আবাস যোজনার বাড়ি। — ফাইল চিত্র।
কোথাও তৃণমূলের জেলা সভাধিপতির বোন তো কোথাও বিজেপি বিধায়কের স্ত্রী। আবাস যোজনায় এমনই নামের বিষয় নিয়মিত সামনে আসছে। সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলির পক্ষ থেকে সেই নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়ারও আবেদন করা হচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, নাম উঠেছিল কী ভাবে?
প্রশাসন সূত্রের খবর, নদিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি রিক্তা কুণ্ডুর বোন মুক্তি কুণ্ডুর নাম ছিল আবাস প্লাসের তালিকায়। গত মাসেই সেই নাম তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার আবেদন করা হয়েছে। আবার বাঁকুড়ার সোনামুখীর বিজেপি বিধায়ক দিবাকর ঘরামির স্ত্রী প্রতিমা ঘরামির নামও তালিকায় রয়েছে। যেমন রয়েছে বাঁকুড়াই জগদ্দলা ১ পঞ্চায়েতের প্রধান সুশান্ত শীটের বাবার নামও।
নদিয়ার শান্তিপুর ব্লকের ফুলিয়া টাউনশিপ পঞ্চায়েতের বাসিন্দা রিক্তা কুণ্ডু শুধু জেলা সভাধিপতি নন, মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদকও। তাঁর বোন মুক্তি স্বামী-সন্তান নিয়ে দীর্ঘদিন বাপের বাড়িতেই থাকেন। ২০১৬ সাল নাগাদ আবাস যোজনায় আবেদন করেন মুক্তি। সম্প্রতি তা অনুমোদিত হয়। প্রকাশিত তালিকায় তাঁর নাম রয়েছে। রিক্তা কুণ্ডুর বক্তব্য, ‘‘বোনের পরিবারের জন্য ঘরের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু পরে আমাদের বাড়িতে ঘরের সমস্যা মিটেছে। তাই তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছে।” একই কথা জানিয়েছেন মুক্তিও।
বাঁকুড়ার সোনামুখীর বিজেপি বিধায়ক দিবাকর ঘরামির পাকাবাড়ি রয়েছে পড়শুরার কুড়ুমপুর গ্রামে। অথচ তাঁর স্ত্রী প্রতিমা ঘরামির নাম আছে আবাস প্লাসের তালিকায়। বুধবার বিধায়ক দাবি করেন, “২০১৮ সালে যখন সমীক্ষা হয়, তখন আমি যৌথ পরিবারে কাঁচাবাড়িতে থাকতাম। আমাদের অজান্তেই ওই তালিকায় স্ত্রীর নাম তোলা হয়।’’ তিনি বলেন, ‘‘২০২১ সালে বিধায়ক হওয়ার পরে একতলা বাড়ি করেছি। সম্প্রতি তালিকা নিয়ে সমীক্ষার সময়ে জেলাশাসককে ই-মেল করে নাম বাদ দিতে অনুরোধ করেছিলাম।” বাঁকুড়া ১ ব্লকের জগদ্দলা ১ পঞ্চায়েতের বিজেপি প্রধান সুশান্ত শীটেরও বক্তব্য অনেকটা একই রকম।
তালিকা প্রকাশের পরে কেন নাম বাদ দেওয়ার আবেদন জানানো হল? দুই ঘটনায় দুই দলের বক্তব্য বিপরীত।
রিক্তার বোন মুক্তির ক্ষেত্রে রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি তথা রানাঘাটের সাংসদ জগন্নাথ সরকারের দাবি, “তালিকা প্রকাশের পরে বিতর্ক শুরু হতেই উনি এখন নিজেকে সৎ প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন।” আবার বাঁকুড়ায় বিজেপি বিধায়কের স্ত্রীর নাম তালিকায় থাকা নিয়ে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘২০১৮ সালে সমীক্ষা হলেও এত দিন তিনি নাম বাদ দেওয়ার আবেদন করেননি কেন?’’
তৃণমূলের রিক্তার দাবি, তালিকা প্রকাশের পরেই বিষয়টি খেয়াল হয়েছে। তখনই নাম বাদের আবেদন জানানো হয়। আর বিজেপি বিধায়ক দিবাকর বলেন, ‘‘সমীক্ষার সময় কাঁচাবাড়িতে থাকতাম। আমাদের অজান্তেই স্ত্রীর নাম তোলা হয়।’’