রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চেয়েছিল সঙ্ঘ অনুমোদিত অধ্যাপক সংগঠন। — ফাইল চিত্র।
রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে নিজেদের মতামত জানাতে চেয়েছিল অধ্যাপক সংগঠনটি। কিন্তু রাজভবন থেকে পাল্টা চিঠি দিয়ে তাদের সংগঠনের ‘কাঠামো’ জানতে চাওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) অধ্যাপক সংগঠন অখিল ভারতীয় রাষ্ট্রীয় শৈক্ষিক মহাসংঘ (এবিআরএসএম) অনুমোদিত সংগঠন হল ‘জাতীয়তাবাদী অধ্যাপক ও গবেষক সঙ্ঘ’। সংগঠনটি গত ২২ বছরেরও বেশি সময় ধরে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে কাজ করে আসছে বলে সদস্যদের দাবি। ওই সদস্যেরা উদ্যোগী হয়ে গত ২৩ এপ্রিল রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় চেয়ে লিখিত আবেদন করেন রাজভবনে। চিঠি পাঠান অধ্যাপক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অনুপম বেরা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে যে তাঁরা রাজ্যপালের সঙ্গে কথা বলতে চান, তা-ও উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছিল চিঠিতে। কিন্তু গত ৩ মে রাজভবনে থেকে পাল্টা চিঠি পাঠানো হয়েছে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকের কাছে। ওই চিঠিতে তাঁদের সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কাঠামো প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হয়েছে। রাজভবনের তরফে চিঠিটি পাঠিয়েছেন রাজ্যপালের সচিবালয়ের আধিকারিক সুমন পাল।
পাল্টা চিঠি পেয়ে খানিকটা বিস্মিত সঙ্ঘ ‘অনুমোদিত’ অধ্যাপক সংগঠনটি। কারণ, তাদের মামলার ভিত্তিতেই গত মার্চ মাসের ১৪ তারিখে রায়দান করেছিল কলকাতা হাইকোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব ও বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ। সেই রায়ে বলা হয়েছিল, যে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নিয়োগ ও পুর্ননিয়োগ এবং সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছিল, তা বেআইনি। পাশাপাশি, রাজ্য সরকারের নিয়োগ সংক্রান্ত সেই সিদ্ধান্ত বাতিল বলেও ঘোষণা করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। আদালতের ওই নির্দেশের পরেই বিষয়টি নিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে কথা বলার বিষয়ে মনস্থির করেছিল অধ্যাপক সংগঠনটি। সেই মর্মে চিঠি পাঠানো হয় রাজভবনে। কিন্তু পাল্টা চিঠিতে রাজভবনের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, আগে সংগঠনের কাঠামো জানাতে হবে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অনুপম সোমবার আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘আমাদের করা মামলার ভিত্তিতে আদালত যে রায় দিয়েছিল, সেই প্রসঙ্গেই কথা বলতে আমরা রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সময় তো দেওয়া হয়ইনি। পাল্টা চিঠিতে আমাদের সংগঠনের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। অথচ রাজ্যের উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে আমরা দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে কাজ করছি।’’ আবার রাজভবনকে চিঠি দিয়ে সংগঠন প্রসঙ্গে জানানো হবে কি না, সে বিষয়ে অবশ্য সংগঠনের তরফে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে রাজভবনের তরফে সোমবার জানানো হয়েছে, কোনও ব্যক্তি বা কোনও সংগঠন রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাইলে নির্দিষ্ট ভাবে আবেদন করতে হয়। যা সরাসরি রাজ্যপালের দফতরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তিনি আদৌ সাক্ষাৎ করবেন কি না, তা নির্ভর করে রাজ্যপালের ওপর। তবে পাল্টা চিঠি পাঠানোর ঘটনা এই প্রথম নয়। মার্চ মাসে প্রবীণ কংগ্রেস নেতা তথা রাজ্য বিধানসভার প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান লিখিত আবেদনের ভিত্তিতে রাজ্যপালের কাছে সাক্ষাতের সময় চেয়েছিলেন। কিন্তু পাল্টা চিঠিতে রাজভবন থেকে মান্নানের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, কোন বিষয়ে তিনি কথা বলতে চান, তা নির্দিষ্ট করে জানালে তবেই রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাৎ সম্ভব হবে। সেই চিঠি পেয়ে তীব্র উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা। ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি জানিয়েছিলেন, দীর্ঘ ৫৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনে পশ্চিমবঙ্গে একাধিক রাজ্যপালের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়েছে তাঁর। কিন্তু কোনও ক্ষেত্রেই এমন অভিজ্ঞতা হয়নি। রাজভবনের পাল্টা চিঠির অভিজ্ঞতা থেকে তিনি আর রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাতের আবেদন জানাননি।