রেশন ডিলারদের সঙ্গে সঙ্ঘাত অব্যাহত খাদ্য দফতরের
দুয়ারে রেশন প্রকল্প বাবদ সরকারের বরাদ্দ অর্থ নিতে অস্বীকার করলেন রাজ্যের রেশন ডিলাররা। সোমবার জয়েন্ট ফোরাম ফর রেশন ডিলার্স বৈঠকে বসে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সঙ্গে তারা আরও এক বার জানিয়ে দিয়েছে, কোনও অবস্থাতেই রেশন ব্যবসায়ীরা দুয়ারে রেশন প্রকল্পে অংশ নেবেন না। গত বছর দুয়ারে রেশন প্রকল্প শুরুর সময় থেকেই খাদ্য দফতরের সঙ্গে সঙ্ঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সেই সঙ্ঘাতের পারদ আরও কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে গত বৃহস্পতিবার থেকে। বৃহস্পতিবার নবান্নে মন্ত্রিসভার বৈঠকে দুয়ারে রেশন প্রকল্প সংক্রান্ত বেশ কিছু সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সিদ্ধান্তে বলা হয়, দুয়ারে রেশন প্রকল্পে আরও উৎসাহ দিতে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত অর্থ কমিশন হিসাবে দেওয়া হবে ২১ হাজার রেশন ডিলারকে। আগে প্রতি কুইন্টাল খাদ্যশস্যের জন্য রেশন ডিলাররা ৯৫ টাকা করে কমিশন পেতেন। দুয়ারে রেশন চালু হওয়ায় আরও ৭৫ টাকা করে দেওয়া হত। এ বার সেই পাওনার সঙ্গে আরও ৫০০০ টাকা ‘ফিক্সড কমিশন’ দেওয়া হবে। সঙ্গে ০.২ শতাংশ হারে ‘হ্যান্ডলিং কস্ট’ দেওয়া হবে। রেশন বিলি করার সময় যে শস্য নষ্ট হয়, তার জন্য কিছু ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
মুখ্যমন্ত্রীর এমন সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন রাজ্যের রেশন ডিলাররা। তার পরেই জরুরি ভিত্তিতে সোমবার বৈঠক ডাকে জয়েন্ট ফোরাম ফর রেশন ডিলার্স। বৈঠকের পর মঙ্গলবার রেশন ব্যবসায়ীদের তরফে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসু। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের সংগঠনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, দুয়ারে রেশনের পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার যে পাঁচ হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা আমরা মানতে পারছি না।’’ কারণ প্রসঙ্গে বিশ্বম্ভর বলেন, ‘‘দুয়ারে রেশন করতে গিয়ে যে আর্থিক খরচ, মানবসম্পদ বা লজিস্টিক লাগবে, সেই সবের খরচ অনেক। তাই আমাদের সিদ্ধান্ত, আমরা যারা দুয়ারে রেশন করতে পারছি না তারা এটা করব না।’’ তাঁদের এই সিদ্ধান্ত শীঘ্রই খাদ্য দফতরকে জানিয়ে দেওয়া হবে বলেই জানিয়েছেন সংগঠনের সদস্যরা।
দুয়ারে রেশন প্রকল্পে যে ২০০ গ্রাম করে ‘হ্যান্ডলিং কস্ট’ দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা-ও অবাস্তব বলে জানিয়েছেন তিনি। রেশন সংগঠনের এই নেতা বলেছেন, ‘‘আসলে খাদ্য দফতর মন্ত্রিসভাকে ভুল বুঝিয়েছেন। প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল সেনের আমল থেকে রেশন ডিলাররা ৬২৫ গ্রাম করে হ্যান্ডলিং কস্ট পেয়ে আসছিলেন। চিনির ক্ষেত্রে ৭৮০ গ্রাম হ্যান্ডলিং কস্ট পেয়ে আসছিলেন। সেই হ্যান্ডলিং কস্ট ২০০ গ্রামে নামিয়ে দেওয়া হল, আর চিনির ক্ষেত্রে কিছুই বলা হল না। সরকারি আদেশ প্রকাশ হলে আমরা তা পর্যালোচনা করব। আমরা দুয়ারে রেশন কোনও ভাবেই করব না।’’ সঙ্গে আগামী শীতকালীন অধিবেশনে আবারও সংসদ ভবন ঘেরাও করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে জয়েন্ট ফোরাম ফর রেশন ডিলার্স।