ইস্কনের মন্দির চত্বরেই রথ টানলেন ভক্তেরা। মঙ্গলবার মায়াপুরে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য
পথে নামল না রথ। বিগ্রহও বেশির ভাগ জায়গায় রইলেন মন্দিরেই। কোথাও অবশ্য মাসির বাড়ি গেলেন কোলে বা পাল্কিতে চেপে, কোথাও গাড়ি-রথে। দু’একটি জায়গায় রথ টানা হয়েছে কয়েক পাক। রথের বিখ্যাত মেলা অবশ্য কোথাও বসেনি।
পুরীর জগন্নাথের এক প্রাচীন রূপ দধিবামনের নিয়মিত পুজো হয় মুর্শিদাবাদের লালগোলায়। পিতলের রথে তাঁকে মাসির বাড়ি নিয়ে নিয়ে যাওয়া হত। ভিড় ভেঙে পড়ত। এ বার করোনা-পর্বে সবার চোখের আড়ালে লালগোলার রাজ পুরোহিতের কোলে করে চুপিসাড়ে দধিবামন গেলেন রথবাজারের মাসির বাড়ি।
হুগলির মাহেশেও রাজপথ দিয়ে তিনটি নারায়ণ শিলা নিয়ে যাওয়া হল মাসির বাড়ির মন্দিরে। সকালে জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রার বিগ্রহ গর্ভগৃহ থেকে বের করে মন্দিরের চাতালে রাখা হয়। সেখানে পুজোপাঠ চলে। তবে সাধারণের প্রবেশাধিকার ছিল না। বেলা সাড়ে ৩টে নাগাদ তিনটি বিগ্রহকে লাগোয়া ধ্যানঘরে অস্থায়ী মাসির বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। তার পরেই নারায়ণ শিলা নিয়ে শোভাযাত্রা। সে পথ ভিড়ে ঠাসা ছিল না। শিলা নিয়ে তিন বার রথ প্রদক্ষিণের সময় দূরে দাঁড়িয়ে কয়েক জন তা দেখেছেন। গুপ্তিপাড়াতে জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রা সম্বৎসর থাকেন বৃন্দাবনচন্দ্র মন্দিরে। বিগ্রহ তিনটিকে কৃষ্ণচন্দ্র মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেটাই অস্থায়ী মাসির বাড়ি।
কোচবিহারের মদনমোহন মন্দির চত্বরও সকাল থেকে ছিল সুনসান। বিকেল ৫টা নাগাদ মন্দিরের ভিতরে নিয়মরক্ষার জন্য দড়িতে টান পড়ল। দেবোত্তর ট্রাস্টি বোর্ডের আধিকারিক, জেলার প্রশাসনিক কর্তাদের কয়েক জন উপস্থিত ছিলেন। গাড়ি-রথ সোজা চলে গিয়েছে মাসির বাড়ি ডাঙ্গুরাই মন্দিরে। রথের সঙ্গে ছিল পুলিশের গাড়ি। পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল রাজবাড়ির কুলদেবতা মদনমোহন জিউ ও জগন্নাথদেব পাল্কিতে মাসির বাড়ি গিয়েছেন। পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের কুলীন গ্রামে দশ হাত রথ টানা হয়েছে। কালনায় লালজি রথ কিছুটা টানা হয়। নদিয়ার মায়াপুরে ইসকনের রথ চলে চন্দ্রোদয় মন্দিরের উঁচু পাঁচিল ঘেরা চত্বরের ভিতরে।
এ ছাড়া প্রায় সর্বত্রই রথে বিগ্রহকে রেখে পুজো করে নামিয়ে আনা হয়। যাত্রা হল প্রতীকী। কালনার জগন্নাথতলা, পূর্বস্থলীর গোপীনাথ মন্দির থেকে আউশগ্রামের দিগনগরে জগন্নাথ মন্দির, সর্বত্রই এ বার শুধু পুজো করা হয়েছে। বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের মাধবগঞ্জ আর কৃষ্ণগঞ্জে সেই পুজো দেখতেই মন্দির চত্বরে উপচে পড়েছিল ভিড়। এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) প্রিয়ব্রত বক্সী বলেন, “রথের চারপাশের ব্যারিকেড করে ভিড় রোখা হয়েছে।”
অম্বুবাচী বলে লালগোলায় বিগ্রহকে কেবল ফল, মিষ্টির ভোগ নিবেদন করা হয়। মাহেশের জগন্নাথ মন্দিরের প্রধান সেবাইত সৌমেন অধিকারী বলেন, ‘‘এখানে উৎকল মতে পুজো হয়, তাই অম্বুবাচীতে কোনও বিধিনিষেধ নেই।’’