প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর ‘ব্যক্তিগত’ ইচ্ছাকে সম্মান জানিয়েও ভবানীপুর উপনির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রার্থী দিতে চায় দক্ষিণ কলকাতার কংগ্রেস। সম্প্রতি অধীর ভবানীপুর আসনে প্রার্থী না দেওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন। বিধানসভা ভোটে বিপর্যয়ের কারণ জানতে গত শনিবার রাজ্যের নেতাদের নিয়ে বিধান ভবনে বৈঠক করেন তিনি। তার পরেই অধীর বলেছিলেন, ‘‘এআইসিসি নেতৃত্বকে জানাইনি। এটা আমার ব্যক্তিগত মত যে, একজন তো মুখ্যমন্ত্রী হয়েই আছেন। কংগ্রেস প্রার্থী না দিলেও লড়াইয়ের অন্য ক্ষেত্র তো রয়েছেই।’’ কিন্তু সভাপতির ‘ব্যক্তিগত’ অভিমত সত্ত্বেও উপনির্বাচনে তৃণমূল নেত্রীকে খোলা ময়দান ছাড়তে নারাজ দক্ষিণ কলকাতা জেলা কংগ্রেস নেতৃত্ব।
দক্ষিণ কলকাতা জেলা কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ প্রসাদের বক্তব্য, ‘‘ভবানীপুর বিধানসভা প্রার্থী দেওয়ার প্রশ্নে প্রদেশ সভাপতির ব্যক্তিগত মতামতকে সন্মান দিয়েই বলছি, কংগ্রেসের সংগঠন মূলত নির্বাচনকেন্দ্রিক । ১৯৯৮ সালে দল বিভক্ত হওয়ার পর থেকে কলকাতায় বিধায়ক, সাংসদ, কাউন্সিলর কেউ নেই । তা-ও প্রতিবার প্রার্থী দিয়ে লড়াই করি জেতার জন্য। ভোট উদ্ধারের চেষ্টা না করে। যে কোনও উপনির্বাচনেই লড়াইয়ে সরকারি দলই অ্যাডভান্টেজ পেয়ে থাকে। ভবানীপুরেও না হয় পাবে। কিন্তু দ্বিতীয় স্থানে থাকা বিজেপি-কে পিছনে ফেলে কংগ্রেসকে এগিয়ে রাখব না কেন ? কেন ভোট উদ্ধারের চেষ্টা করব না কেন?’’ প্রদীপের আরও বক্তব্য, ‘‘ইতিমধ্যেই বালিগঞ্জ হাতছাড়া হয়েছে। ভবানীপুর হাতছাড়া করা উচিত হবে না । মনে হয়, আমরা প্রদেশ সভাপতিকে সেটা বোঝাতে সক্ষম হব।’’
প্রসঙ্গত, মমতাকে আগামী ৫ নভেম্বরের মধ্যে উপনির্বাচনে জিতে সাংবিধানিক শর্ত পূরণ করতে হবে। তিনি সেই উপনির্বাচনে লড়বেন ভবানীপুর আসন থেকে। তাই গত ২১মে ভবানীপুর বিধানসভা থেকে ইস্তফা দিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। তাঁর ছেড়ে যাওয়া আসনেই প্রার্থী হবেন মমতা। বিরোধী জোটের সমীকরণে ভবানীপুর আসন কংগ্রেসের ভাগে পড়েছিল। ২০১৬ সালে দক্ষিণ কলকাতা লোকসভার যে তিনটি আসন কংগ্রেসকে ছেড়ে দিয়েছিল বামফ্রন্ট, তাতে ভবানীপুরের সঙ্গে ছিল রাসবিহারী ও বালিগঞ্জ। কিন্তু এবারের বিধানসভা নির্বাচনে ভবানীপুর ও রাসবিহারী আসন কংগ্রেসকে ছেড়ে দিলেও বালিগঞ্জে লড়েছিলেন সিপিএমের ফুয়াদ হালিম। তাই দক্ষিণ কলকাতা জেলা কংগ্রেস নেতৃত্ব মনে করছেন, ভবানীপুরে কংগ্রেস প্রার্থী দিতে না চাইলে শূন্যস্থান পূরণ করতে প্রার্থী দিতে পারে সিপিএম। তাতে বালিগঞ্জের পর দক্ষিণ কলকাতা থেকে কংগ্রেসের হাতছাড়া হবে ভবানীপুর আসনটিও। সেই ভাবনা থেকেও জোটের অঙ্ক বুঝিয়ে ভবানীপুরে প্রার্থী দেওয়ার বিষয়ে প্রদেশ সভাপতি অধীরকে রাজি করাতে চান দক্ষিণ কলকাতা জেলা কংগ্রেসের নেতারা।