মঙ্গলবার ঘটনাটি সামনে আসার পর থেকেই বিরোধীরা শাসক দলকে কাঠগড়ায় তুলেছে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রশাসনিক ব্যর্থতার অভিযোগও এনেছে তারা।
বগটুই গ্রামে এ ভাবেই পুড়ে ছাই। —নিজস্ব চিত্র।
সরকারের অগ্রগতি ও উন্নয়নের পথে অস্থিরতা তৈরির রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র— রামপুরহাটের ঘটনা বিশ্লেষণে এই ব্যাখ্যাই সামনে আনল রাজ্যের শাসক শিবির। এই ‘ষড়যন্ত্রে’র জন্য সরকার ও দলের তরফে ‘বিরোধীদের’ দিকেই আঙুল তুলছে তৃণমূল কংগ্রেস ও নবান্ন।
রামপুরহাটে অগ্নিদগ্ধ হয়ে আট জনের মৃত্যু নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই উদ্বেগ তৈরি হয়েছে তৃণমূলে। প্রাথমিক ভাবে প্রশাসনিক পদক্ষেপের পাশাপাশি এই ঘটনায় অপরাধীদের কঠোর শাস্তির কথাও বলা হয়েছে। তবে প্রাথমিক ভাবে ঘটনার পিছনে ‘বড় ষড়যন্ত্র’ দেখছে তারা। নবান্নের একটি সূত্র জানাচ্ছে, অন্য রাজ্যের সীমান্তবর্তী এই জেলায় ডেউচা- পাঁচামি প্রকল্প শুরু করতে চলেছে রাজ্য সরকার। এই অস্থিরতা তৈরির ‘চক্রান্তে’র সঙ্গে সেই প্রকল্প নিয়ে শুরু বিরোধিতার যোগযোগও এখনই উড়িয়ে দিচ্ছে না শীর্ষমহল।
মঙ্গলবার ঘটনাটি সামনে আসার পর থেকেই বিরোধীরা শাসক দলকে কাঠগড়ায় তুলেছে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রশাসনিক ব্যর্থতার অভিযোগও এনেছে তারা। বিধানসভায় বিজেপি বিধায়কদের বিক্ষোভ ও ওয়াকআউটের পরে ঘটনা সম্পর্কে বিবৃতি দেন পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘এই ঘটনায় কয়েকজন প্রাণ হারিয়েছেন। তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।’’
সেই সঙ্গেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘রাজ্যের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে এটা বড় রকমের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র।’’ একই অভিযোগ করে এ দিন রামপুরহাটে গিয়ে মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘রাজ্যের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে যারা এই চক্রান্তে যুক্ত রয়েছে, তাদের কেউই ছাড় পাবে না।’’
রামপুরহাটের ঘটনা নিয়ে এ দিন অধিবেশন শুরুর সময় থেকেই উত্তপ্ত ছিল বিধানসভা। বিষয়টির উল্লেখ করেন বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ। একই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে বিক্ষোভ দেখাতে ওয়েল-এ নেমে পড়েন বিজেপি বিধায়কেরা। কিছুক্ষণ স্লোগান দিয়ে তাঁরা ‘ওয়াকআউট’ করে বেরিয়ে গিয়ে অবস্থান শুরু করেন। তার পরই পরিষদীয়মন্ত্রী বিবৃতিতে দিয়ে রাজ্য সরকারের বক্তব্য ও গৃহীত পদক্ষেপের কথা জানিয়েছেন। বিজেপি বিধায়কদের বিক্ষোভে উপস্থিত হয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ লড়াইয়ে গরিব মানুষের প্রাণ গেছে। এই মৃত্যুর তদন্তভার সিবিআইকে দিতে হবে।’’ পাশাপাশি সামগ্রিক ভাবে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপেরও দাবি তোলেন তাঁরা।
একই ভাবে তৃণমূল ও প্রশাসনকে বিঁধে আক্রমণ শুরু করে সিপিএমও। দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম বলেন, ‘‘এত দিন তৃণমূলের হাতে বিরোধীদের প্রাণ যাচ্ছিল। এখন তৃণমূলের হাতে তৃণমূলও নিরাপদ নয়।’’ এই ঘটনা যাতে আড়াল করা না হয়, সেই দাবি তোলেন তিনি। রামপুরহাটের ঘটনায় রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও।
ঘটনার খবর আসার পর থেকে তৎপরতা শুরু হয় শাসক শিবিরেও। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে স্থানীয় বিধায়ক তথা বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে দ্রুত রামপুরহাটের উদ্দেশে রওনা হয়ে যান মন্ত্রী ফিরহাদ। বিরোধীদের অভিযোগের জবাবে, পাল্টা ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলেন শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীরা। তার ব্যাখ্যা দিয়ে দলের পার্থবাবু বলেন, ‘‘নানা দিক থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নের কাজে বাধা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। এই ঘটনা সেই পরিকল্পনার অংশ কি না, সেটাও তদন্ত করে দেখতে হবে।’’