প্রতীকী ছবি।
ঝাড়গ্রামের পূর্ণাপাণি গ্রামে সাত শবরের মৃত্যুর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জঙ্গলমহলের পাঁচ জেলার রেশন দোকানগুলির অবস্থা নিয়ে তদন্ত শুরু করছে খাদ্য দফতর। জঙ্গলমহলে যে পরিমাণ খাদ্য বিলি হচ্ছে, তা আদৌ উপভোক্তা পরিবারগুলির কাছে পৌঁছচ্ছে কিনা, তা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গত ১৩ নভেম্বর শবরদের মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসার পরে ঝাড়গ্রামের মহকুমা খাদ্য অফিসারকে বিনপুরে তদন্ত করতে পাঠানো হয়েছিল। সেই তদন্ত রিপোর্ট খাদ্য ভবনে জমা পড়েছে। তাতে লেখা হয়েছে, বিনপুর-১ ব্লকের দুর্লভপুরে প্রদীপকুমার ঘোষের রেশন দোকান থেকে ওই মৃত শবর পরিবারগুলি শেষ রেশন তুলেছিল ৯ নভেম্বর। খাদ্য দফতরের কর্তারা দেখেছেন, সুধীর শবর, কিষান শবর, লাল্টু শবর, লেবু শবর, সাবিত্রী শবর, পল্টু শবর এবং মঙ্গলা শবর দুর্লভপুরের দোকান থেকে মাথা পিছু ৮ কেজি চাল অথবা দু’কেজি আটা পেয়েছিলেন। ফলে মৃত শবরদের বাড়িতে খাবার ছিল না, এই অভিযোগ ঠিক নয় বলে দাবি কর্তাদের। এ ছাড়া, প্রত্যেকের কাছেই অন্ত্যোদয় অন্নপূর্ণা যোজনার কার্ড ছিল। রাজ্যের খাদ্যসচিব মনোজ অগ্রবাল বলেন, ‘‘আমরা জেলাশাসককে দিয়ে তদন্ত করিয়েছি। তিনি রিপোর্ট দিয়েছেন। সেখানে দেখা যাচ্ছে, মৃত শবর পরিবারগুলি প্রতি সপ্তাহে রেশন তুলেছেন।’’
কিন্তু তার পরেও নিশ্চিন্তে নেই খাদ্য দফতর। জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা মিশনের পাশাপাশি জনজাতিদের জন্য বাড়তি খাদ্য বরাদ্দ করে রাজ্য। সেই অতিরিক্ত খাদ্য প্রান্তিক মানুষের কাছে ঠিকমতো পৌঁছচ্ছে কিনা, তার খোঁজ নিতে জঙ্গলমহলের পাঁচ জেলায় রেশন দোকানগুলিতে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছে খাদ্য দফতর। তার মধ্যে রয়েছে ঝাড়গ্রামের আটটি ব্লক। যেখানে শবররা বাস করেন। তাঁরা রেশন দোকান থেকে প্রতি সপ্তাহে চাল, গম তুলছেন, নাকি সেই চাল, গম অন্য কোথাও চলে যাচ্ছে, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
অল ইন্ডিয়া ফেয়ার প্রাইস সপ ডিলার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসু বলেন, ‘‘শবর গ্রামের ঘটনার পরে এলাকার বাসিন্দারা সরকারের দেওয়া ২ টাকা কেজি চাল, আটা ঠিকমতো পাচ্ছেন কিনা, কোন দোকানে গ্রাহক সংখ্যা কত, সবই দেখা হচ্ছে। আমরাও সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করছি। ’’
তবে বাঁকুড়া রেশন ডিলার সংগঠনের নেতা গুরুপদ ধক জানান, ‘‘সস্তায় পাওয়া রেশনের চাল, আটা তুলে অনেকে বিক্রি করে দিচ্ছেন। সেই টাকায় হাড়িয়া খাচ্ছেন। ফলে অনেক সময় বিনা পয়সায় খাবার দিয়েও কাজের কাজ হচ্ছে না।’’