রাজা দত্তকে গ্রেফতার করে পরোক্ষে অর্জুন সিংহের উপরেই চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ বিজেপি নেতৃত্বের। ছবি: সংগৃহীত।
গ্রেফার হলেন বিজেপি নেতা তথা হালিশহরের প্রাক্তন তৃণমূল উপ পুরপ্রধান রাজা দত্ত।
পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, গত রবিবার হালিশহরে তৃণমূল-বিজেপির সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁকে। মারধর, অস্ত্র আইনে মামলা রুজু হয়েছে। তবে রাজার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ আগেও আছে পুলিশের খাতায়। পুরনো মামলাগুলিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, শনিবার দুপুরে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে থেকে ধরা পড়েন রাজা। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি (সাউথ) অজয় ঠাকুর জানান, ওঁর বিরুদ্ধে একটি রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে আগুন ধরানো, পুলিশের উপরে হামলা এবং বেআইনি অস্ত্র রাখার অভিযোগ রয়েছে।
অধুনা বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহ ঘনিষ্ঠ রাজা এক সময়ে ছিলেন তৃণমূল শিবিরে। তোলাবাজি, মারধর-সহ একাধিক অভিযোগে নাম জড়ায় তাঁর। তবে শাসক দলের তৎকালীন এক রাজ্য নেতার ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত রাজাকে ছুঁতে পারেনি পুলিশ। এক সময়ে ওই নেতা দল ছাড়েন। রাজাকেও জনরোষে এলাকা ছাড়তে হয়। লোকসভা ভোটের আগে অর্জুনের হাত ধরে রাজা যোগ দেন বিজেপিতে।
রাজাকে গ্রেফতার করে পরোক্ষে অর্জুনের উপরেই চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ বিজেপি নেতৃত্বের। অর্জুন বলেন, “পুলিশ এবং তৃণমূল যৌথ ভাবে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়ছে। রাজনৈতিক ভাবে আমাদের সঙ্গে লড়তে না পেরে দলের নেতাদের জেলে ভরে ময়দান ফাঁকা করতে চাইছে।’’
এক সময়ে হালিশহরের মানুষ রাজা আর তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গদের দাপটে ভয়ে কাঁটা হয়ে থাকতেন। তখন রাজা তৃণমূলের উপ পুরপ্রধান। শহর যুব তৃণমূলের সভাপতিও। কখনও মারধর, কখনও তোলাবাজি, কখনও জমি দখল, পুকুর ভরাট করে নির্মাণের অভিযোগে নাম জড়ায় তাঁর। কিন্তু সে সব অভিযোগ থানায় গিয়ে করার সাহস ছিল না মানুষের। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগের দিন রাজার দলবল বাম সমর্থক এক পরিবারের বাড়ি গিয়ে হুমকি দেয় বলে অভিযোগ। মারধর করা হয়। রেহাই পায়নি দু’বছরের শিশুও। সেই ঘটনায় রাজ্য জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। রাজার নামে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ হয়। একে একে বহু মানুষ মুখ খুলতে শুরু করেন।
শাসক দল রাজাকে নিয়ে অস্বস্তিতে পড়ে। ইতিমধ্যে সরকারি চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা তোলার অভিযোগেও নাম জড়ায় তাঁর। জনরোষ বাড়তে থাকে। টাকা চেয়ে বাড়িতে হামলা হয়। এলাকা ছাড়েন রাজা।
গত লোকসভা ভোটের আগে এলাকায় ফিরে তৃণমূলের হয়ে কিছু দিন প্রচারে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। আচমকাই অর্জুনের হাত ধরে যোগ দেন বিজেপিতে। নৈহাটির তৃণমূল বিধায়ক পার্থ ভৌমিকের কথায়, ‘‘আইন আইনের পথে চলবে। তোলাবাজ, দুর্নীতিগ্রস্তদের নিয়ে বিজেপি নিজেদের ঘর সাজাতে চাইছে।’’