ইস্তফা দেওয়ার কথা ভাবছেন বিদ্রোহী অংশের কেউ কেউ। প্রতীকী ছবি।
পুরনো দিন অনেক আগেই অতীত! শক্তি হারিয়ে দল এখন দুর্বল। তবু সেই অবস্থাতেও সিপিআইয়ের রাজ্য সম্মেলনে বিদ্রোহের ঝড় উঠল! রাজ্য পরিষদের ‘সরকারি প্যানেল’ নিয়ে প্রশ্ন তুলে ও বিরোধিতা করে সম্মেলন ছেড়ে বেরিয়ে এলেন দলের ১১টি জেলার সম্পাদক ও প্রতিনিধিরা। সিপিআইয়ের সম্মেলনে এমন অভ্যন্তরীণ বিরোধের ঘটনা সাম্প্রতিক কালে নজিরবিহীন।
মেদিনীপুরে ছিল সিপিআইয়ের ২৭তম রাজ্য সম্মেলন। তিন দিনের সম্মেলনে সিপিআইয়ের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে উপস্থিত ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ডি রাজা, অতুল কুমার আনজান, পল্লব সেনগুপ্তেরা। দলীয় সূত্রের খবর, রাজাদের উপস্থিতিতেই শনিবার রাতে সম্মেলন-কক্ষে বিদ্রোহে শামিল হয়েছিলেন প্রাক্তন মন্ত্রী, প্রাক্তন সাংসদ, বর্ষীয়ান ও তরুণ মুখ-সহ একাধিক প্রথম সারির নেতা। নতুন রাজ্য পরিষদের জন্য ৮১ জনের নামের প্যানেল পেশ হয়েছিল সরকারি তরফে। তার পাল্টা প্যানেল দিয়ে ভোটাভুটি চেয়েছিলেন বিদ্রোহীরা। সিপিআই নেতৃত্ব ভোটাভুটিতে যেতে রাজি হননি। আপত্তি তুলে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া থেকে সরে আসেন ২১৪ জন প্রতিনিধির বড় অংশ, যাঁদের মধ্যে আছেন ১১টি জেলার নেতারা। শেষ পর্যন্ত সরকারি প্যানেলের ৮১ জনের কমিটিই চূড়ান্ত বলে ঘোষণা হয়েছে। সেই কমিটিতে বিদ্রোহী অংশের নেতাদের অনেকেও আছেন। তবে দলের একটি সূত্রের ইঙ্গিত, পার্টি কংগ্রেসের আগে রাজ্য পরিষদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার কথা ভাবছেন বিদ্রোহী অংশের কেউ কেউ।
সিপিএমের চেয়েও এ বার কঠোর বয়স-নীতি সংগঠনে চালু করছে সিপিআই। কমিটির ৫০% সদস্যের বয়স ৫০-এর মধ্যে রাখার নীতিও নিয়েছে তারা। মূলত বয়স-নীতি মানতে গিয়েই রাজ্য পরিষদের কলেবর আগের ১১৯ থেকে কমে হয়েছে ৮১। রাজ্য কার্যনির্বাহী সমিতি অবশ্য আগের মতো ৩১ জনেরই আছে। রাজ্য সম্পাদক হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়। চার বছর আগে প্রবোধ পণ্ডার মৃত্যুতে তিনি রাজ্য সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। বিজয়ওয়াড়ায় আগামী অক্টোবরের পার্টি কংগ্রেসের পরে নতুন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী গঠিত হওয়ার কথা।
বয়সের নীতি মেনে কমিটি থেকে বাদ যেতে হয়েছে অনেককেই। দলীয় সূত্রের খবর, সমস্যা তা নিয়ে নয়। বয়স-নীতি বজায় রেখেই এমন কিছু মুখকে রাজ্য পরিষদে রাখা হয়েছে, যাঁদের নিয়ে দলে প্রশ্ন আছে। সম্মেলন ছেড়ে বেরিয়ে আসা দলের রাজ্য পরিষদের এক সদস্যের কথায়, ‘‘অগণতান্ত্রিক ভাবে রাজ্য নেতৃত্বের পছন্দের লোকজনকে রেখে অনেককে বেছে বেছে বাদ দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতির অভিযোগের নিষ্পত্তি হয়নি, এমন কাউকে কমিটিতে জায়গা দেওয়া নিয়ে অনেক প্রতিনিধি মুখ খুলেছেন। তা ছাড়া, দলের গঠনতন্ত্র অনুসারে গোপন ব্যালটে ভোট করতে তো কোনও অসুবিধা ছিল না! কিন্তু সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’
সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের অবশ্য পাল্টা দাবি, ‘‘কিছু ভিন্নমত সব সময়েই থাকে। ভোটাভুটির পরিস্থিতি ছিল না। সর্বসম্মতিক্রমেই রাজ্য সম্পাদক ও রাজ্য পরিষদ নির্বাচিত হয়েছে।’’