Recruitment Scam

প্রেসিডেন্সি জেলেই যেন মিনি ‘শিক্ষা সম্মেলন’

তেইশ-চুয়াল্লিশে শান্তিপ্রসাদেরা সুযোগ পেলেই নিজেদের মধ্যে গল্পে মেতে ওঠেন। তাঁদের একটাই উঠোন। সকালে সেল থেকে বেরিয়ে তাঁরা সেখানে জড়ো হন। কিন্তু পার্থের ক্ষেত্রে ভিন্ন নিয়ম।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০২২ ০৮:১৮
Share:

মানিক ভট্টাচার্য। ফাইল চিত্র।

জেল তো নয়! যেন কোনও শিক্ষা সম্মেলন।

Advertisement

কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে গত প্রায় তিন মাস ধরে বন্দি রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ভিআইপি ওয়ার্ডে পর পর ২২টি সেল। তার দু’নম্বরে থাকছেন পার্থ। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সেখানে পৌঁছেছেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন চেয়ারম্যান মানিক ভট্টাচার্য। তাঁর ঠিকানা, পার্থের চারটে ঘর পেরিয়ে সাত নম্বর সেল।

এ ছাড়া আগে থেকেই ওই ওয়ার্ডে গিয়ে ঠাঁই নিয়েছেন শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতিতে অভিযুক্ত, স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) কাণ্ডে ধৃত শান্তিপ্রসাদ সিংহ, অশোক সাহা, কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়, সুবীরেশ ভট্টাচার্য। সব মিলিয়ে শিক্ষা দফতরের কর্তা-ব্যক্তিদের সংখ্যা বাড়ছে সংশোধনাগারে।

Advertisement

ওয়ার্ডে দু’টি ভাগ। প্রথম ভাগে ২২টি সেল। তার নাম তাই ‘পহেলা বাইশ’। সেখানেই পার্থ ও মানিকের ঘর। পহেলা বাইশের পরে পাঁচিল ও লোহার গেট। তারও পরে ২৩ থেকে ৪৪ নম্বর সেল। তার নাম তেইশ-চুয়াল্লিশ ওয়ার্ড। শান্তিপ্রসাদ, সুবীরেশরা সেখানে থাকছেন।

আপাতত এই দুটি ওয়ার্ডের উপরেই সতর্ক নজর রয়েছে কারা কর্তৃপক্ষের। কারারক্ষীদের পাশাপাশি সিসিটিভির কড়া নজরদারি তো রয়েইছে। প্রতিটি সেলে সম্প্রতি অতিরিক্ত সিসিটিভি বসানো হয়েছে। আরও সিসিটিভি বসানোর জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশও করা হয়েছে বলে জেল সূত্রের খবর। পহেলা বাইশে পার্থ, মানিকের পাশাপাশি সাজাপ্রাপ্ত বন্দি আফতাব আনসারি, মুসার মতন জঙ্গি এবং বেশ কয়েক জন হাই-প্রোফাইল বিচারাধীন মাওবাদী নেতাও রয়েছেন।

জেল সূত্রের খবর, তেইশ-চুয়াল্লিশে শান্তিপ্রসাদেরা সুযোগ পেলেই নিজেদের মধ্যে গল্পে মেতে ওঠেন। তাঁদের একটাই উঠোন। সকালে সেল থেকে বেরিয়ে তাঁরা সেখানে জড়ো হন।

কিন্তু পার্থের ক্ষেত্রে ভিন্ন নিয়ম। আদালতেরই কড়া নির্দেশ, কোনও ভাবেই যেন তৃণমূলের প্রাক্তন এই মহাসচিবের নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয়। পার্থ প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে আসার পর থেকে সহবন্দিদের আপ্যায়নটা খুব একটা ‘সুখকর’ হয়নি। তাই জেল কর্তৃপক্ষের নির্দেশ, পার্থকে যখন সেল থেকে বার করা হবে, তখন ওই ওয়ার্ডের বাকি বন্দিরা সেল-এর ভিতরে থাকবেন। আবার অন্যরা যখন বেরোবেন, তখন পার্থকে সেলের ভিতরে রাখা হবে।

তাই কারারক্ষীদের একাংশের মতে, পহেলা বাইশের এক উঠোনে ঘোরাফেরা করতে পারলেও পার্থের সঙ্গে পলাশীপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক মানিকের সশরীরে সাক্ষাতের সম্ভাবনা নেই। যদিও মঙ্গলবার সংশোধনাগারে পৌঁছে পার্থের সেলের সামনে গিয়ে ‘পার্থদা’ বলে মানিক একবার হাঁক দিয়েছিলেন বলে কারা দফতর সূত্রের খবর। কিন্তু, কুঠুরির ভিতর থেকে কোনও সাড়াশব্দ আসেনি।

ভারী শরীরে ওঠা-বসার অসুবিধার কারণে পার্থের জন্য একটি লোহার খাটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু মানিকের ক্ষেত্রে তেমন বিশেষ ব্যবস্থা

কারারক্ষীরা জানিয়েছেন। তাঁকে চারটি কম্বল দেওয়া হয়েছে। দু’টি তিনি মাথায় বালিশের মতন ব্যবহার করতে পারবেন। আর দু’টি মাটিতে পেতে শোবেন।

কারারক্ষীদের কথায়, ওই দু’টি ওয়ার্ডের সব বন্দিদেরই ক্যান্টিন, হাসপাতাল ও জেল সুপারের অফিস যেতে হলে পহেলা বাইশের পার্থের সেলের সামনে দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। সূত্রের দাবি, শান্তিপ্রসাদ, সুবীরেশরা যাতায়াতের পথে পার্থের সেলের ধারে-কাছে যান না।

পাশাপাশি পার্থকেও বাকিদের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে শোনা যায় না। কারারক্ষীদের কথায়, ‘‘পার্থ দিনের অর্ধেক সময় শুয়ে-বসে কাটিয়ে দেন। মাঝেমধ্যে আইনজীবীদের কাছ থেকে নেওয়া কয়েকটি খাতায় কিছু লেখাপড়া করেন। দুপুরে এক বার সেল থেকে বেরিয়ে ড্রামে থাকা জল নিয়ে স্নান করেন। তার পরে আবার সেলে ঢুকে যান।’’

কারারক্ষীদের একাংশের বক্তব্য, তিনি শিক্ষা দুর্নীতিতে জড়িত নন, দুর্নীতি যা হয়েছে, তা তাঁর দফতরের অধিকারিকেরা করেছেন, এমনটাই প্রমাণ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন পার্থ। জেলে দেখা করতে আসা আইনজীবীদেরও তিনি নাকি এমনই পরামর্শ দিচ্ছেন।

প্রশ্ন উঠেছে, সেই কারণেই কি তিনি সুকৌশলে শান্তিপ্রসাদ, কল্যাণময়দের বিষয়ে নিশ্চুপ? সেই কারণেই কি মঙ্গলবার মানিক ডাকা সত্ত্বেও কোনও সাড়াশব্দ করেননি পার্থ?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement