হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।
ফোনের অন্য প্রান্ত থেকে বলতে চাইলেন না, এখন ঠিক কোথায় আছেন। বললেন, “জানতে পারলে তো মিডিয়া আবার ধাওয়া করবে।”
এই প্রথম মুখ খুললেন শিক্ষা দুর্নীতিতে ধৃত কুন্তল ঘোষের সেই ‘রহস্যময়ী নারী’, হৈমন্তী গঙ্গোপাধ্যায়। ধরা গলায় দাবি করলেন, “আমি কোনও ভাবেই এই সবের (দুর্নীতি) সঙ্গে জড়িত নই। জানি না, কী ভাবে দুর্নীতি হয়। কোনও ধারণাই নেই।”
তাঁর নাম প্রথম বলেছিলেন কুন্তল ঘোষ। বলেছিলেন, “খোঁজ নিন। কোন রহস্যময়ীর কাছে টাকা আছে।” তার পরেই হৈমন্তীর নাম উল্লেখ করেন।
শুরু হয় হইচই। জানা যায়, নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে অন্যতম অভিযুক্ত গোপাল দলপতির স্ত্রী হৈমন্তী। তাঁর হাওড়ার বাড়ির সামনে ভিড় জমে। তাঁর মা জানান, মেয়ে এ সবের সঙ্গে জড়িত নন। মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগও হচ্ছে না। এর মধ্যেই একদিন আনন্দবাজারের সঙ্গে মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করে হৈমন্তী বলেন, “আমি সময়মতো সব বলব।” আর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিজে থেকেই যোগাযোগ করেন। প্রথমে মেসেঞ্জারে, পরে হোয়াটসঅ্যাপে তারও পরে ফোনে কথা বলেন। তাঁর অভিযোগ, “কেউ একটা আমার নাম বলে দিল। সেটা যাচাই করা হল না? এই কুন্তলকে আমি চিনিই না।”
কিন্তু, গোপাল দলপতি ওরফে আরমান গঙ্গোপাধ্যায়কে তো চেনেন। তাঁর জবাব, “চিনি মানে? ২০১২-তে আমাদের বিয়ে হয়। এখন বিচ্ছেদের প্রক্রিয়া চলছে।” গোপালের নাম তো উঠে এসেছে নিয়োগ দুর্নীতিতে। সেটা জানেন তো? হৈমন্তীর দাবি, “আমি সিনেমার জগত নিয়ে থাকি। গোপালবাবুর সঙ্গে যখন থাকতাম, তখনও সিনেমার জগত নিয়েই ব্যস্ত থাকতাম। উনি কাজ করতেন জানতাম। তবে, তাঁর কাজ নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। উল্টে আমার কাজ নিয়ে দু’জনেরআলোচনা হত।”
হতে তো পারে আপনার সঙ্গে গোপালের যৌথ অ্যাকাউন্ট ছিল। সেখানে টাকা ঢুকেছে। যার কথা কুন্তল বলেছেন। হৈমন্তীর দাবি, “কখনও এমন অ্যাকাউন্ট ছিল না। আমি স্বাধীন। নিজের মতো কাজ করতাম, নিজের মতো চালাতাম। আমার সঙ্গে গোপালবাবুর অর্থের লেনদেন ছিল না। আমি ছোট থেকে লড়াই করেছি। কখনও কারও সাহায্য নিইনি।” গোপালের মুখে কখনও কুন্তলের নাম শোনেননি? হৈমন্তী দাবি করেন, কখনওই তিনি এমন নাম শোনেননি।
তাঁর নাম তো ভেসে উঠেছে বেশ কয়েক দিন আগে। তখনই সামনে এসে মুখ খুললেন না কেন? হৈমন্তী বলেন, “বিশ্বাস করুন। আমি অসুস্থ ছিলাম। কলকাতার বাইরে ছিলাম। এখনও কলকাতার বাইরে। বাইরে বসে প্রথম যখন শুনি এ ভাবে দুর্নীতিতে আমার নাম জড়ানো হয়েছে, আমার এতটাই শক লেগেছিল যে নার্ভ ফেল করে যায়। যে কারণে বাড়িতেও যোগাযোগ করতে পারিনি। দেখবেন মিডিয়া যখন বাবা-মাকে জিজ্ঞেস করেছে, মা-ও বলেছে, আমার সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে না।”
হৈমন্তীর দাবি, এখন তিনি অনেকটা সামলে উঠেছেন। তাঁর কথায়, “এখন নিজেকে বুঝিয়ে অনেকটা শক্ত করেছি। জানি, আমার মুখ খোলা দরকার। কিন্তু, কথা বলার অবস্থায় না থাকলে বলব কী করে? বাড়িতেই বা কী বলতাম?” জানালেন, এখন বাবা-মায়ের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন। তাঁর অভিযোগ, “জানেন, আমার বাবা-মায়ের কী হাল! বাবা খুব সাধারণ অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী। এখন আপনাদের জ্বালায় বাড়ি থেকে দোকানে পর্যন্ত যেতে পারছেন না।”
কী করবেন এখন? উত্তর আসে, “জানি না। মাথা কাজ করছে না। শুধু জোর দিয়ে বলতে পারি, আমি এর সঙ্গে (নিয়োগ দুর্নীতি) জড়িত নই। শুধু চাই, আমার পুরনো জায়গাটা ফিরে পেতে।”