পূর্ব বর্ধমানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ভিডিয়ো থেকে নেওয়া।
পূর্ব বর্ধমানের জেলা শাসকের কনফারেন্স রুমে প্রশাসনিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক রাধিকা আইয়ার, জেলার পুলিশ সুপার আমনদীপ, মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, প্রদীপ মজুমদার, মলয় ঘটক এবং সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী। এ ছাড়াও জেলার দুই সাংসদ, বিধায়ক, জেলা পরিষদের সভাধিপতি, কৃষি দফতরের আধিকারক, সেচ দফতরের আধিকারিক, বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের আধিকারিকেরাও ছিলেন সোমবারের বৈঠকে।
মমতা বলেন, ‘‘সকলকে বলব কেউ যাতে কুৎসা রটাতে না পারে তা নজর রাখতে। পাঁচটা কাজ করলে একটায় ভুলভ্রান্তি হতেই পারে। তা দিয়ে ন্যারেটিভ না বানিয়ে, আসুন আমরা বন্যাকবলিত মানুষদের পাশে দাঁড়াই।’’
মমতা বলেন, ‘‘সরকার যেমন পেরেছে, করছে। পুলিশও অনেক জায়গায় কমিউনিটি কিচেন করেছে। আমাদের দলের পক্ষ থেকেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যেখানে যেখানে বন্যা হয়েছে, আমরা সেখানে সেখানে সাধ্যমতো শুকনো খাবারের প্যাকেট দিচ্ছি। কেউ যেন বঞ্চিত না হয়, তা আমাদের দেখতে হবে। আমি বিধায়কদের বলেছি, তাঁদের কোটার যে টাকা আছে, তা দিয়ে গ্রামীণ রাস্তাগুলো যতটা পারবেন উন্নতি করুন। আমাদের দলের সাংসদদের কাছেও একই অনুরোধ করব।’’
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘ত্রাণ শিবির গুলিতে যাতে পানীয় জলের খামতি না থাকে তার জন্য প্রশাসনিক আধিকারিকরা সবরকম ব্যবস্থা নেবে।’’
মমতা বলেন, ‘‘আমরা এখন ২৪ ঘণ্টা বন্যা পরিস্থিতির উপর নজর রাখি। সকলের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। আমরা অনেকগুলো বন্যা সেন্টার তৈরি করেছি। কিন্তু তাতেও বাধ মানছে না। বাঁধ ভাঙছে। দরকার হলে স্কুলগুলোকে যাতে কাজে লাগাতে পারি, তা দেখতে হবে। পূর্ত দফতরকে বলা হয়েছে যে সব রাস্তা ভেঙেছে, তা সমীক্ষা করে দেখতে। ডিসেম্বরে ১১ লক্ষ পাকা বাড়ি করার জন্য সরকার টাকা দেবে। পঞ্চায়েত দফতরকেও বলা হয়েছে জল কমলেই যেন সমীক্ষার কাজ শেষ করে।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘জেলা প্রশাসনকে বাড়ির তালিকা তৈরি করতে বলা হয়েছে। আপাতত যাদের বাড়ি নেই তাদের তিনটি করে ত্রিপল দিতে বলা হয়েছে। বাংলা আবাস যোজনায় পঞ্চাশ লক্ষ বাড়ি তৈরি বাকি আছে। ডিসেম্বরে বাড়ি তৈরির প্রথম কিস্তি দেওয়া হবে।’’
আবারও বন্যা পরিস্থিতির জন্য ডিভিসিকে নিশানা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘বাংলার দুর্ভাগ্য়, এখানে এবং অসমে যত বন্যা হয়, অন্য কোথাও তত হয় না। বাংলার অবস্থা নৌকার মতো। ঝাড়খণ্ডে বৃষ্টি হলেই আমাদের চিন্তা বাড়ে। কারণ, নিজেদের বাঁচাতে জল ছেড়ে দেয়। বিহারও বাঁধ কেটে বাংলায় জল ঢুকিয়ে দেয়। ডিভিসি কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনও কাজ না করার ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষের ঘর ডুবে যাচ্ছে। ভোটের জন্য যে টাকা খরচ করা হয়, তার একাংশ দিলেও বন্যা আটকাতে পারতাম।’’
প্রশাসনিক বৈঠকের পর বাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মুখ্যমন্ত্রী আবারও বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগপ্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘‘পরিস্থিতি ঠিক হলে যাঁদের জমি নষ্ট হয়েছে, তাঁদের জমি মেপে শস্যবিমার টাকা যাতে দ্রুত পান, সেই ব্যবস্থা করার জন্য বলব। আমি চাষি ভাই-বোনেদের চিন্তা করতে বারণ করব। প্রশাসনিক আধিকারিকেরা সবাই রাত জেগে পাহাড়া দেবে। দুর্গত এলাকার মানুষজনকে রিলিফ সেন্টারে আনা হবে। আমরা বেশ কয়েকটি ফ্লাড সেন্টার করেছি নতুন করে। সেখানেও প্লাবিত এলাকার মানুষজনকে রাখা হবে।’’
কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে দক্ষিণবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলা জলমগ্ন। তার উপর ডিভিসি জল ছাড়ায় পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়। দামোদর, ময়ূরাক্ষী, অজয়-সহ রাজ্যের একাধিক নদীর জল উপচে পড়েছে। বহু রাস্তাঘাটের উপর দিয়ে বইছে নদীর জল। ভেঙেছে সেতু। বিপর্যস্ত জনজীবন। গত সপ্তাহেই বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছেন মমতা। কথা বলেছেন সাধারণ মানুষের সঙ্গে। এই পরিস্থিতি জন্য ডিভিসিকেই দায়ী করেছেন তিনি। রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতিকে ‘ম্যান মেড’ বলে দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও এই নিয়ে দু’বার চিঠিও লিখেছেন মমতা। পরিস্থিতি সামাল দিতে জেলা প্রশাসনকে সব রকম বন্দোবস্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
নবান্ন জানানোর পরেই মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকের প্রস্তুতি শুরু করে জেলা প্রশাসন। রবিবার বিকেলে জেলাশাসক, পুলিশ সুপার-সহ জেলা প্রশাসনের আধিকারিকেরা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেন। তড়িঘড়ি ডাকা এই প্রশাসনিক বৈঠকটি হয় জেলাশাসকের কনফারেন্স হলে।