নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে কংগ্রেসের সম্মেলন। — নিজস্ব চিত্র।
তাগিদ সংখ্যালঘু ভোটের! সেই টানেই বিধানসভা নির্বাচনের কয়েক মাস আগে বিরল দৃশ্য প্রদেশ কংগ্রেসে! বন্ধের দিনেও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির ডাকে যাঁরা সে ভাবে গা লাগাননি, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁরাই পাশাপাশি বসে এক মঞ্চে! উপলক্ষ প্রদেশ কংগ্রেসের সংখ্যালঘু সম্মেলন।
নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে বুধবারের সম্মেলনের উদ্যোক্তা ছিলেন প্রদেশ সংখ্যালঘু শাখার চেয়ারম্যান খালেদ এবাদুল্লা। শিষ্যের বকলমে গোটা আসরের আয়োজক ছিলেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়া। সবংয়ের বিধায়কের সঙ্গে যতই টানাপড়েন থাকুক, সংখ্যালঘুদের প্রশ্ন বলেই সেই মঞ্চে এসেছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী।
সংখ্যালঘু-সুতোর টানেই নেতাজি ইন্ডোরের মঞ্চে ছিলেন কংগ্রেসের সব শিবিরের নেতারা। প্রদেশ কংগ্রেসের পরিচিত মুখের মধ্যে ব্যতিক্রম ছিলেন শুধু প্রদীপ ভট্টাচার্য ও দীপা দাশমুন্সি। রাষ্ট্রপতির স্ত্রীর অন্ত্যেষ্টি উপলক্ষে তাঁদের দু’জনকেই এ দিন থেকে যেতে হয়েছিল দিল্লিতে। এক দিকে সংখ্যালঘু-অস্ত্র ব্যবহার করে অধীর, সোমেন মিত্র, আব্দুল মান্নান, আবু হাসেম (ডালু) খান চৌধুরী, মৌসম বেনজির নূরদের সমাবেশ ঘটিয়ে এবং একই সঙ্গে এআইসিসি-র তরফে মণিশঙ্কর আইয়ার, রাজ বব্বর, শাকিল আহমেদ, সর্বভারতীয় সংখ্যালঘু শাখার চেয়ারম্যান খুরশিদ আহমেদ সৈয়দ, রাজ্যে কংগ্রেসের অন্যতম পর্যবেক্ষক শাকিল আহমেদ খানকে হাজির করিয়ে মানসবাবু এ দিন তাঁর দলের হাইকম্যান্ডকে বার্তা দিতে পেরেছেন, এই দুর্দিনের বাজারেও রাজ্যে কংগ্রেসকে একজোট করার কৌশল তাঁর আয়ত্তে!
নানা সংখ্যালঘু সংগঠন ইতিমধ্যেই মমতা সরকারের বিরুদ্ধে সরব। আবার উত্তর দিনাজপুর, মালদহ, মুর্শিদাবাদের মতো সংখ্যালঘু-অধ্যুষিত জেলায় কংগ্রেস এখনও শক্তিশালী। তাই রাজ্যে বিধানসভা ভোটের কিছু মাস আগে সংখ্যালঘু সম্মেলনের এই পরিকল্পনা। সব বক্তারই অভিযোগ, নানা প্রতিশ্রুতি পেয়েও সংখ্যালঘুরা প্রতারিত। সম্মেলনে ভিড় হয়েছিল ভালই। তবে রেল অবরোধের জন্য উত্তর ২৪ পরগনার একটি বড় অংশ থেকে সমর্থকেরা আসতে পারেননি। আর উল্লেখযোগ্য অনুপস্থিতি ছিল এআইসিসি-র তরফে এ রাজ্যে দলের পর্যবেক্ষক সি পি জোশীর। মানসবাবুর কথায়, ‘‘আমরা বেদনাহত যে, এই রকম একটা সম্মেলনে আমাদের পর্যবেক্ষক আসতে পারলেন না!’’
বর্ষীয়ান দুই সংখ্যালঘু বিধায়ক জ্ঞানসিংহ সোহনপাল ও কাজী আব্দুল গফ্ফরকে তাঁদের কাজের জন্য সংবর্ধনা দিয়ে শুরু হয়েছিল এ দিনের সম্মেলন। কংগ্রেসের সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের মুখ্যমন্ত্রিত্বে সংখ্যালঘুরা এ রাজ্যে কত চাকরি পেয়েছিলেন, মন্ত্রিসভায় কত সংখ্যালঘু মুখ ছিল, তার উল্লেখ করে সোমেনবাবু, অধীর বা মণিশঙ্কর এক সুরেই দাবি করেছেন, একমাত্র কংগ্রেসই সংখ্যালঘুদের প্রকৃত বন্ধু। মাদ্রাসার অনুমোদন দেওয়া বা ওবিসি সংরক্ষণে তৃণমূল কী ভাবে ব়ঞ্চনা করেছে, তার উল্লেখ করে সরাসরিই সংখ্যালঘুদের কাছ থেকে ভোট-ভিক্ষা করেছেন মণিশঙ্কর। তাঁর সাফ কথা, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আপনাদের ধোঁকা দিয়েছেন! এমন এক জনকে দ্বিতীয় বার কেন ভোট দেবেন? নিজেদের সুরক্ষার স্বার্থেই কংগ্রেসকে ভোট দিন।’’
খালেদকে পাশে নিয়ে অধীরকে এ দিন হাত ধরে মঞ্চে নিয়ে আসতে দেখা গিয়েছে মানসবাবুকে। অধীর সম্পর্কে ‘স্পর্শকাতরতা’ সরিয়ে এক বছর পরে প্রদেশ কংগ্রেসের সভায় ছিলেন মান্নানও। তবে এই ঐক্যের বাতাবরণের ফাঁক দিয়েও দলের অন্দরের দ্বিমত সামান্য হলেও উঁকি দিয়েছে এ দিন! আত্মসমালোচনার সুরে প্রদেশ সভাপতির নাম না করেই মান্নান বলেছিলেন, ‘‘কেন সংখ্যালঘু-অধ্যুষিত জেলাগুলিতে সংখ্যালঘুদের বিরাট একটা অংশ অন্য দলে চলে যাচ্ছে, সেটাও কংগ্রেসকে ভাবতে হবে।’’ দলত্যাগীদের কংগ্রেসে ফিরে আসার ডাক দিয়েছিলেন ডালুবাবুও। কিন্তু অধীর তাঁর নিজের লাইনই বজায় রেখে বলে দিয়েছেন, ‘‘চলার পথে কেউ ছিল, কেউ কেউ চলে গিয়েছে। তার পরোয়া করি না!’’