রামুয়া-খুনে ধৃত স্ত্রী ও ছেলে

ঘটনার সাত দিনের মাথায় খুনের কিনারা করে মোট পাঁচ জনকে গ্রেফতার করল খড়দহ থানার পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:৫৫
Share:

কাজল দেওয়ার এবং সমীর দেওয়ার

নিজের কেনা পিস্তলের গুলিতেই মাথা এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে গিয়েছিল হাওড়ার কুখ্যাত দুষ্কৃতী রামুয়ার। সেই খুনের পরিকল্পনা করেছিল তার স্ত্রী ও ছেলেই। রামমূর্তি দেওয়ার ওরফে রামুয়া খুনের তদন্তে ওই দু’জনকে গ্রেফতারের পরে এমনটাই দাবি তদন্তকারীদের। ঘটনার সাত দিনের মাথায় খুনের কিনারা করে মোট পাঁচ জনকে গ্রেফতার করল খড়দহ থানার পুলিশ।

Advertisement

ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার সুনীল চৌধুরী বলেন, ‘‘খুনের অভিযোগে রামুয়ার স্ত্রী, ছেলে ছাড়াও আরও তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পারিবারিক সমস্যার কারণে এই খুনের পরিকল্পনা। পিস্তলটিও উদ্ধার হয়েছে।’’ পুলিশ সূত্রের খবর, খুনের জন্য তিন লক্ষ টাকা সুপারি দিয়েছিল রামুয়ার পরিবার।

গত রবিবার সোদপুরের ফ্ল্যাটে রামুয়া খুন হওয়ার পরে তার স্ত্রী কাজল এবং ছেলে সমীর দাবি করেছিল, রাতে পৌনে ১টায় বেল বাজায় রামুয়ার নির্দেশেই সমীর দরজা খুলে দিয়েছিল। তখনই সমীরকে দু’জন আটকে বাকিরা উপরে গিয়ে গুলি করে খুন করে রামুয়াকে। পুলিশ সূত্রের খবর, বারবার কাজল ও সমীরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বয়ানে অসঙ্গতি মিলেছিল। তার পরেই শেষ ১৫ দিন দু’জনের গতিবিধি এবং তারা কার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিল, তা খতিয়ে দেখেন তদন্তকারীরা। সূত্র মিলতেই দফায় দফায় দু’জনকে জেরা করায় খুনের কথা তারা কবুল করে। তারাই পুলিশকে জানায়, খুনে জড়িত বিশাখাপত্তনমের বাসিন্দা শ্যামসুন্দর রাও, জামশেদপুরের বিশাল মেনন, প্রশান্তকুমার সিংহের নাম। প্রশান্ত দুর্গাপুরের একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।

Advertisement

জেরায় কাজল দাবি করেছে, রামুয়ার মামলার খরচ জোগাতে গিয়ে সঞ্চয় প্রায় শেষ। হাওড়া, খড়দহ-সহ বিশাখাপত্তনমে থাকা সম্পত্তিও বেচতে হয়েছে। এ ছাড়াও বিবাহ বর্হিভূত সম্পর্কের অভিযোগ তুলে স্ত্রীকে মারধর করত রামুয়া। বারবার পুলিশের হাতে রামুয়া ধরা পড়ায় কাজলদের ঘনঘন বাড়ি পরিবর্তন করতে হত। যার জেরে আট বছরের মেয়ের পড়াশোনা হচ্ছিল না। অন্য দিকে, এমবিএ পড়া বন্ধ করে সমীরকে বেআইনি কাজে নামতে চাপ দিচ্ছিল রামুয়া।

তদন্তকারীদের কাছে সমীর দাবি করেছে, পরিবার বাড়ি বদলালেও জেল থেকে ছাড়া পেয়ে সেখানেই হাজির হত রামুয়া। যেমন, ডিসেম্বরে ছাড়া পেয়ে সোদপুরে এসেছিল সে। তার দাবি, রামুয়াকে পুরনো ধান্দায় নামতে নিষেধ করেছিল তারা। কিছু দিন ঠিক থাকলেও, ফের হাওড়ার পুরনো লোকদের সোদপুরে ডেকে প্রোমোটারদের হুমকি দিতে শুরু করে রামুয়া। এমনকি একটি ৭.৬২ এমএম পিস্তলও কেনে। জেরায় সমীর পুলিশকে জানিয়েছে, তখনই বাবাকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে সে। সম্মতি দেয় কাজল। প্রথমে পরিকল্পনা করেছিল রামুয়ার ভোজালি দিয়েই তাকে গলা কেটে খুন করবে। তা না পেরে ছোটবেলার বন্ধু শ্যামের সঙ্গে যোগাযোগ করে।

পুলিশ জানায়, বিশাল ও প্রশান্তকে জোগাড় করে শ্যাম। সমীরের সঙ্গে দেখা করতে কয়েক বার সোদপুরে আসায় রাস্তা চেনা ছিল শ্যামের। পরিকল্পনা মতো রবিবার ট্রেনে হাওড়ায় আসে বিশাল ও প্রশান্ত। রাতে বিমানে কলকাতায় নামে শ্যাম। তিন জনে অ্যাপ-ক্যাব ভাড়া করে সোদপুরের ফ্ল্যাটের সামনে পৌঁছয়। শ্যামেরা মিসড কল দিলে সমীর নীচে নেমে দরজা খুলে দেয়। ফোনে সমীর জানায়, নেশা করে ঘুমিয়ে পড়েছে রামুয়া। এর পরেই ফ্ল্যাটে ঢোকে তিন জন। পিস্তলটি তাদের হাতে তুলে দেয় কাজল। ঘুমন্ত রামুয়াকে গুলি করার পরে খোলটি ফেলে পিস্তল নিয়ে চম্পট দেয় তারা।

এর পরেই দুষ্কৃতী হানার গল্প ফেঁদে আত্মীয়দের খবর দেয় কাজল। আত্মীয়দের পরামর্শে বাথরুমে পড়ে আঘাত পাওয়ার কথা বলে হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসকেরা তা মানতে চাননি। পরে দুষ্কৃতী হামলার গল্পে ফিরে আসে তারা। পুলিশ জানায়, দুর্গাপুর থেকে প্রশান্তকে গ্রেফতার করা হয়। শনিবার জামশেদপুরের বিরসানগর থেকে শ্যাম ও বিশালকে ধরা হয়। তাদের থেকে পিস্তল, ৫ রাউন্ড গুলি ও ৩০ হাজার টাকা মিলেছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement