NRC

‘বাপুকে ৩ গুলি সিএএ-এনপিআর-এনআরসি’ 

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৪:৩২
Share:

হুড-খোলা গাড়িতে পার্ক সার্কাসের পথে শাহিন বাগের বিলকিস দাদি। শুক্রবার। ছবি: সুদীপ ঘোষ

সভা ডাকা হয়েছিল শুক্রবার বেলা দেড়টায়। সব কিছু মিটতে সন্ধ্যা ৭টা। তখনও থিকথিক করছে পার্ক সার্কাসের মাঠ। অনুচ্চ চেহারার ক্ষীণকণ্ঠ বৃদ্ধার এমনই চৌম্বকশক্তি!

Advertisement

ঘণ্টা চারেক মঞ্চে বসে বা শোভাযাত্রায় দাঁড়িয়েও অদম্য শাহিন বাগের অশীতিপর বিলকিস দাদি। ‘‘আপনি কি থকে গিয়েছেন,’’ পাশ থেকে জানতে চেয়ে মৃদু বকুনি খেলেন গাঁধীর পুতি তুষার গাঁধী। সহাস্যে তাঁকে থামিয়ে ঘরোয়া লব্জেই কলকাতাকে শাহিন বাগ যেতে বললেন দাদি। শাহিন বাগের ‘বিরিয়ানি-ভোজ’ নিয়ে নিন্দুক তথা বিজেপি নেতাদের জবাব দিয়েছেন কলকাতার মঞ্চে। বলেছেন, ‘‘আমরা তো নিজের দেশে বিরিয়ানি খাচ্ছি। আপনাদের মতো পাকিস্তানে বিরিয়ানি খেতে যাই না!’’ শুনে কলকাতা বলেছে, ‘বুঝেগি নফরত কি আগ, শাহিন বাগ শাহিন বাগ’!

সাধারণদর্শন এক বৃদ্ধাকে হুড-খোলা এসইউভি-তে চাপিয়ে মল্লিকবাজার থেকে পার্ক সার্কাস নিয়ে যেতেই গলদ্‌ঘর্ম কর্মকর্তারা। গাড়ি ঘিরে ‘দেশ কি দাদির’ নামে মুহুর্মুহু জিন্দাবাদ ধ্বনি, দাদির সঙ্গে নিজস্বী তোলার হিড়িক। সিএএ বা সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের চালিকাশক্তি কে বা কারা— বুঝিয়ে দিয়েছে এই দৃশ্যই। পরে মঞ্চে পার্ক সার্কাসের অবস্থানের আহ্বায়ক আসমত জামিলের ব্যাখ্যা, ‘‘এ হল গৃহবধূদের সঙ্গে গৃহমন্ত্রীর লড়াই।’’ সন্ধ্যার পরে বলতে উঠে উত্তরপ্রদেশের দেহাতি হিন্দিতে দাদি কখনও নরেন্দ্র মোদী, কখনও অমিত শাহকে নিয়ে ঠাট্টা করেছেন। আবার কখনও মোদী সরকারের নিষ্ঠুরতা ও ঘৃণার রাজনীতির নিন্দা করেছেন সরল ভাষায়। শাহিন বাগে তাঁর সহযোগী সোনু ওয়ারসি, শোয়েব আখতারদের কথায়, ‘‘শাহিন বাগ মানে অহিংসার লড়াই। সংবিধান রক্ষার লড়াই।’’ সিএএ-র প্রতিবাদে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকার জন্যও ঋণী থাকার কথাই বললেন শাহিন বাগের যোদ্ধারা। তুষারও বলেছেন, ‘‘মমতা দেশের ভাল, সবার ভাল বোঝেন। তাঁর হাত মজবুত করাই উচিত।’’

Advertisement

শহর-মফস্সলের নানা প্রান্ত থেকে আসা মিছিলের ভিড়ে মঞ্চে জাতির জনকের প্রপৌত্র তুষার এবং সংবিধান প্রণেতা বাবাসাহেব ভীমরাও অম্বেডকরের পৌত্র রাজরত্ন অম্বেডকরের সহাবস্থানও যেন ইতিহাসের মহান পরম্পরার স্বাক্ষর। তুষার মনে করালেন, ১৯৪৭-এর ১৫ অগস্ট দিল্লিতে উৎসব থেকে দূরে শান্তিবার্তা দিতে কলকাতায় পড়ে ছিলেন গাঁধী। রাজরত্ন বললেন, ‘‘সংবিধান-প্রণেতাকে সংসদে পাঠিয়েছিল বাংলাই।’’ দু’জনেরই এক সুর, সিএএ-এনআরসি আদতে গরিব এবং দলিত-বিরোধী পদক্ষেপ। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড-সহ বিভিন্ন দেশে ঘুরে এর বিরুদ্ধে সজাগ-সচেতন করার কাজ করছেন রাজরত্ন। বললেন, ‘‘রাষ্ট্রপুঞ্জেও এর বিরুদ্ধে দরবার করছি আমরা। সঙ্ঘ নয়, অম্বেডকরের ভারতকে বাঁচিয়ে রাখুন।’’ হিন্দু, খ্রিস্টান, শিখ, দলিত সংগঠনের প্রতিনিধিতে ভরা মঞ্চে ঘৃণা ও দাঙ্গার রাজনীতির বিরুদ্ধেও আওয়াজ উঠেছে। তুষার বললেন, ‘‘১৯৮৪-র দিল্লি, ১৯৯৩-এর মুম্বই, ২০২০-র দিল্লি— সব দাঙ্গাই সরকার করিয়েছে। সরকারি নথি কাজে লাগিয়েই ভিন্‌ধর্মীদের খোঁজা হয়েছে। তাই অহেতুক বেশি তথ্য দেবেন না।’’ সিএএ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘এই প্রথম একটা সরকার হিন্দুদের মিথ্যা বলে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান থেকে এসেছি দাবি করে নাগরিকত্ব রক্ষা করতে শেখাচ্ছে।’’ এনপিআর কর্মসূচিরও বিরোধিতা করে কাগজ দেখাতে নিষেধ করেন তুষার। গাঁধীর ঐক্য এবং অহিংসার মন্ত্রেই আস্থা রাখতে বলেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘বাপুর বুকে তিনটি গুলি বিঁধেছিল। এনপিআর, এনআরসি, সিএএ হল— ভারতের বুকে তিনটি গুলি।’’ ইতিহাসের এই শিক্ষা আর শাহিন বাগের উত্তাপে নিজেকে সেঁকে নিল কলকাতা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement