মমতা যাবেন বগটুই গ্রামে।
রামপুরহাটে যা ঘটেছে তা দুর্ভাগ্যজনক। যারা এর পিছনে রয়েছে তারা কেউ ছাড় পাবে না। বগটুই গ্রামের হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রথমবার মুখ খুলেই জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে আক্রমণ শানালেন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিকে। এই রাজ্যের বিজেপি নেতাদের তো বটেই, মমতার আক্রমণ ছিল বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি নিয়েও।
মমতা যাচ্ছেন বগটুই
রামপুরহাটের বগটুই গ্রামে বৃহস্পতিবারই যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার হওয়া হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বুধবার তখনও ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারেনি বিজেপি-র বিধায়ক দল। দিল্লি থেকে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেয়নি বিজেপি-র প্রতিনিধি দল। তার আগেই মমতা জানিয়ে দিলেন তিনি যাচ্ছেন। সঙ্গে এটাও জানালেন যে, বিজেপি বিধায়ক দলের কর্মসূচি না থাকলে যেতেন বুধবারেই। মঙ্গলবরাই তদন্তকারী দল গঠন করে রাজ্য প্রশাসন যে তৎপরতা দেখিয়েছিল তার ধারাবাহিকতাই যেন বজায় থাকল মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায়। বিরোধী দলনেত্রী থাকাকালীন যে ভাবে দ্রুত অকুস্থলে পৌঁছে যেতেন সে ভাবেই বৃহস্পতিবার যাচ্ছেন আগুনে পুড়ে আট জনের মৃত্যু হওয়া বগটুই গ্রামে। বুধবার তিনি বলেন, আজই যেতাম। কিন্তু বিরোধীরা গিয়েছেন। আগামিকাল আমি যাচ্ছি।’’
ষড়যন্ত্র দেখছেন মমতা
বগটুইয়ের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই তৃণমূল এর পিছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে দাবি করে। এ দিন মমতা যেন সেই দাবিতে সিলমোহর দিলেন। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তৃণমূলের যে যোগ নেই সেই দাবি করে তিনি বলেন, ‘‘আমরা সরকারে। আমরা কি চাই কোথাও কেউ বোমা মারুক! বদনামের চেষ্টা করা হচ্ছে। যারা ঘটনা ঘটিয়েছে তারা কেউ ছাড় পাবে না।’’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমরা সিপিএম, কংগ্রেসের মতো চক্রান্তকারী দল নই।’’ এর পাশাপাশি মমতা নাম না করেও বিজেপি-কে আক্রমণ করে বলেন, ‘‘আসলে দাঙ্গা করতে পারছে না। লোকে খেতে পারছে না, তাও তো বলতে পারছে না। মেয়েরা পড়াশুনা করতে পারছে না, এ কথাও বলতে পারছে না। মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছে না, এ কথা বলতে পারছে না। তাই দেশলাই জ্বালানো খুব সহজ তাই না। দেশলাই জ্বালাতে চক্রান্তকারীদের জুড়ি নেই। কিন্তু তারা এটা বোঝে না যে, অন্যের ঘরে দেশলাই জ্বাললে নিজের ঘরে এসেও পড়তে পারে। অনেক নষ্টামি, অনেক দুষ্টুমি দেখেছি।’’ এর সঙ্গে সঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘কালকেও দেখেছেন গ্যাসের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে, পেট্রোলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। আর এটা নিয়ে যাতে কেউ বলতে না পারে, তাই হট করে একটা এমন ঘটনা ঘটিয়ে দিচ্ছে।’’
সরকার ও প্রশাসন তৎপর
বগটুই-কাণ্ড নিয়ে ইতিমধ্যেই আদালতে মামলা হয়েছে। সিবিআই তদন্তের দাবি তুলেছেন ওই গ্রামের বাসিন্দা থেকে বিরোধী দলের নেতারা। এর প্রেক্ষিতে মমতা বুধবার জানালেন ঘটনার কথা কানে আসার পর থেকে তাঁর সরকার কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘ঘটনার পর আমি ৫০ বার ফোন করেছি। ওসি ও এসডিপিও-কে সরিয়ে দিয়েছি। সিট গঠন করেছি। ফিরহাদ হাকিমকে পাঠিয়েছিলাম। আমিও আজই যেতাম। কিন্তু বিরোধীরা গিয়েছেন বলে আগামিকাল আমি যাচ্ছি।’’
বিজেপি-কে আক্রমণ
বগটুইয়ের ঘটনা নিয়ে বিজেপি শাসিত রাজ্যের দিকেও আঙুল তুলেছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘অন্য রাজ্যে কোনও ঘটনা ঘটলে বিরোধীদের যেতেই দেওয়া হয় না। আমরা সবাইকে যেতে দিচ্ছি।’’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি শাসিত রাজ্যে এর চেয়ে অনেক হিংসার ঘটনা ঘটে। তার মানে এটা নয় যে ওই উদাহরণ দিয়ে রামপুরহাটের ঘটনাকে সমর্থন করছি।’’
রাজ্যপালকে নিশানা
বগটুইয়ের ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজভবন বনাম নবান্ন লড়াই শুরু হয়েছে। মঙ্গলবারই রাজ্যপালের মন্তব্যে অখুশি মুখ্যমন্ত্রী চিঠি পাঠিয়েছিলেন জগদীপ ধনখড়কে। বুধবার পাল্টা চিঠি দিয়েছেন ধনখড়। তা নিয়ে মমতা ‘লাট সাহেব’ বলে কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘সর্বদা রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাল নয় বলে অভিযোগ করেন। কিন্তু নিজে দিব্যি নিরাপদে ঘুরে বেড়ান।’’