Congress TMC

কংগ্রেসের জেতা দুই আসন ছেড়ে‌ই দিয়েছেন মমতা, দাবি করলেন ডালু, কিন্তু অধীর কি জানেন সে কথা?

এর মধ্যে বাংলার কংগ্রেস নেতাদের নিয়ে দিল্লিতে বৈঠক করেছেন রাহুল গান্ধী, মল্লিকার্জুন খড়্গেরা। বঙ্গ কংগ্রেসের নেতাদের প্রায় সকলেই ওই বৈঠকে তৃণমূলের সঙ্গে জোটের বিরোধিতা করেছেন বলে খবর।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩ ১৭:১৭
Share:

(বাঁ দিক থেকে) আবু হাসেম খান চৌধুরী (ডালু), মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অধীর চৌধুরী। —ফাইল চিত্র।

বাংলায় কংগ্রেস-তৃণমূলের জোট জল্পনার মধ্যে বুধবার বড় দাবি করে বসলেন মালদহ দক্ষিণের কংগ্রেস সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরী (ডালু)। তাঁর দাবি, ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে রাজ্যে যে দু’টি আসন জিতেছিল কংগ্রেস, আসন্ন লোকসভা ভোটে তাদের সেই আসন ছেড়ে দেবেন বলে ইতিমধ্যেই কথা দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সেই দাবি কতটা ‘বাস্তবসম্মত’, তা নিয়ে আবার প্রশ্ন তুলে দিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরী স্বয়ং।

Advertisement

বুধবার জোট প্রসঙ্গে ডালুকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘দক্ষিণ মালদহ এবং বহরমপুর আসন আমাদের (কংগ্রেস) ছেড়ে দিয়েছেন বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন। তবে আমাদের আরও কিছু দাবি রয়েছে। সেগুলি নিয়ে আলোচনা চলছে।’’ কিন্তু তার পরে বুধবারেই অধীর আনন্দবাজার অনলাইনকে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, তিনি এ সবের বিন্দুবিসর্গ কিছু জানেন না। অধীরের কথায়, ‘‘আমি এ সব জানি না! আমার সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তো কথা হয়নি! তাই এ সব কথা আমি বলতে পারব না। ডালুবাবুর সঙ্গে হয়তো কথা হয়েছে। তাই তিনি হয়তো বলতে পারছেন।’’

এ বিষয়ে রাজ্য তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষও স্পষ্ট জানিয়েছেন, তিনিও কিছু জানেন না। কুণালের কথায়, ‘‘আসন ছাড়া বা না-ছাড়ার পুরো বিষয়টিই দলের শীর্ষ নেতৃত্বের বিষয়।’’ তবে তৃণমূলের অন্য একটি অংশের বক্তব্য, ডালুর কথা একেবারে ‘অমূলক’ নয়। কারণ, বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকেই মমতা বলেছিলেন, গত বার বিরোধী দলগুলির যারা যে আসনে জিতেছিল, আসন সমঝোতায় তারা সেই আসনেই লড়বে। সেই সূত্র অনুযায়ী মালদহ দক্ষিণ ও বহরমপুর কংগ্রেসেরই ‘প্রাপ্য’। তবে যে ভাবে ডালু ‘মমতা কথা দিয়ে দিয়েছেন’ বলে দাবি করেছেন, তা কতটা বাস্তব, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।

Advertisement

কংগ্রেসের একটি সূত্রে দাবি করা হয়েছিল, মালদহ দক্ষিণ এবং বহরমপুর ছাড়াও রায়গঞ্জ আসনটি কংগ্রেসকে দেওযার বিষয়ে মমতার সঙ্গে রাহুল গান্ধীর একটা প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। তবে কংগ্রেস স্বভাবতই ওই তিনটি মাত্র আসন নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে চায় না। ফলে তারা অন্তত সাতটি আসনের দাবি জানাবে বলে খবর। তার মধ্যে রয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলার আরও দু’টি আসন, মালদহের একটি আসন এবং দার্জিলিংও। তবে মমতা ওই দাবি মেনে নেবেন না বলেই মনে করছেন কংগ্রেসের একাংশ। সে ক্ষেত্রে কংগ্রেস রাজ্যে বামেদের সঙ্গে জোটে যেতে আগ্রহী থাকবে। সে ক্ষেত্রে তারা অনেক বেশি আসনে প্রার্থীও দিতে পারবে। বস্তুত, দীপা দাশমুন্সি-সহ অনেকে মনে করছেন, ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে বামেদের সঙ্গে জোট গড়ে আবার ২০২৪ সালের ভোটে তৃণমূলের সঙ্গে জোট গড়লে কংগ্রেসের ‘রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা’ নিয়ে প্রশ্ন উঠে যাবে। রাজ্য কংগ্রেসের এক প্রথম সারির নেতার কথায়, ‘‘কংগ্রেসের পক্ষে সবচেয়ে ভাল হত বিজেপির সঙ্গে জোট গড়ে তৃণমূলকে হারানোর চেষ্টা করা। কিন্তু সে তো সোনার পাথরবাটির মতো!’’

‘ইন্ডিয়া’র গত বৈঠকে তৃণমূল দাবি করেছিল ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে আসন সমঝোতা চূড়ান্ত করতে হবে। কিন্তু বুধবার পর্যন্ত তা যে তেমন এগোয়নি, তা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে না। শুধু বাংলা কেন, সারা দেশেই তেমন এগোয়নি সমঝোতার কথাবার্তা। এর মধ্যেই বাংলার কংগ্রেস নেতাদের নিয়ে দিল্লিতে বৈঠক করেছেন রাহুল, মল্লিকার্জুন খড়্গে-সহ শীর্ষ কংগ্রেস নেতৃত্ব। বঙ্গ কংগ্রেসের নেতাদের প্রায় সকলেই ওই বৈঠকে তৃণমূলের সঙ্গে জোটের বিরোধিতা করেছেন বলে খবর। পাশাপাশি তাঁরা এ-ও বলেছেন, এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিক হাইকমান্ড। প্রসঙ্গত, কংগ্রেস-তৃণমূলের সমঝোতা হবে কি না তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। তার মধ্যে অন্যতম হল, বাংলায় বামেরা কোন অভিমুখে চলবে। আবার এ সবের মধ্যেই পাহাড়ের দুই নেতা বিনয় তামাং এবং অজয় এডওয়ার্ডকে নিয়ে রাহুলের সঙ্গে দেখা করাতে গিয়েছিলেন অধীর। যা দেখে অনেকে মনে করছেন, দার্জিলিং আসনে প্রার্থী দেওয়ার ব্যাপারে কংগ্রেস ইতিমধ্যেই সলতে পাকানো শুরু করে দিয়েছে। এই সব সাত-সতেরোর মধ্যেই ডালুর দাবি নতুন মাত্রা যোগ করল জোট জল্পনায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement