বগটুইয়ে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক। নিজস্ব চিত্র।
আনিস-কাণ্ডেও সিট প্রধান হিসেবে রয়েছেন আইপিএস জ্ঞানবন্ত সিংহ। তাঁকেই দেওয়া হয়েছে রামপুরহাট-কাণ্ডের তন্তের ভার। আনিস-কাণ্ডের তদন্তের গতিপ্রকৃতি কী? আলালতে প্রশ্ন আইনজীবী প্রিয়ঙ্কা টিবরেওয়ালের। বলেন, ‘‘জ্ঞানবন্ত সিংহ-কে সিটে রাখা হয়েছে। ওই অফিসারই ক’দিন আগে আনিস খানের মৃত্যু ঘটনায় সিটের মাথায় আছেন। সেখানে কিছু এখনও উঠে আসেনি। আবার সেই এক ব্যক্তিকে কেন সিটে রাখা হল?’’
রামপুরহাট-কাণ্ডে জ্ঞানবন্ত সিংহের নেতৃত্বে সিট গঠন করেছে সরকার। কিন্তু সিটের দুই সদস্যকে নিয়ে হাই কোর্টে আপত্তি জানালেন এক মামলাকারী। তাঁর দাবি, রিজওয়ানুর রহমান মৃত্যুর ঘটনায় জ্ঞানবন্তের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। তাছাড়া সিটের আর এক সদস্য সঞ্জয় সিংহকে তাঁর পদ থেকে নির্বাচন কমিশন সরিয়ে দিয়েছিল।
রামপুরহাট-কাণ্ড নিয়ে হাই কোর্টে দায়ের হয়েছে একাধিক মামলা। প্রধান বিচারপতির এজলাসে শুরু হল এই মামলাগুলির শুনানি। বগটুইয়ের ঘটনা নিয়ে মোট পাঁচটি মামলা দায়ের হয়েছে। মামলা করেছে কংগ্রেসও। এক মামলাকারীর দাবি,
ঘটনায় দু'জন প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন। তাঁদের এক জন জনৈক মীনা দেবী হাসপাতালে মারা গিয়েছেন। ১৪ বছরের কেয়াম শেখ অন্য প্রত্যক্ষদর্শী। তাঁকে অবিলম্বে নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক।
বগটুইয়ে পুলিশের বাধায় পড়ে ক্ষুব্ধ সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। বললেন, ‘‘কোনও বাধা মানি না। নানুরে আমার বন্ধুর ছেলে এখানকার জামাই হয়ে এসেছে। দু’মাস আগে বিয়ে হয়েছে। বার বার জানিয়েছে ও। কিন্তু পুলিশ ভাদু শেখের টাকায় গাড়ি চড়ে। সে পুলিশ পাঠায়নি। এ ভাবে পুলিশ খুন হয়। পুলিশ শাসকদলের কথায় চলে, তাদের টাকায় গাড়ি চড়ে, পুলিশও যে কোনও দিন খুন হতে পারে। আমাকে এখানে আটকানো হচ্ছে, কিন্তু এই ঘটনায় আমার জামাই মারা গিয়েছে, সেই ঘরটা দেখতে চাই।’’
এসইউসিআই-র বিক্ষোভে বিধানসভার সামনে তুলকালাম কাণ্ড। বিধানসভার ৬ নম্বর গেটের সামনে পুলিশ ও এসইউসিআই কর্মী সমর্খকদের ধ্বস্তাধস্তি শুরু হয়। ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র উত্তেজনা।
রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কে আবার কটাক্ষ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘লাট সাহেব’ বলে কটাক্ষ করে তাঁর মন্তব্য, সর্বদা রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা নেই বলে অভিযোগ করেন। কিন্তু নিজে দিব্যি ‘ঘুরে বেড়ান’। বুধবার চিঠিতে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা থেকে রামপুরহাট-কাণ্ডে সিটের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যপাল। অন্য দিকে, একটি সরকারি সভা থেকে পুলিশের ভূয়সী প্রশংসা করলেন মমতা। তিনি জানান বিজেপি শাসিত রাজ্যে এর চেয়ে অনেক হিংসার ঘটনা ঘটে। তার মানে এটাও নয় যে তাঁরা ওই উদাহরণ দিয়ে রামপুরহাটের ঘটনাকে সমর্থন করছেন। রামপুরহাটের বগটুইয়ের ঘটনায় দোষীরা শাস্তি পাবেন। নিরপেক্ষ ভাবেই তদন্ত হবে বলে দাবি করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা আইনমন্ত্রী।
বগটুইয়ে বৃহস্পতিবার যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা সরকারে। আমরা কি চাই কোথাও কেউ বোমা মারুক! বদনামের চেষ্টা করা হচ্ছে। যারা ঘটনা ঘটিয়েছে তারা কেউ ছাড়া পাবে না। ঘটনার পর আমি ৫০ বার ফোন করেছি। ওসি ও এসডিপিও-কে সরিয়ে দিয়েছি। সিট গঠন করেছি। ফিরহাদ হাকিমকে পাঠিয়েছিলাম। আজই যেতাম। কিন্তু বিরোধীরা গেছেন। আগামিকাল আমি যাচ্ছি।’’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘‘আমি সিপিএম, কংগ্রেসের মতো চক্রান্তকারী দল নই।’’
রামপুরহাটের বগটুইয়ের ঘটনা নিয়ে এ বার জনস্বার্থ মামলা দায়ের করল কংগ্রেস। সব মিলিয়ে মোট ৫টি মামলা দায়ের হল কলকাতা হাই কোর্টে। রামপুরহাটের ঘটনাকে ‘শকিং’ বলে মন্তব্য করেছেন কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব। দুপুরেই এই সংক্রান্ত মামলা শুনবে আদালত।
গণহত্যায় যুক্তদের বিচার হওয়া উচিত জনগণের দরবারে। বগটুই-কাণ্ড নিয়ে এমনটাই মনে করেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। বুধবার বাম প্রতিনিধিদলকে নিয়ে বীরভূমের রামপুরহাটের ওই গ্রামে ঢোকার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু তাঁকে বাধা দেওয়া হয়। তবে তাঁর আগে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম অবশ্য বগটুই গ্রামে পৌঁছতে পারেন।
রামপুরহাটের বগটুইয়ে আট জন গ্রামবাসীর ঝলসে মৃত্যুর ঘটনাকে ‘খুবই বেদনাদায়ক’ বলে মন্তব্য করলেন কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব। তিনি বলেন, “এটি একটি সিরিয়াস ক্রাইম। শিশু-সহ আট জনের মৃত্যু হয়েছে। কয়েকটি বাড়িতে আগুন লাগে।”