এই যন্ত্রের সাহায্যে রোগীদের সংস্পর্শে না এসেই রোগের লক্ষণ বুঝে চিকিৎসায় সুবিধা হবে। —নিজস্ব চিত্র।
করোনাকালে রোগীদের থেকে দূরত্ব বজায় রেখেই এ বার বহু রোগের প্রাথমিক লক্ষণ জেনে যেতে পারেন চিকিৎসকেরা। সৌজন্যে, হুগলি জেলার রিষড়া পুরসভার কর্মী অসিতাভ গঙ্গোপাধ্যায়ের তৈরি ‘টেলি-স্পন্দন’ নামক যন্ত্র।
প্রশাসন সূত্রে খবর, অসিতাভর তৈরি এই যন্ত্রের সাহায্যে রিষড়া পুরসভার নার্সিং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গ্রিন ভলান্টিয়ার্স রোগীর বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাঁদের রোগের হালহকিকত সম্পর্কে তথ্য তুলে দিতে পারবেন চিকিৎসকদের কাছে। ফলে রোগীদের সরাসরি সংস্পর্শে না এসেই তাঁদের রোগের লক্ষণ বুঝে চিকিৎসায় সুবিধা হবে।
রবিবার রিষড়া পুরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ডের মেঘনাথ সাহা সরণিতে বিধায়ক অরিন্দম গুঁইয়ের উপস্থিতিতে শিশুদের করোনা চিকিৎসায় একটি সহায়তা কেন্দ্র চালু হয়েছে। সেখানে এই যন্ত্রেরও উদ্বোধন করা হয়।
‘টেলি-স্পন্দন’ নামক এই যন্ত্র তৈরি করেছেন রিষড়া পুরসভার কর্মী অসিতাভ গঙ্গোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
করোনাকালে টেলি-মেডিসিনের গুরুত্ব যথেষ্ট বেড়েছে। তবে শুধুমাত্র রোগী বা তাঁর পরিবারের কথা শুনে চিকিৎসায় অনেক সময়ই সমস্যা হতে পারে। অসিতাভর দাবি, স্টেথোস্কোপের সঙ্গে মোবাইল সংযুক্ত করে এই যন্ত্রের সাহায্যে রোগীর গলা বা জিভের ছবি দেখা যাবে। শোনা যাবে ফুসফুস অথবা হৃদ্যন্ত্রের শব্দও। এতে ছবিও যেমন উঠবে, তেমনই শব্দও রেকর্ড করা যাবে মোবাইলে। ফলে করোনা বা অন্য কোনও রোগে আক্রান্তদের থেকে দূরত্ব বজায় রেখেই রোগের প্রাথমিক তথ্য হাতের মুঠোয় চলে আসবে চিকিৎসকদের। অসিতাভর কথায়, “অক্সিজেন স্যাচুরেশন মাপতে যেমন পালস অক্সিমিটারের সাহায্য নেওয়া হয়, তেমনই কোভিড আক্রান্তের হৃদ্যন্ত্র বা ফুসফুসের শব্দ, গলার ছবি দেখে দূর থেকে চিকিৎসা করতে পারবেন ডাক্তারেরা। সাধারণ মানুষ এটি সহজেই পেতে পারেন। কোভিডের উপসর্গযুক্ত বা রোগীদের বাড়িতে গিয়ে অক্সিজেন প্রেসার মাপার পাশাপাশি ‘টেলি-স্পন্দন’-এর সাহায্যে রোগের তথ্য সংগ্রহের কাজ করা যাবে।”
এই যন্ত্রের মাধ্যমে অক্সিজেন প্রেসার মাপার-সহ একাধিক তথ্য সংগ্রহ করা যাবে। —নিজস্ব চিত্র।
রিষড়া পুরসভার সূত্রে খবর, পুরসভার অভিভাবকত্বে যে গ্রিন ভলান্টিয়ার্স কাজ করছেন, মূলত তাঁরাই এ যন্ত্র ব্যবহার করে রোগীর তথ্য সংগ্রহের কাজ করবেন। এটি তৈরি করতে খরচ হয়েছে প্রায় দু’হাজার টাকা। তবে নিজের জন্য বা বাণিজ্যিক ভাবে এর ব্যবহারে কোনও ব্যক্তি আগ্রহী হলে তাঁকে সাহায্য করতেও রাজি অসিতাভ।
অসিতাভর তৈরি এ যন্ত্রের প্রশংসা করেছেন জেলার চিকিৎসকদের একাংশ। রিষড়ার চিকিৎসক হর্ষবর্ধন বন্দোপাধ্যায় বলেন, “করোনাকালে এ যন্ত্রটি খুবই কার্যকরী হবে। অনেক সময় কোভিড রোগীদের কাছে আমরা পৌঁছতে পারি না। ফলে রোগীর অক্সিজেন স্যাচুরেশন প্রেসার বা হার্টের অবস্থা অজানা থাকে। তবে রোগীদের বাড়িতে ভলান্টিয়ার্স গিয়ে এ যন্ত্রের মাধ্যমে তাঁদের সে সম্পর্কিত তথ্য আমাদের কাছে পাঠালে চিকিৎসা করতে সুবিধা হবে। কোন রোগী কতটা সিরিয়াস, তা বুঝতেও কাজে দেবে এ যন্ত্র।”