বসন্ত উৎসবে অশ্লীলতা বিতর্কে উপাচার্য পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দিলেন সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী। —ফাইল চিত্র।
বসন্ত উৎসবে অশ্লীলতা বিতর্কে জোর ধাক্কা রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে। উপাচার্য পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দিলেন সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার বসন্ত উৎসব আয়োজিত হয়েছিল রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের মরকতকুঞ্জ (বিটি রোড) প্রাঙ্গণে। সেই অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং পড়ুয়ারা ছাড়াও আরও বহু বহিরাগত অংশ নেন। বেশ কয়েক জন তরুণ-তরুণীকে পিঠে এবং বুকে রং দিয়ে অশ্লীল শব্দ এবং বিকৃত রবীন্দ্রসঙ্গীত লিখতে দেখা যায়। সেই ছবি দাবানলের মতো ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। প্রায় সব মহল থেকে তা নিয়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। বসন্ত উৎসবের নামে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে এ কী চলছে? এই প্রশ্ন তুলে বিস্ময় প্রকাশ করতে শুরু করেন শিক্ষাবিদ থেকে সাহিত্যিক, রবীন্দ্রভারতীর অধ্যাপক থেকে অন্যান্য কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও।
উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী বৃহস্পতিবারই স্বীকার করে নিয়েছিলেন যে, এই ঘটনা তাঁর ক্যাম্পাসেই ঘটেছে। তবে বিশদ মন্তব্যে যেতে চাননি। আজ, শুক্রবার বিভিন্ন শিবির থেকে উপাচার্যের দিকেও আঙুল তোলা শুরু হয়। বসন্ত উৎসবের নিয়ন্ত্রণ শিক্ষিক-শিক্ষিকাদের হাত থেকে নিয়ে তিনি যখন থেকে ছাত্র সংসদের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন, তখন থেকেই বসন্ত উৎসবকে ঘিরে প্রতি বছর কোনও না কোনও বিতর্ক তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠতে শুরু করে। দিনভর হইচই চলে বিষয়টি নিয়ে। শুক্রবার সন্ধ্যায় জানা গেল, পদত্যাগ করেছেন উপাচার্য।
আরও পড়ুন: টিএমসিপি থেকে পরিবার, বসন্ত উৎসব কাণ্ডে আঙুল উঠছে সব দিকে
বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য তথা রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের কাছেই পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন সব্যসাচী। পদত্যাগপত্রের প্রতিলিপি পাঠিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কেও। বসন্ত উৎসবে যা ঘটেছে, তার দায় স্বীকার করেই তিনি ইস্তফা দিয়েছেন বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: রবীন্দ্রভারতীর দোল-কাণ্ডে চিহ্নিত ৫ পড়ুয়া, থানায় অভিযোগ, নিন্দা রাজ্য জুড়ে
সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরীর এই পদত্যাগ চাঞ্চল্য তৈরি করেছে রাজ্যের শিক্ষা মহলে। রাজ্যের শাসক দলের প্রিয়পাত্র হিসাবেই পরিচিত তিনি। বসন্ত উৎসবে গত কাল যা ঘটেছে, তা নিয়ে নানা শিবিরের অস্বস্তি বাড়লেও উপাচার্য পদ থেকে সব্যসাচী ইস্তফা দেবেন, এমনটা অনেকেই ভাবেননি। কিন্তু এ দিন সন্ধ্যায় তাঁর ইস্তফার কথা জানা যেতেই এ কথা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, বসন্ত উৎসব-কাণ্ড নিয়ে শিক্ষা দফতরের সর্বোচ্চ পর্যায়ে তোলপাড় চলছে।
প্রত্যেক বছরই রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিটি রোড ক্যাম্পাসে বসন্ত উৎসব পালিত হয়। গত কাল সন্ধ্যায় এই উৎসব পালিত হয়েছিল। বিতর্কের সূত্রপাত, ওই উৎসবে অংশগ্রহণকারী কয়েক জন তরুণের -তরুণীর পিঠে এবং বুকে রং-আবির দিয়ে অশ্লীল শব্দ লেখা থেকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ওই ছবিগুলিতে দেখা গিয়েছে, শাড়ি পরা কিছু তরুণীর খোলা পিঠে আবির দিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান বিকৃত করে অশ্লীল শব্দ লেখা রয়েছে। অশ্লীল শব্দ লেখা রয়েছে কয়েক জন যুবকের বুকেও। এর পর থেকে তা নিয়ে শিক্ষক মহল-সহ সমাজের নানা মহলেই নিন্দার ঝড় ওঠে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারাও এ নিয়ে নিজেদের ক্ষোভ উগরে দেন। আগে এই উৎসবের দায়িত্বে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তখন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজার হাজার পড়ুয়া এই উৎসবে অংশ নিতেন। তবে তৃণমূল জমানায় এই উৎসবের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের হাতে। অনেকের অভিযোগ, তখন থেকেই বহিরাগতরা এই উৎসবে অংশ নিচ্ছেন। এবং সে সময় থেকে প্রায় প্রতি বারই কোনও না কোনও বিতর্ক তৈরি হচ্ছে।