পার্থ চট্টোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
শুধু একা পার্থ চট্টোপাধ্যায় নয়, স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) মাধ্যমে শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মী নিয়োগ দুর্নীতিতে চার্জশিটে অভিযুক্ত হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ প্রায় প্রত্যেক শিক্ষাকর্তাকেই। বাদ যাননি একদা পার্থের ব্যক্তিগত সচিব সুকান্ত আচার্যের মতো আমলা এবং প্রাক্তন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীও।
প্রসঙ্গত, সোমবারই নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক, গ্রুপ-সি এবং গ্রুপ-ডি পদের শিক্ষাকর্মী নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় চার্জশিট দিয়েছিল সিবিআই। সেখানেই এই সব নাম উল্লেখ করা হয়েছে বলে খবর। মঙ্গলবার কলকাতা হাই কোর্টে বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং বিচারপতি মহম্মদ শব্বর রশিদির ডিভিশন বেঞ্চে এ ব্যাপারে একটি রিপোর্টও জমা দেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার কৌঁসুলি।
নিয়োগ দুর্নীতির চারটি মামলাতেই পার্থকে অভিযুক্ত হিসাবে খাড়া করেছে সিবিআই। এর পাশাপাশি প্রায় সব মামলাতেই এসএসসি-র প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিংহ এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়কে অভিযুক্ত হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
সুকান্তর নাম এসেছে গ্রুপ-সি কর্মী নিয়োগের মামলায়। এ ছাড়াও, একাধিক মামলায় চার্জশিটে অভিযুক্ত করা হয়েছে এসএসসি-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান সৌমিত্র সরকার, এসএসসি-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য, এসএসসি-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান শর্মিলা মিত্রকেও। এসএসসি-র প্রাক্তন দুই প্রোগ্রাম অফিসার স্মরজিৎ আচার্য এবং পর্ণা বসুর নামও চার্জশিটে আছে। বাদ যাননি পরেশ অধিকারীর কন্যা অঙ্কিতা অধিকারীও। এ ছাড়াও, প্রসন্ন রায়, প্রদীপ সিংহ-সহ একাধিক এজেন্ট এবং ‘বিতর্কিত ভাবে নিযুক্ত’ কয়েক জন শিক্ষকের নাম রয়েছে চার্জশিটে।
প্রাথমিক ভাবে পার্থ, শান্তিপ্রসাদ এবং কল্যাণময়কেই মূল চক্রী হিসেবে মনে করা হচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে, শুধু পার্থই কি এই দুর্নীতির মাথা, নাকি আরও কেউ রয়েছেন? আইনজীবীদের পর্যবেক্ষণ, সিবিআই প্রাথমিক ভাবে যে ক’জনের সরাসরি যোগ পেয়েছে, চার্জশিটে তাঁদের নাম দিয়েছে। তবে দুর্নীতির টাকা আরও অনেকের কাছে যেতে পারে। সে বিষয়টি ইডি-র তদন্তের আওতায় আছে।
বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীদের একাংশের আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্তর মতে, ‘‘এর পরেও যদি সিবিআই আরও কোনও অভিযুক্তের খোঁজ পায় তা হলে অতিরিক্ত চার্জশিট দেওয়ার জন্য কোর্টে আবেদন করতে পারে।’’ চাকরিপ্রার্থীদের আরেক আইনজীবী ফিরদৌস শামিমের বক্তব্য, ‘‘সিবিআইয়ের চার্জশিট থেকেই স্পষ্ট যে দুর্নীতি হয়েছে। এই অভিযুক্তদের দ্রুত বিচার করে শাস্তি এবং অযোগ্যদের বাতিল করে যোগ্যদের নিয়োগ প্রয়োজন।’’
প্রসঙ্গত, সুপ্রিম কোর্ট এসএসসি নিয়োগ মামলায় সিবিআইকে তদন্ত শেষ করার জন্য নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়েছিল। সেই সময়সীমা অনুযায়ী সোমবার চার্জশিট জমা দিয়ে এ দিন হাই কোর্টে রিপোর্ট দিয়েছে তারা।