৃষকদের কথায়, ‘‘এই বৃষ্টিতে আমন ধান চাষে ব্যাপক ক্ষতি হল। বিঘা বিঘা জমিতে ধানগাছ শুয়ে পড়েছে।’’

পুজোর আগে বন্যায় হুগলির আরামবাগ মহকুমায় বেশির ভাগ ধান জমি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সব্জিখেতও ছিল জলের নীচে। সেই ক্ষতি সামলে উঠতে না উঠতেই আবার বৃষ্টিতে চাপে পড়েছেন সেখানকার কৃষকেরা। রাত থেকে চলা বৃষ্টিতে ধান এবং সব্জির জমিতে জল জমতে শুরু করেছে। বেশ কিছু জমিতে ফলন্ত ধানগাছ শুয়ে পড়েছে। যে ধানে পাক ধরেছে, সেই ধান জলে ডুবে থাকলে ক্ষতির আশঙ্কা। জেলা কৃষি উপঅধিকর্তা মৃত্যুঞ্জয় মারদানা জানিয়েছেন, হুগলি জেলায় চলতি বছর খারিফ মরসুমে ১ লক্ষ ৮৭ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। ‘ডেনা’র প্রভাবে এখনও বৃষ্টি অব্যাহত। বৃষ্টি কমলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ স্পষ্ট হবে।

পূর্ব বর্ধমানেও বিঘের পর বিঘে চাষের জমি নষ্ট হয়েছে। জেলা কৃষি আধিকারিক নকুল চন্দ্র মাইতি জানান, এ বছর ৩ লক্ষ ৭৭ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে গোবিন্দভোগ ধানের চাষ হয়েছে ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে। জেলার মূলত খণ্ডঘোষ, রায়না ১ ও ২ নম্বর ব্লকেই গোবিন্দভোগের চাষ হয়। সেখানেই বৃষ্টির প্রভাব বেশি পড়েছে।

শুধু ফসল নয়, অতিবৃষ্টিতে ক্ষতির মুখে পড়েছে ফুল এবং মাছ চাষও। পূর্ব মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ এলাকায় ধানচাষ হয়। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে সেই ধানচাষে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। পাশাপাশি, বিভিন্ন ফুলচাষও ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। বৃষ্টিতে চাষের ক্ষতি নিয়ে উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কৃষকদের ক্ষতি হয়েছে কতটা, তা যাচাই করতে সমীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তবে ‘ডেনা’র আতঙ্কে অনেক কৃষকই আগেভাগে ফসল কেটে নিয়েছিলেন। তাতে ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হয়েছে কিছুটা।

দুর্যোগের আবহে বেশ কিছু কাঁচা বাড়ি ভেঙেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হুগলিতে। জানা গিয়েছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার মন্দিরবাজার এলাকায় বেশ কয়েকটি কাঁচা বাড়ি ভেঙে পড়েছে। ঘরছাড়া বাসিন্দারা। হুগলির পান্ডুয়াতেও একই চিত্র। সেখানকারও বেশ কয়েকটি কাঁচা বাড়ি ভেঙেছে। পান্ডুয়ার বিডিও শ্রাবন্তী বিশ্বাস জানান, কয়েকটি ঘটনার খবর পেয়েছি। লোক পাঠিয়ে বিষয়টা দেখা হচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement