আগুনে আনাজ
vegetable price

পটল ৮০ টাকা, গুড় খাচ্ছে কে?

বাজার অগ্নিমূল্য। কিন্তু কেন? খেত থেকে বাজার, দাম বাড়ছে কোন পথে

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৬:০৮
Share:

ফাইল চিত্র।

দামের ফারাকটা বিস্তর!

Advertisement

এলাকার পাইকারি বাজারে নিজের মাচার পটল বেচে দক্ষিণ ২৪ পরগনার পোলেরহাটের চাষি মনিরুল ইসলাম পাচ্ছেন কেজিপ্রতি ৪০-৪৫ টাকা। টালিগঞ্জের অশোকনগর বাজারে সেই পটলই বিকোচ্ছে কেজিপ্রতি ৮০ টাকা দরে!
শুধু পটল নয়, কাঁচালঙ্কা, ঝিঙে-সহ বহু আনাজেরই দাম নাগালের বাইরে। চাষি ও ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন, মাস তিনেক আগের আমপান এবং গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে আনাজ নষ্ট হয়েছে। ফলে, চাহিদার সঙ্গে জোগানের তারতম্যে আনাজের দাম বেড়ে চলেছে।

কিন্তু যে পটল দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাইকারি বাজারে ৪০-৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, কলকাতার বাজারে তার দাম দ্বিগুণ হয় কী করে? বিভিন্ন জেলাতেও আনাজের দাম চড়া।

Advertisement

এলাকা ভেদে চাষিদের আনাজ আড়তদার থেকে পাইকারি ব্যবসায়ী হয়ে খুচরো বিক্রেতার হাতে পৌঁছয়। অর্থাৎ, তিন হাত ঘোরে। মাঝে খরচ বলতে পরিবহণের। হাট থেকে পাইকারি বাজারে আনার খরচ দিতে হয় পাইকারদের। পাইকারি বাজার থেকে খুচরো বাজারে পরিবহণ খরচ চাপিয়ে আনাজ বিক্রি করেন ছোট বিক্রেতারা।

আরও পড়ুন: না-পড়িয়ে কেন পরীক্ষা, প্রশ্ন উঠল রবীন্দ্রভারতীতে

মনিরুলের মতো চাষিরা কিন্তু বলছেন, তাঁরা বিশেষ লাভের মুখ দেখছেন না। মনিরুলের কথায়, ‘‘সাদা চোখে দাম কিছুটা বেশিই মনে হচ্ছে। কিন্তু যা ফসল নষ্ট হয়েছে, এতে সেই ক্ষতি পোষানো যাবে না।” একই বক্তব্য উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গার চাষি সাজ্জাদ হোসেনেরও।

পূর্ব বর্ধমানে বেশি আনাজ উৎপাদন করে পূর্বস্থলীর দু’টি ব্লক। সেখানকার চাষিদের দাবি, কোথাও স্বাভাবিকের থেকে অর্ধেক, কোথাও চার ভাগের এক ভাগ উৎপাদন হচ্ছে। আমপানের পরে ধারাবাহিক বৃষ্টিই এর কারণ বলে তাঁরা জানান। কালনা মহকুমার ভাগীরথীর পাড় লাগোয়া বিভিন্ন চরের বালি-মাটিতে পটল, উচ্ছের মতো আনাজ হয়। সম্প্রতি নদী উপচে ফসল নষ্ট হয়েছে।

আরও পড়ুন: বাচ্চাদের পড়াতে চেয়ে প্রোমোশন নেননি পুলক

চাষিরা দাবি করছেন, তাঁরা লাভের মুখ দেখছেন না। তা হলে খুচরো বাজারে আসার পথে কোনও ফাঁকে দাম চড়ছে? দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাইকারি আনাজ ব্যবসায়ী শ্রীপদ সরকারের দাবি, “গোলমালটা হচ্ছে ওই পরিবহণের জন্যই। দুই ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকার আনাজ আগে কলকাতায় আসত লোকাল ট্রেনে। তারপরে কোলে মার্কেট বা শহরতলির বাজারে পৌঁছে যেত। ট্রেন না-থাকায় সেই শৃঙ্খল পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। এখন আবার আনাজের জোগান কমায় ট্রাক ভরছে না। ফলে, পরিবহণ খরচ বাড়ছে।’’

গোবিন্দ বিশ্বাস এবং আব্দুল জব্বার উত্তর ২৪ পরগনার আমডাঙা থেকে আনাজ কিনে আসানসোলে সরবরাহ করেন। তাঁদের দাবি, “ট্রাক-ম্যাটাডরে এক সঙ্গে অনেকের অনেক রকম আনাজ থাকে। কেজিপ্রতি পরিবহণ খরচ পড়ে সর্বোচ্চ দু’টাকার কাছাকাছি। এর পরে আমরা কেজিতে ৫-৭ বা ১০ টাকা লাভ রেখে বেচে দিই।” খুচরো বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, তাঁদেরও পরিবহণ খরচ পড়ে কেজিপ্রতি এক টাকার কাছাকাছি। তাঁরা কেজিপ্রতি ৫-৭ টাকা লাভ রেখে বিক্রি করেন।

তা হলে মনিরুলদের ৪৫ টাকার পটলের দর সব খরচ মিলিয়ে যদি ২০ টাকাও ওঠে, বাকি ১০-১৫ টাকা যাচ্ছে কোথায়? বাজারে দর যে ৭৫-৮০ টাকা! ঘুরেফিরে এসে পড়ছে সেই ফড়েদের দাম চড়ানোর তত্ত্ব। চাষি বা খুচরো ব্যবসায়ী— কেউই বেশি লাভের কথা মানছেন না। অথচ, মাঝের হিসেবের গরমিলটা থেকে যাচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement