বৃহস্পতিবার তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠকে দেবু টুডু। — নিজস্ব চিত্র
বাম আমলে রাজ্যের তফসিলি জাতি ও আদিবাসীদের কোনও উন্নয়ন হয়নি। ভোটের স্বার্থে আদিবাসীদের কাজে লাগিয়েছে সিপিএম। সেই একই পথে হাঁটছে কেন্দ্রের বর্তমান শাসকদল বিজেপি। আদিবাসী উন্নয়ন প্রসঙ্গে বাম ও বিজেপি-কে এক সারিতে বিঁধে এ ভাবেই আক্রমণ করল তৃণমূল।
বৃহস্পতিবার তৃণমূল ভবনে সাংবাদিক বৈঠকে বর্ধমানের জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা আদিবাসী নেতা দেবু টুডু বলেন, ‘‘২০১১ সালের আগে বাংলার তফসিলি জাতি ও গরিব আদিবাসীরা ঠিক মতো খেতে পেত না। জঙ্গলমহলের মানুষ পিঁপড়ের ডিম খেত। ৩৫ বছরে সিপিএম সরকার তাঁদের কথা ভাবেনি। তারা শুধু ঝান্ডা ধরিয়েছে। সেই দলটাই এখন রং পরিবর্তন করেছে। জঙ্গলমহল ও নন্দীগ্রামের অত্যাচারিত লাল পার্টিটাই আজ গেরুয়া হয়েছে।’’
বাম জমানায় ধামসা, মাদলের পরিবর্তে আদিবাসীরা গুলি, বন্দুক ধরেছিলেন বলে দাবি করেন দেবু। তাঁর কথায়, ‘‘আদিবাসীদের সংস্কৃতি, কৃষ্টি সিপিএম জোর করে লুঠ করেছিল। ধামসা, মাদল বাজত না। জঙ্গলমহলে বোমার আওয়াজ শোনা যেত। সেই পরিস্থিতির পরিবর্তন এনেছে তৃণমূল। আদিবাসী মাওবাদীরা জীবনের মূল স্রোতে ফিরে এসেছে।’’
আরও পড়ুন: অপসারণকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে কনিষ্ঠ অধিকারী
শুধুমাত্র হিংসা নিবারণ নয় মমতার জমানায় শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও আর্থিক দিক থেকেও তফসিলি আদিবাসীদের অনেক উন্নতি হয়েছে বলে মনে করেন দেবু। তিনি জানান, আগে আদিবাসীরা মাতৃভাষায় পড়াশোনা করার সুযোগ পেত না। এখন সাঁওতালিরা অলচিকিতে পড়াশোনা করতে পারে। আদিবাসীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ও তৈরি করা হয়েছে। ২০১১ সালের পর আদিবাসীদের জন্য আর্থিক বরাদ্দ দশ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন। পাশাপাশি বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির সঙ্গে এ রাজ্যের তুলনা টেনে দেবু বলেন, ‘‘বিজেপিশাসিত উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ ও গুজরাতে দলিতদের উপর অত্যাচার করা হয়। ধর্ষিত হন দলিত মহিলারা। আর এ রাজ্যের অবস্থা অনেক ভাল। এখানে মাত্র এক শতাংশ দলিত অত্যাচারের ঘটনা ঘটে।’’
আরও পড়ুন: ‘শোভন স্যার’-এর সঙ্গে ভোটের কাজ, কোমর বেঁধে নামতে তৈরি ‘ছাত্রী’ বৈশাখী
প্রসঙ্গত, ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে জঙ্গলমহলের আদিবাসী ভোটের বেশির ভাগই হাতছাড়া হয়েছে তৃণমূলের। বিধানসভা নির্বাচনেও সেই ভোট ধরে রাখতে এবং আদিবাসীদের মন জয় করতে তাঁদের বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ করেছেন বিজেপি নেতারা। বঙ্গ সফরে এসে খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বাঁকুড়ার আদিবাসী পরিবারে ভোজন করেছেন। সেই ভোট ফিরে পেতে মরিয়া শাসকদলও। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আদিবাসী উন্নয়নকে হাতিয়ার করে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রচারে নেমেছেন। জঙ্গলমহলে বিজেপিকে টক্কর দিতে ছত্রধর মাহাতোকেও ময়দানে নামিয়েছেন।