West Bengal Ration Distribution Case

রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের দ্বারস্থ হবে ইডি

তদন্তকারীদের দাবি, দু’টি পন্থায় দুবাই ও অন্য স্থানে পাঠানো হয়েছে ওই টাকা। প্রথমত, নগদ টাকা হাওয়ালার মাধ্যমে বিদেশে পাঠিয়ে ভুয়ো সংস্থায় জমা করা হয়েছে।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৪ ০৬:০৮
Share:

—প্রতীকী ছবি।

রেশন বণ্টন দুর্নীতিতে এক দশকে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা বিদেশি মুদ্রা (ফরেন এক্সচেঞ্জ বা ফরেক্স) বিনিময় সংস্থার মাধ্যমে বিদেশে পাচার হয়েছে বলে ইডির দাবি। এ নিয়ে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের দ্বারস্থ হতে চলেছে তারা। এর মধ্যে জেল হেফাজতে থাকা প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ১০ হাজার কোটিরও বেশি টাকা রয়েছে বলে ইডি সূত্রের দাবি।

Advertisement

ইডির এক কর্তার কথায়, বিদেশি মুদ্রা বিনিময় ব্যবসা সম্পূর্ণ ভাবে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার নিয়ন্ত্রণাধীন। রেশন বণ্টন দুর্নীতিতে ধৃত শঙ্কর আঢ্য ও তাঁর পরিবারের মালিকানাধীন আটটি সংস্থা-সহ ১০০টিরও বেশি বিদেশি মুদ্রা বিনিময় সংস্থার তথ্য এবং গত ১০ বছরের আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে জানার জন্যই রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়াকে তদন্তে উঠে আসা সমস্ত নথি-সহ চিঠি দেওয়া হচ্ছে।

ইডি কর্তা বলেন, “বিদেশি মুদ্রা বিনিময় সংস্থার মাধ্যমে টাকা বিদেশে পাচারের ক্ষেত্রেও শঙ্কর ভুয়ো ও জাল নথি ব্যবহার করেছিলেন বলে তদন্তে উঠে এসেছে। সেই কারণে তল্লাশি অভিযানে উঠে আসা সমস্ত নথি রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে পাঠানো হচ্ছে।’’

Advertisement

তদন্তকারীদের দাবি, এই পাচারের সঙ্গে ১০০টিরও বেশি বিদেশি মুদ্রা বিনিময় সংস্থা জড়িত। শঙ্কর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা আটটি এমন সংস্থার মাধ্যমে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে বলে তদন্তকারীদের দাবি। ইডির এক কর্তার দাবি, তদন্তের অগ্রগতির পরে বিদেশে পাচারের অঙ্ক ২০ হাজার কোটির দ্বিগুণ হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

তদন্তকারীদের দাবি, দু’টি পন্থায় দুবাই ও অন্য স্থানে পাঠানো হয়েছে ওই টাকা। প্রথমত, নগদ টাকা হাওয়ালার মাধ্যমে বিদেশে পাঠিয়ে ভুয়ো সংস্থায় জমা করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, মুদ্রা বিনিময় সংস্থার মাধ্যমে টাকা পাচার করা হয়েছে।

তদন্তকারীদের দাবি, শঙ্কর ও তাঁর পরিবারের নামে আটটি এমন সংস্থা থাকলেও নামে-বেনামে প্রায় ৫০টির বেশি মুদ্রা বিনিময় সংস্থা খুলে বিদেশে টাকা পাচার করেছিলেন শঙ্কর। তার মধ্যে তাঁর ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি এবং হিসাবরক্ষকের নামেও সংস্থা রয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি, তিনিই সংস্থাগুলি নিয়ন্ত্রণ করতেন। ইডি সূত্রের দাবি, মোটা কমিশনের বিনিময়ে আরও ৪০-৫০টি বিদেশি মুদ্রা বিনিময় সংস্থাকে বিদেশে টাকা পাচারের ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছিলেন শঙ্কর। ওই সব সংস্থাগুলিকে শনাক্ত করা হয়েছে বলেও দাবি তদন্তকারীদের।

সম্প্রতি কলকাতায় শঙ্কর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের মালিকানাধীন একাধিক বিদেশি মুদ্রা বিনিময় সংস্থার অফিসে তল্লাশি চালানো হয়েছে। সেখান থেকে বহু গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধারের দাবি করেছেন তদন্তকারীরা। নথির পাশাপাশি নগদ বিদেশি মুদ্রাও উদ্ধার হয়েছে বলে সূত্রের খবর।

তদন্তকারীদের দাবি অনুযায়ী, রেশন দুর্নীতিতে প্রায় ৭০ শতাংশ লেনদেন নগদে হয়েছিল। সেই টাকাই হাওয়ালা ও বিদেশি মুদ্রা বিনিময় সংস্থার মাধ্যমে বিদেশে পাচার করা হয়েছে। তদন্তকারীদের আরও দাবি, জ্যোতিপ্রিয় ও শঙ্করের মোবাইলের সিডিআর (কল ডেটা রেকর্ড) পরীক্ষা করা হয়েছে। ওই দু’টি ফোন থেকে উদ্ধার হওয়া নথি দেখে তদন্তকারীদের দাবি, ২০১১ থেকে শঙ্করের সঙ্গে জ্যোতিপ্রিয়ের ঘনিষ্ঠতা। গত এক দশকে প্রায় প্রতিদিনই শঙ্করের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ ছিল জ্যোতিপ্রিয়ের। অভিযোগ, জ্যোতিপ্রিয় ২০১১ থেকে ২০২১ পর্যন্ত খাদ্যমন্ত্রী থাকাকালীন এই দুর্নীতি হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement