গ্রাফিক — শৌভিক দেবনাথ।
অবসরপ্রাপ্ত সরকারি আমলাকে কোনও সরকারি কাজে নতুন করে নিয়োগ করতে হলে এখন থেকে ভিজিল্যান্স ছাড়পত্র লাগবে। ওই সরকারি আমলা যে সংস্থার হয়ে, বা যে যে সংস্থার হয়ে, চাকরি করেছেন, তাদের ভিজিল্যান্স ছাড়পত্র মেলার পরেই তাঁকে পুনর্নিয়োগ করা যাবে। বৃহস্পতিবার এমনই একটি নির্দেশিকা জারি করল কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশন।
কমিশনের এই নির্দেশিকার লক্ষ্য কেন্দ্রের অল ইন্ডিয়া সার্ভিসের গ্রুপ ‘এ’ পদমর্যাদার অবসরপ্রাপ্ত অফিসাররা। এ ছাড়া কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণে থাকা অন্য কোনও সংস্থার সমতুল মর্যাদার অফিসারদের ক্ষেত্রেও এই একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে। কমিশন জানিয়েছে, এই অফিসারদের চুক্তির ভিত্তিতে বা পরামর্শদাতা হিসেবে পুনর্নিয়োগ করতে হলে ভিজিল্যন্স ছাড়পত্র লাগবে।
বস্তুত গত সোমবারই রাজ্যের অবসরপ্রাপ্ত মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা পদে পুনর্নিয়োগ করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। ঘটনাচক্রে তার ৩ দিন পর জারি হল কেন্দ্রীয় সংস্থার তরফে এই নতুন নির্দেশিকা। কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশন জানিয়েছে, কোনও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি অফিসারকেই ভিজিল্যান্সের ছাড়পত্র ছাড়া পুনর্নিয়োগ করা যাবে না।
কমিশন ওই নির্দেশিকায় জানিয়েছে, ‘বিভিন্ন সময়ে বহু সরকারি সংস্থাকে দেখা গিয়েছে অবসরপ্রাপ্ত অফিসারদের পেশাদারি যোগ্যতাকে কাজে লাগানোর জন্য তাদের চুক্তির ভিত্তিতে বা পরামর্শদাতা হিসেবে নিয়োগ করা হচ্ছে। অনেকক্ষেত্রেই এ ব্যাপারে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠছে। অবার যে সমস্ত অফিসারদের অতীতে মামলা হয়েছে, তাদেরও এধরনের সরকারি পদে নিয়োগের রেকর্ড রয়েছে। এ নিয়ে অকারণ অভিযোগ এবং জটিলতা এড়াতেই এই সিদ্ধান্ত।
শুধু তা-ই নয়, কমিশন জানিয়েছে, কোনও সরকারি বা বেসরকারি পদে যদি অবসরপ্রাপ্ত সরকারি আমলাকে নিয়োগ করার কথা ভাবা হয়, তবে সেই সুযোগ বিশেষ একজনকে বেছে নিয়ে দেওয়া যাবে না। নিয়োগে স্বচ্ছতা আনতে হবে। সরকারি ক্ষেত্রে তার বিজ্ঞাপনও দিতে হবে। বাকিদেরও ওই পদে আবেদনের সুযোগ দিতে হবে। কমিশন জানিয়েছে, সরকারি কাজের স্বচ্ছতা বজায় রাখতেই এই সিদ্ধান্ত। কেন না এর আগে বহু বারই এই ধরনের নিয়োগে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে।
প্রসঙ্গত এখন যিনি রাজ্যের ভিজিল্যান্স কমিশনার, সেই প্রদীপ ব্যাস নিজেও একজন অবসরপ্রাপ্ত আইএফএস অফিসার। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৫ বছরের চুক্তিতে তাঁকে এই পদে নিয়োগ করেছিলেন রাজ্যপাল।
বৃহস্পতিবারের নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, সরকারি অফিসার অবসর নেওয়ার আগে যে সংস্থার হয়ে কাজ করেছেন, ছাড়পত্র নিতে হবে তাদের থেকেই। সেক্ষেত্রে অবসর নেওয়ার আগে যদি ওই অফিসার একাধিক সংস্থার হয়ে কাজ করে থাকেন, তবে গত ১০ বছরে যে যে সংস্থার হয়ে তিনি কাজ করেছেন, তাদের প্রত্যেকের থেকে নিতে হবে ছাড়পত্র।
কমিশন জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট সংস্থার থেকে যদি ১৫ দিনের মধ্যে জবাব না আসে তবে তাদের আরও একবার বিষয়টি মনে করিয়ে দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু যদি প্রথম চিঠি পাঠানোর ২১ দিনের মধ্যে কোনও জবাব না আসে তবে ধরে নিতে হবে অবসরপ্রাপ্ত অফিসারকে ভিজিল্যান্স ছাড়পত্র দেওয়া হয়নি। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশনের ভিজিল্যান্স ছাড়পত্র চেয়েও চিঠি পাঠানো যেতে পারে বলে জানিয়েছে কমিশন। নতুন কাজে যোগ দেওয়ার আগে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি অফিসারকে এই শর্ত পালন করতে হবে।