Darjeeling

‘মাটি বসে যাচ্ছে, মেঝে বসে যাচ্ছে, ছিটকিনির দোষ কী!’ জোশীমঠ-ভীতি দার্জিলিঙের তিনধারিয়ায়

গত ১০ বছরে এলাকার জনসংখ্যা বেড়েছে ছ’হাজারের উপরে। এলাকায় মাটির নীচে কয়লাও রয়েছে। এলাকাবাসীর একাংশ তা তুলতেন। এমনিতেই এই জায়গা ভূপ্রাকৃতিক ভাবে ‘সিঙ্কিং জ়োন’ বলে চিহ্নিত।

Advertisement

সৌমিত্র কুণ্ডু

তিনধারিয়া (দার্জিলিং) শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০২৩ ০৭:১০
Share:

তিনধারিয়া বাজারে বসে গিয়েছে মাটি। বাড়িতে ধরছে ফাটল। নিজস্ব চিত্র।

‘‘দরজা, জানলার ছিটকিনি কিছু দিন অন্তর লাগে না। নতুন করে তা ঠিক করতে হয়’’, বলছিলেন রাজবাড়ি পাড়া, বাজার এলাকার বাসিন্দা বিকাশ সুব্বা, দীনেশ কাঙ্কানিরা। কেন? সমস্বরে জবাব আসে, ‘‘মাটি বসে যাচ্ছে। মেঝে বসে যাচ্ছে। ছিটকিনির আর দোষ কী?’’ দার্জিলিং জেলার তিনধারিয়ার বাসিন্দাদের মুখে এখন জোশীমঠের প্রসঙ্গ। বিকাশ সুব্বা, নইমুদ্দিন আনসারিদের কথায়, ‘‘এখনও এই এলাকার মাটি বসছে। বাড়িতে, দোকানে ফাটল ধরছে। জোশীমঠের দশায় আমরা চিন্তিত। প্রশাসনের তরফেও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা দরকার।’’

Advertisement

৫৫ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে তিনধারিয়া বাজারে নেমে গিয়েছে যে রাস্তা, গত কয়েক বছরে সেখানে মাটি বসে সিঁড়ির মতো ধাপ তৈরি হয়েছে। লাগোয়া ‘গার্ড ওয়াল’-এর ফাটল বাড়ছে। তা ছাড়া, স্থানীয় সূত্রের দাবি, গত ১০ বছরে এলাকার জনসংখ্যা বেড়েছে ছ’হাজারের উপরে। এলাকায় মাটির নীচে কয়লাও রয়েছে। এলাকাবাসীর একাংশ তা তুলতেন। এমনিতেই এই জায়গা ভূপ্রাকৃতিক ভাবে ‘সিঙ্কিং জ়োন’ (ক্রমশ বসে যাওয়া এলাকা) বলে চিহ্নিত। কয়লা তোলায় বিপদ বেড়েছে। এলাকাকে বিপদের হাত থেকে বাঁচাতে বছর দশেক আগে ‘গ্রামকল্যাণ সমিতি’ গড়ে ওঠে। সমিতির সম্পাদক প্রমোদ থাপার কথায়, ‘‘অবৈধ কয়লা তোলা হলে বিপদ আরও বাড়বে। তাই প্রচার চালিয়ে মানুষকে সচেতন করি। কয়লা তোলা কার্যত বন্ধ করা গিয়েছে। তবে বাসিন্দাদের আরও সচেতন হওয়া দরকার।’’

দার্জিলিং হিমালয়ান রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, তিনধারিয়ায় রেলের ‘ওয়ার্কশপ’ এলাকায় বড় ধস নেমেছে আগে। ১৭ মাইলে মাটি বসে যাওয়ায়, কয়েক বছর পর পর রেল লাইন তুলে ঠিক করতে হয়েছে। পরিবেশবিদ তথা উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান সুবীর সরকার বলেন, ‘‘জোশীমঠের সঙ্গে এই এলাকার অনেক মিল। তবে সেখানে গোটা উপত্যকা বসে গিয়েছে। ততটা না হলেও, এখানেও মাটি বসছে। বসে যাবে। ধস হবে। তিনধারিয়া দার্জিলিং পাহাড় তো বটেই, পূর্ব হিমালয় অঞ্চলে সব চেয়ে বেশি ধস এবং মাটি বসে যাওয়ার প্রবণতা থাকা অঞ্চল।’’

Advertisement

গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন-এর চিফ এগজ়িকিউটিভ অনীত থাপার বক্তব্য, ‘‘ধস এবং মাটি বসে যাওয়ার প্রবণতা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে সমীক্ষা হয়েছে। আগের চেয়ে পরিস্থিতি কিছুটা ভাল। তবে জোশীমঠের ঘটনার প্রেক্ষিতে রাজ্য সরকারকে এই এলাকার বিষয়টি বিশদে জানাব।’’ জেলাশাসক এস পুন্নমবলমের আশ্বাস, ‘‘তিনধারিয়ার বিষয়টি খোঁজ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলব।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement