গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থা ডিভিসি অপরিকল্পিত ভাবে জল ছাড়ায় দক্ষিণবঙ্গে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে অভিযোগ জানিয়ে গত ২০ সেপ্টেম্বর চিঠিও পাঠিয়েছেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে সোমবার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের দফতর থেকে পশ্চিমবঙ্গ-সহ কয়েকটি রাজ্যে বন্যা মোকাবিলায় কেন্দ্রের বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কে বার্তা দেওয়া হল।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে রাজভবনের ওই বার্তায় অনুপস্থিত রইল ডিভিসি বিতর্ক। তবে রাজ্য সরকার এবং বন্যাদুর্গত এলাকার বাসিন্দাদের ‘করণীয়’ সম্পর্কে একাধিক বিষয় চিহ্নিত করেছে বোসের সচিবালয়। লেখা হয়েছে, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের সাম্প্রতিক বন্যা মোকাবিলা করার জন্য সরকার এবং জনসাধারণকে জীবনের এবং সম্পত্তির উপর বন্যার প্রভাব কমানোর জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলির সম্পর্কে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে।’’
‘ভারত সরকারের বন্যা ব্যবস্থাপনা কর্মসূচি’ শীর্ষক প্রথম অংশে লেখা হয়েছে— ‘‘ভারত সরকার জীবনের এবং সম্পত্তির উপর বন্যার প্রভাব কমানোর এবং সুরক্ষার জন্য বেশ কয়েকটি বন্যা ব্যবস্থাপনায় উদ্যোগী হয়েছে। রাজ্য সরকারগুলির জন্য বন্যার আগে, বন্যার সময়, এবং বন্যার পরে গ্রহণযোগ্য পদক্ষেপগুলি নিম্নলিখিত—
বন্যার আগে:
বাঁধ নির্মাণ: গঙ্গা এবং তার উপনদীগুলির পাশ দিয়ে বাঁধ এবং বন্যানিরোধক প্রাচীর শক্তিশালী করা এবং প্রয়োজনে নির্মাণ করা, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে নদীর জল উপচে পড়া প্রতিরোধ করার জন্য এই ব্যবস্থা প্রয়োজনীয়।’’
হাওড়া, হুগলি এবং উত্তর ২৪ পরগনা জেলার মতো ঝুঁকিপূর্ণ নদীর বাঁধ শক্তিশালী করা, বন্যার ঝুঁকি কমাতে এবং জলপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং দামোদরের মতো নদ-নদীগুলির চ্যানেলাইজেশন করা কথাও রয়েছে রাজভবনের প্রতিক্রিয়ায়। বলা হয়েছে, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের ভৌগোলিক ও জল বিন্যাস অনুযায়ী যমুনা নদীর বন্যা-নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা অনুরূপে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা প্রস্তুত করা।’’
বন্যার সময় উদ্ধার এবং ত্রাণ বণ্টনে রাজ্যের ‘করণীয়’ সম্পর্কেও বলা হয়েছে ওই বার্তায়। লেখা হয়েছে, ‘‘বন্যায় আটকে পড়া মানুষদের দ্রুত উদ্ধারের জন্য আপৎকালীন উদ্ধার অভিযান প্রয়োজন।’’ সেই সঙ্গে ক্ষয়ক্ষতির মূল্যায়নের উদ্দেশ্যে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলের কাঠামোগত, কৃষি, এবং জনবসতিগুলির মূল্যায়ন করার কথা। দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পরিকাঠামোগত পুনর্নির্মাণ কার্যক্রম।
পশ্চিমবঙ্গের সাম্প্রতিক বন্যা মোকাবিলার দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের উদ্দেশে,
পরিকাঠামোগত উন্নয়ন: বন্যা-প্রবণ এলাকায় বাঁধ শক্তিশালী করা, নিকাশি এবং খালগুলির সংস্কার এবং বন্যা প্রতিরোধীকারী পরিকাঠামো নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলা হয়েছে বিবৃতিতে। ‘জলসম্পদের কৌশলগত ব্যবহার’ প্রসঙ্গে লেখা হয়েছে, ‘‘ঝুঁকি কমাতে এবং নিরাপত্তা উন্নত করতে কার্যকরী জলসম্পদ ব্যবস্থাপনার সঠিক পদ্ধতিতে বাস্তবায়ন। জলসম্পদের কৌশলগত ব্যবহারের মাধ্যমে , যেমন- বর্ষার জলের ব্যবহার ও বিভিন্ন উপায়ে সঞ্চয় করা, বন্যা এলাকা কমানো ও জলসম্পদকে সুরক্ষিত করা।’’
এর পরের অনুচ্ছেদের এসেছে বন্যা পরিস্থিতির মোকাবিলা এবং পুনর্গঠনে কেন্দ্রের ভূমিকার প্রসঙ্গ।
জাতীয় ও রাজ্য দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা তহবিল কর্মসূচির কথা জানিয়ে লেখা হয়েছে, ‘‘১৫তম অর্থ কমিশন জাতীয় দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা তহবিল (এনডিআরএমএফ) এবং রাজ্য দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা তহবিল (এসডিআরএমএফ) তৈরি করার সুপারিশ করেছে। ২০২১-২৬-এর জন্য এসডিআরএমএফ-এ ১ লক্ষ ৬০ হাজার ১৫৩ কোটি টাকা, রাজ্য দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া তহবিলের জন্য ২০ শতাংশ এবং রাজ্য দুর্যোগ প্রশমন তহবিলের জন্য ৩২ হাজার ৩১ কোটি টাকা (২০ শতাংশ) বরাদ্দ করা হয়েছে। ২০২১-২৬-এ এনডিআরএমএফ-এর বরাদ্দ ৬৮ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকা।’’ জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা তহবিলের জন্য ৫৪ হাজার ৭৭০ কোটি টাকা (৮০ শতাংশ) বরাদ্দ করা হয়েছে। জাতীয় দুর্যোগ প্রশমন তহবিলের জন্য ১৩ হাজার ৬৯৩ কোটি টাকা (২০ শতাংশ) বরাদ্দ করা হয়েছে। বিশেষ করে মালদহের মতো জেলাগুলিতে গঙ্গার ভাঙন-প্রবণ তীরগুলির জন্য প্রাসঙ্গিক, তীব্র ভাঙন দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসনের জন্য বরাদ্দের পরিমাণ হাজার কোটি টাকা।