ফাইল চিত্র।
কেন্দ্রীয় সশস্ত্র বাহিনীতে আত্মহত্যার পরিমাণ বেড়েছে। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর (এনসিআরবি) তথ্য বলছে, ২০১৯ সালে কেন্দ্রীয় বাহিনীতে মোট ৩৬টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। ২০১৮ সালে এই সংখ্যাটি ছিল ২৮। অর্থাৎ শতাংশের নিরিখে প্রায় ২৮ শতাংশ। যদিও ২০১৪ সালে এই সংখ্যাটি ছিল ১৭৫ এবং ২০১৫ সালে ছিল ৬০। তার পরে ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে কমবেশি সংখ্যাটি একই জায়গায় থাকলেও ২০১৮ সালে তা এক লাফে ২৮-এ নেমেছিল।
এনসিআরবি-র তথ্য বলছে, আত্মহত্যার পিছনে সব থেকে বেশি কারণ পারিবারিক অশান্তি। ৩৬টি ঘটনার মধ্যে ১৪টি ঘটনায় পারিবারিক অশান্তি দায়ী। তবে ১৭টি ঘটনা এমন রয়েছে সে ক্ষেত্রে আত্মহত্যার কারণ হয় জানা যায়নি অথবা সেগুলিকে ‘অন্যান্য কারণ’-এর গোত্রে ফেলা হয়েছে। ২০১৮ সালে এমন দু’টি গোত্রে ৫টি ঘটনা ঘটেছিল।
কলকাতার ইনস্টিটিউট অব সাইকায়াট্রির শিক্ষক-চিকিৎসক সুজিত সরখেলের মতে, এই কারণ অজানা বা ‘অন্যান্য কারণ’ গোত্রে ফেলা হলে সেই মৃত্যুগুলির যথাযথ কারণ জানা যায় না। যত দিন না এগুলির নির্দিষ্ট কারণ চিহ্নিত করা হবে, তত দিন কিন্তু আত্মহত্যা কমানো যাবে না। তাঁর কথায়, ‘‘বাহিনীতে যেহেতু আত্মহত্যার সংখ্যা আমনাগরিকের তুলনায় কম, তাই এ ক্ষেত্রে মৃতের মানসিক ময়নাতদন্ত বা সাইকোলজিক্যাল অটোপ্সি করা যেতে পারে।’’ অর্থাৎ মৃতের মানসিক আচরণ কেমন ছিল বা কোন কোন কারণে তিনি অবসাদে ছিলেন তা মনোবিদ দিয়ে বিশ্লেষণ করা যেতে পারে।
মনোবিদ বহ্নিশিখা ভট্টাচার্যের মতে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তরুণ বয়সেই এই ধরনের বাহিনীতে জওয়ানেরা যোগ দেন। তার ফলে সে সময় তাঁর মানসিক দৃঢ়তা তৈরি হয় না। পরে পরিবার থেকে দূরে থাকা, বহু সময়ে প্রিয়জনকে কাছে না-পাওয়ার মতো মানসিক চাপ তাঁরা সইতে পারেন না। তার উপরে চাকরি সংক্রান্ত কঠিন পরিস্থিতিও তাঁদের মনে প্রভাব ফেলে। বহ্নিশিখার কথায়, ‘‘বাহিনীতে হয়তো মনোবিদ আছেন, কিন্তু জওয়ানদের ক্ষেত্রে নিয়মিত কাউন্সেলিং বা কর্মশালা প্রয়োজন।’’ সুজিতবাবুর মতে, নিয়োগের সময় যথাযথ মানসিক দৃঢ়তার পরীক্ষাও জরুরি।
একটি কেন্দ্রীয় বাহিনীর এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, ‘‘ইদানিং ছুটি বা পোস্টিংয়ের ক্ষেত্রে কিছু পদ্ধতিগত বদল এনেছি। সিআইএসএফ-সহ কেন্দ্রীয় বাহিনীগুলিতে অনলাইনে ছুটির আবেদন করা যাচ্ছে। যুক্তিগ্রাহ্য কারণ ছাড়া ছুটি বাতিল করা হচ্ছে না।’’ বিএসএফ এবং সিআরপিএফের মতো বাহিনী সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে বাড়ি থেকে ৫০০ কিমির মধ্যে পোস্টিং চালু করার চেষ্টা চলছে। তবে এক বছর বা তার পরে সেখান থেকে বদলি করা হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় বাহিনীর একটি সূত্রের দাবি, জওয়ানদের মানসিক ভাবে চাঙ্গা রাখতে প্রতি মাসে সৈনিক সম্মেলন হচ্ছে। সেখানে শীর্ষ কর্তারা অভাব-অভিযোগও শুনছেন। উত্তর-পূর্ব ভারতে পোস্টিং থাকা এক জওয়ান জানান, সিআইএসএফ ইতিমধ্যে অনলাইনে অভিযোগ পোর্টাল চালু করেছে। ওই পোর্টালে অভিযোগ জানালে সংশ্লিষ্ট আইজির কাছে তা চলে যাচ্ছে।